লাদাখ ফেস্টিভাল
চারধার ঘিরে থাকে রুখাশুখা পাহাড়েরা। দমকায় দমকায় বইছে ঠকঠকানি বরফিলা বাতাস। পাথুরে রাস্তার ধারে ধারে যে গ্রামগুলো রয়েছে, তাদের বসবাসে, মানুষমুখেও স্পষ্ট লড়াইয়ের আঁচ। যাদের প্রতি দিনে এত বন্যা, ভূমিকম্প, দুর্যোগ বয়, কোনও ক্রমে টিকে থাকার জন্য রাতদিন যাদের যুদ্ধ যুদ্ধ আর যুদ্ধ, তারা হইচই আনন্দের জানেটা কী?
আরে, ওদের জিইয়ে থাকার তাকত সমতলের মানুষের থেকে অনেক বেশি। তাই বোধ হয় সেই জীবনে আমাদের শান্তশিষ্ট দিনগুলোর থেকে অনেক বেশি রং। ওদের সেই দেশে মাসের পর মাস এটা সেটা পরব লেগে আছে। তাতে বিচিত্র কিসিমের নাচ-গান-মজা। সেই সব দেখেই খোদ সরকার বাহাদুরও এগিয়ে এসেছেন। তাই প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের পয়লা তারিখ থেকেই শুরু করেছেন, পনেরো দিনের লাদাখ ফেস্টিভ্যাল। বিশাল আয়োজন, চোখ ধাঁধানো জাঁকজমক।
উদ্যোগে জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর ট্যুরিস্ট ডিপার্টমেন্ট থাকলে কী হবে, স্টেজের কলাকুশলীরা সবাই ওখানকার স্থানীয় মানুষ। লেহ্-তে উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সময় থেকেই মেলা বসে যায়। বিভিন্ন গ্রামের মানুষ এক জোট হয়ে শোভাযাত্রা বার করেন। পরনে গ্রামের নিজস্ব পোশাক। শোভাযাত্রা শেষ হয় একটা পোলো মাঠে। মানুষগুলো সেখানে লাইন ভেঙে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে যান। শুরু হয়ে যায় দেশোয়ালি গান আর বাজনা। আর হাঁ করে তাকিয়ে দেখার মতো নাচ।
পরের দিনগুলোয় সব থেকে বেশি ভিড় জমে তিরধনুকের যুদ্ধে। লেহ্-র কিছু বাছাই করা গ্রামে বসে এই তিরন্দাজির আসর। ছেলেরা সব ধনুকে গুণ পরাবে, পাখির চোখে বার বার শানানো তির ছুড়বে। আর সেই বীরপুরুষদের ঘিরে ঘিরে নাচ করবে তাদের ঘরের মেয়েরা। এটাই নাকি রীতি। সন্ধ্যেবেলায় বসে মজলিশ। সেখানে তখন তাবড় সুরসাধকের ভিড় জমে যায়। লোকসঙ্গীতের ওস্তাদ গাইয়ে, বাজনদাররা সুরে সুরে ঠান্ডা বাতাস আরও ভারী করে দেন। ও দিকে কিছু মঠে আবার লামারা মুখোশ-নাচ করেন। সে দৃশ্য যে দেখেছে তার নাকি পলকই পড়েনি। ওই মঠেই হয় নাটক-বিয়েও।
যাদের এমন হাজার বছরের পাহাড়ে ঐতিহ্য, তাদের সঙ্গে ঘোড়ার পিঠে পোলো খেলার বিশেষ সম্পর্ক তো থাকবেই। এ সময়েই হয় পোলো খেলার বিখ্যাত টুর্নামেন্ট, লাদাখ ফেস্টিভ্যাল কাপ। সব গ্রামের নিজস্ব পোলো টিম থাকে, তারা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়, পোলো খেলার আদি যুগের সব ক’টা নিয়ম মানা হয় সেখানে। আর তা দেখতে ভিড় উপচে পড়ে মাঠের ধারে।
এক দিন এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মানুষ এসে বেসাতি করত এই অঞ্চলে। মধ্য এশিয়া থেকে ভারতে আসার দরজা ছিল লাদাখের গিরিপথগুলো। অভিনয় দিয়ে আবার জাগিয়ে তোলা হয় সেই ইতিহাস। লেহ্-তে আবার বসে সেই বাজার। যেমন তেমন নয়, পুরনো দিনের মধ্য এশিয়ার বাজার। আবার বণিকরা ক্যারাভান-এ ভরে ভরে পণ্য সাজিয়ে আনবে। মধ্যযুগীয় পোশাকে সেজে দরদাম বিকিকিনি করে হাট সরগরম করবে দক্ষ অভিনেতারা।
দ্রাস, কার্গিল, জানস্কার উপত্যকাও মেতে ওঠে উৎসবে। হাতের কাজ আর আঁকা ছবির প্রদর্শনীরও মেলা বসে যায়। তখনকার সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হয় এখনকার সময়। অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস, রিভার র্যাফটিং, মোটরসাইকেল রেসও চলে পাশাপাশি। তবু মন জিতে নেয় সেই পুরনো খেলাগুলোই। জানস্কার ভ্যালি-তে যেমন। ওখানকার চমক হল সাকা। তেজি ঘোড়াগুলোকে ধরে প্রচুর রং-কাপড়ে জমকালো করে সাজানো হয়। তার পর আনা হয় মাঠে। এই ঘোড়দৌড় নাকি সাবেক কালের হিমালয়ের ভারী গর্বের বস্তু।
মন চাইছে? এক বার ছুঁয়ে দেখতে লাদাখের সেই টগবগে জান? ওহ্, জানেন তো, ওই সময় ওখানকার হোটেল-লজে, বাস-গাড়িতে অনেক ছাড়ের ব্যবস্থা। উৎসবের সময় বলে আকাশছোঁয়া দাম চাওয়া হয় না। বরং পর্যটকদের জন্য সব রকম আতিথেয়তার বন্দোবস্ত করে রেখেছেন উদ্যোক্তারা। তা হলে? আর কিন্তু মাত্র মাস খানেক আছে আর হাতে। শিগগির, শিগগির তৈরি হোন। ও দিকে, রং মাখতে যে শুরু করে দিয়েছে লাদাখ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.