|
|
|
|
একমত নন অনেক অনুগামীই |
শেষ পর্যন্ত সেই দলই গড়লেন অণ্ণারা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
ভাটা জনসমর্থনে। সাংবাদিক ও টিভি ক্যামেরার ভিড়ও অনেক পাতলা। আর সরকার তো আমলই দিচ্ছে না তাঁদের অনশনকে।
এমন একটা পরিস্থিতিতে আজ রাজনৈতিক দল গড়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করে দিল অণ্ণা-শিবির। ঘোষণাটা করা হল সেই যন্তরমন্তর থেকেই, যেখান থেকে এক দিন তাঁরা দেশের গোটা রাজনৈতিক ব্যবস্থাকেই ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ বলে অভিযোগ তুলে জনসমর্থনের ঢেউ তুলতে চেয়েছিলেন।
স্বাভাবিক ভাবেই অণ্ণাদের এই ঘোষণা কংগ্রেস থেকে শুরু করে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছে স্বস্তির খবর। কারণ, এত দিন ময়দানের বাইরে থেকে তোপ দেগেছেন অণ্ণারা। সংবাদমাধ্যমের একাংশও হাওয়া বাড়িয়েছে তাঁদের পালে। অণ্ণারা দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুধু নয়, সাংবিধানিক কাঠামো সম্পর্কেও জনমনে বিরূপ ধারণার তৈরি করছেন, উঠেছে এমন অভিযোগও। কংগ্রেস ও অন্য রাজনৈতিক দলগুলির নেতারা তাই মনে করছেন, রাজনীতির ময়দানে লড়াইয়ে নামলে অরবিন্দ কেজরিওয়াল, কিরণ বেদীরা বুঝতে পারবেন কত ধানে কত চাল। অণ্ণা হজারে নিজে অবশ্য দলে যোগ না দিয়ে বাইরে থেকে সমর্থন করবেন বলে জানিয়েছেন।
নির্বাচনী লড়াই যে মুখের কথা নয়, সে কথা বোঝার মতো লোক রয়েছে অণ্ণা-শিবিরেও। রাজনৈতিক দল গড়ার প্রশ্নে তাই অণ্ণা শিবিরও দ্বিধাবিভক্ত। শিবিরের অনেকেই রাজনৈতিক দল গড়ার বিরোধী। যেমন, প্রাক্তন বিচারপতি সন্তোষ হেগড়ের প্রশ্ন, ভোটে লড়তে বিপুল টাকা ও লোকবল লাগে। সে সব কোথা থেকে আসবে? মেধা পাটকরও রাজনৈতিক লড়াইয়ের ব্যাপারে তেমন আত্মবিশ্বাসী নন। তাঁর সংশয়ের কারণ, যখনই কেউ মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে রাজনীতিতে আসেন, হয় তাঁরা বেশি দিন টিকে থাকতে পারেন না অথবা সফল হন না। বস্তুত সেই কারণেই অণ্ণা নিজে সরাসরি দলের সঙ্গে যুক্ত হবেন না বা নির্বাচনে লড়বেন না বলেই মনে করা হচ্ছে। অণ্ণা নিজে জানিয়েছেন, “আগামী দু’বছর আমি গোটা দেশে ভ্রমণ করব। এই যে দু’বছর বাকি আছে (লোকসভা ভোটের), সেই সময়টুকু আমি মানুষকে জাগ্রত করার কাজ করব।” |
|
প্রাক্তন সেনাপ্রধান ভি কে সিংহের হাতে ডাবের জল খেয়ে
অনশন ভঙ্গ করছেন অণ্ণা হজারে। শুক্রবার দিল্লিতে। ছবি: পিটিআই |
যন্তরমন্তরে হাজির বহু অণ্ণা-সমর্থকও এ দিনের ঘোষণায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু ভোটে লড়ার পক্ষে কেজরিওয়াল, প্রশান্ত ভূষণ, কিরণ বেদীদের যুক্তি, রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে বদলাতে হবে তার মধ্যে থেকেই। বাইরে থেকে নয়। কেজরিওয়ালের ভাষায়, “এটা রাজনৈতিক দল নয়, সড়ক থেকে সংসদ পর্যন্ত আন্দোলন।”
