রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং বিধাননগরের তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক সুজিত বসুর বিরোধের জেরে সল্টলেকে পার্কোম্যাট তৈরির কাজ এখন বিশ বাঁও জলে। মহাকরণ সূত্রের খবর, পুরমন্ত্রী সল্টলেকে প্রশাসনিক ভবনের বিপরীতে পার্কোম্যাট তৈরি করে গাড়ি রাখার ব্যবস্থা করতে চাইছেন। কিন্তু, সেই জায়গা দখল করে থাকা দোকানদারদের উচ্ছেদ করতে নারাজ সুজিতবাবু। কারণ, রাজ্য সরকারের নীতি অনুযায়ী পুনর্বাসন ছাড়া দখলদার উচ্ছেদ করা যাবে না।
পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর, সল্টলেকে প্রশাসনিক ভবনের বিপরীতে ও সিটি সেন্টার লাগোয়া ফাঁকা জায়গায় একটি পার্কোম্যাট তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেএমডিএ। সেখানে ৫০০টি গাড়ি রাখা যাবে। প্রশাসনিক ভবনের বিপরীতে কেএমডিএ-র এক একর জমি রয়েছে। ২০০৮ সালে বামফ্রন্ট সরকারের আমলে কেএমডিএ ওই জমিতেই পার্কোম্যাট তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। দরপত্র ডেকে একটি বেসরকারি সংস্থাকে জমি দেওয়া হয়। ওই সংস্থা কলকাতায় প্রথম পার্কোম্যাট তৈরি করেছে। জমি বাবদ কেএমডিএ ওই বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে ২৫ কোটি টাকাও নিয়েছে। আরও কিছু টাকা ব্যয় করে ওই সংস্থাটি বিধাননগর পুরসভার কাছ থেকে পার্কোম্যাটের নকশা অনুমোদন করিয়েছে। কিন্তু তারা সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি। তখনও তৃণমূল নেতা সুজিত বসু ওই জমিতে পার্কোম্যাট তৈরির কাজে বাধা দিয়েছিলেন।
শেষ পর্যন্ত ওই জায়গায় পার্কোম্যাট তৈরির পরিকল্পনা বাতিল করতে বাধ্য হয় কেএমডিএ। তার ফল স্বরূপ কেএমডিএ কিস্তিতে ওই বেসরকারি সংস্থাকে টাকা মেটাচ্ছে। এখনও বেশ কিছু টাকা বাকি। কেএমডিএ-র এক কর্তা জানিয়েছেন, সংস্থার টাকা নেই। তাই এক লপ্তে পুরো টাকা ফিরিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তিনি জানান, বেসরকারি সংস্থাটি তাদের দেওয়া টাকার উপরে সুদ চেয়েছে। কিন্তু সেই সুদ তাদের দেওয়া হবে না বলেই ঠিক হয়েছে।
পুরমন্ত্রী বলেন, “শুধু প্রশাসনিক ভবনের সামনে নয়, সল্টলেক, কলকাতা, রাজারহাট এবং কেএমডিএ এলাকার বিভিন্ন জায়গায় বেশ কিছু পার্কোম্যাট করা হবে। কারণ, এ সব জায়গায় প্রতিদিনই গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু গাড়ি রাখার জায়গা নেই। রাতেও গাড়ির রাখতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন অনেকে। সেই সমস্যার সমাধান করতে এবং রাস্তায় গাড়ির অবাধ যাতায়াত নিশ্চিত করতেই এই ব্যবস্থার প্রয়োজন।” কেএমডিএ-র এক কর্তা জানান, শুধু গাড়ির মালিকেরাই যে সমস্যায় পড়ছেন, তা নয়। দেখা যাচ্ছে, সল্টলেকের যে এলাকায় বেশি প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান বা সরকারি অফিস রয়েছে, সেখানে রাস্তার উপরে বা স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়ির সামনের রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখছেন কাজে আসা লোকজন। ফলে অসুবিধায় পড়ছেন সাধারণ মানুষ।
তবে কেএমডিএ সূত্রের খবর, সল্টলেকের প্রশাসনিক ভবনের সামনের জমিতে বেশ কয়েকটি চা-পান-বিড়ির দোকান রয়েছে। ওই দোকানদারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে পার্কোম্যাট তৈরি করতে দিতে চাইছেন না সুজিতবাবু। তিনি জানিয়েছেন, আগের মতোই এখনও তিনি ওই জমিতে পার্কোম্যাট তৈরির পক্ষে নন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “ওই জমিতে যে পার্ক রয়েছে, সেটিকে বাঁচাতে হবে। সুন্দর করে সাজাতে হবে। প্রয়োজনে এ বিষয়ে আমি পুরমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলব।” |