সায়েন্স সিটির সামনে ই এম বাইপাসে তৈরি হবে দু’টি সাবওয়ে। আগামী বইমেলার আগেই ওই প্রকল্প শেষ করতে চায় কেএমডিএ। কাজ শুরুর আগে প্রস্তাবিত অংশে ভূগর্ভ থেকে বিদ্যুতের কেব্ল ও অন্যান্য সংযোগ প্রতিস্থাপনের কাজ শীঘ্রই শুরু করবে সিইএসসি। শুধু পথচারীদের জন্য এত দীর্ঘ সাবওয়ে পূর্ব-ভারতে এই প্রথম।
প্রকল্পটি হবে রাস্তা থেকে প্রায় ১০ ফুট নীচে। একটি শাখা যাবে ই এম বাইপাসের নীচ দিয়ে সায়েন্স সিটি থেকে পরমা ফাঁড়ি সংলগ্ন এনার্জি পার্ক পর্যন্ত। এটি হবে ৬২ মিটার দীর্ঘ। অপরটি হবে সায়েন্স সিটি থেকে মিলন মেলা পর্যন্ত। পার্ক সার্কাস কানেক্টরের নীচে এই শাখার দৈর্ঘ্য হবে ৫৫ মিটার। উড়ালপুলের জন্য ‘জেএনএনইউআরএম’ প্রকল্পে বরাদ্দ ৩২০ কোটি টাকা সাবওয়ে তৈরির কাজে লাগানো হবে।
সায়েন্স সিটির সামনে শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ওই সংযোগস্থলে গাড়ির গতি বজায় রাখা এবং যানজট নিয়ন্ত্রণের কথা মাথায় রেখে উড়ালপুল তৈরি হচ্ছে। এই কাজের জন্য মিলন মেলায় যাতায়াতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। ‘পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ড’-এর কর্তা ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বইমেলায় দর্শক বাড়ছে। গত বছর মেলার ১২ দিনে এই সংখ্যা ছিল ১২ লক্ষের মতো। আমরা রাজ্য সরকারকে সেখানে সাবওয়ে করার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। সেটি রূপায়িত হচ্ছে জেনে ভাল লাগছে।” মিলন মেলায় আগামী বইমেলার উদ্বোধন হবে ২৯ জানুয়ারি। |
কেএমডিএ-র এক পদস্থ অফিসার জানান, চূড়ান্ত কাজ শুরুর আগে শীঘ্রই ওই জায়গায় সংশ্লিষ্ট নানা বিভাগের অফিসারদের নিয়ে সমীক্ষা হবে। সিইএসসি-র ভাইস প্রেসিডেন্ট অনিরুদ্ধ বসু বলেন, “বাইপাসের পাশ দিয়ে চার ফুট নীচে এক্সট্রা হাই ভোল্টেজ সংযোগ আছে। ১ লক্ষ ৩২ হাজার ভোল্টের ওই সংযোগ সরানোর কাজটি বেশ জটিল। ওই অঞ্চলে যেহেতু একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ চলছে, ভবিষ্যতের কথা ভেবে কেব্লের পরিবর্ত সংযোগের জন্য বাড়তি সমীক্ষা দরকার।” প্রস্তাবিত সাবওয়ের উচ্চতা এবং প্রস্থ হবে যথাক্রমে ২.৫ মিটার এবং ৬ মিটার। পুলিশের হিসেবে সায়েন্স সিটির সামনে বাইপাস এবং পার্ক সার্কাস কানেক্টরের দু’টি মোড়ে ব্যস্ত সময়ে কাজের দিনে ঘণ্টায় প্রায় চার হাজার গাড়ি যাতায়াত করে। কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক-১) দিলীপকুমার আদক বলেন, “যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্য এবং দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা নেবে এই সাবওয়ে।” সাবওয়ের রূপরেখা তৈরিতে সক্রিয় ছিলেন প্রাক্তন ডিসি (ট্রাফিক-১) দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “এই পরিকল্পনা হয় বছর দুই আগে। কেএমডিএ-র অফিসার-ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে একাধিক সমীক্ষায় গিয়েছি। নানা কারণে কাজ আগে শুরু হয়নি। আশার কথা, দেরি হলেও শুরু হয়েছে।”
যাদবপুরে রাজা সুবোধ মল্লিক রোড আংশিক ভাবে আটকে সাবওয়ে তৈরি হয়েছিল। সেই নির্মাণকাজের জন্য দক্ষিণ শহরতলির যাত্রীদের ভুগতে হয়েছিল অন্তত তিন বছর। টালিগঞ্জে মেট্রো স্টেশনের সামনে যাত্রী-পারাপারের জন্য যে সাবওয়ে তৈরি হয়, তাতেও নির্মাণকাজ চলাকালীন ব্যাপক যানজট হয়। কিন্তু দু’টি ক্ষেত্রেই খুব কম যাত্রী সাবওয়ে ব্যবহার করেন। বাইপাসের জোড়া সাবওয়ের ক্ষেত্রেও কি তেমনই হবে? কেএমডিএ-র চিফ এগ্জিকিউটিভ অফিসার বিবেক ভরদ্বাজ বলেন, “সাবওয়ে চালুর পরে মূল রাস্তা দিয়ে পথচারীরা যাতে সহজে পার না হন, তা মাথায় রেখেই পরিকল্পনা তৈরি হবে।” |