অণ্ণা-শিবিরের এই ভোল বদলের কারণটা কী? তাঁদের ঘনিষ্ঠরাই ঘরোয়া ভাবে কবুল করছেন, যতটা আশা করা হয়েছিল বাস্তবে তা আদৌ ঘটেনি। অণ্ণারা ভেবেছিলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁরা হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালার মতো আগে আগে যাবেন, আর দেশের আম-জনতা তো বটেই, সমস্ত রাজনৈতিক দলও তাঁদের পিছু নেবে। কংগ্রেসের ‘একচেটিয়া’ শাসনের বিরুদ্ধে বিজেপি-র আন্দোলনের সময় যে ভাবে আরএসএস থেকে শুরু করে কমিউনিস্টরা, সকলেই পিছনে এসে দাঁড়িয়েছিল, অণ্ণার ক্ষেত্রে তা হয়নি। বস্তুত, অণ্ণা শিবিরের নিজেরই আরএসএস থেকে দূরত্ব বজায় রাখার তাগিদ ছিল। কারণ, কংগ্রেস প্রথম দিন থেকেই বলতে শুরু করেছিল অণ্ণা ও রামদেব ‘আরএসএসের লোক’। প্রথম দিকে অণ্ণারা মনমোহন সরকারের উপর যথেষ্ট চাপ তৈরি করতে পেরেছিলেন। সরকার তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে বসতেও বাধ্য হয়। কিন্তু সেই চাপ বা যন্তরমন্তরের ভিড়, কোনওটাই ধরে রাখতে পারেননি অণ্ণারা। এই বারের অনশন তো কার্যত কানাগলিতে ঢুকে পড়ার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সরকারের তরফে কোনও রকম আলোচনার বার্তাই আসেনি। কোণঠাসা অণ্ণাদের নিজে থেকে অনশন প্রত্যাহার নিয়ে তাই কটাক্ষ করতেও ছাড়ছেন না রাজনৈতিক দলের নেতারা। অণ্ণা অনুগামীদের অবশ্য দাবি, প্রাক্তন সেনাপ্রধান ভি কে সিংহর মতো নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের অনুরোধেই অণ্ণা-কেজরিওয়াল অনশন প্রত্যাহার করেছেন। ভি কে-র হাত থেকে ফলের রস খেয়েই আজ অনশন প্রত্যাহার করেছেন।
এ দিনও এই অনশনকে আক্রমণ করেছেন কংগ্রেস নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, এই মুহূর্তে লোকপাল বিলের দাবিতে অনশনটাই অবাঞ্ছিত। কারণ বিলটি এখন সংসদের সিলেক্ট কমিটিতে রয়েছে। কাজেই সরকারের কিছু করণীয় নেই। আবার বিশেষ তদন্তকারী দল গঠনের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী-সহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন অণ্ণা, তার পিছনেও যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ নেই বলে সরকারের তরফে যুক্তি দেওয়া হয়েছে।
অণ্ণা শিবিরের সদস্যরাও বুঝতে পারছিলেন যে, এই ভাবে আন্দোলন এগোবে না। তাই রাজনীতিতে নামার ‘চ্যালেঞ্জ’ গ্রহণের সিদ্ধান্ত। কংগ্রেসের নেতা দিগ্বিজয় সিংহরা এত দিন তাঁদের ‘চ্যালেঞ্জ’ জানিয়ে বলেছেন, বাইরে থেকে সরকারকে উচিত-অনুচিত না বুঝিয়ে অণ্ণারা মানুষের ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসুন। তার পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। আজ কেজরিওয়ালরা নিজেরাই রাজনীতিতে নামার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করায় কপিল সিব্বল যেমন বলছেন, “আসলে প্রথম থেকেই অণ্ণা-অনুগামীরা ক্ষমতালোভী।” সপা নেতা রামগোপাল যাদব বলেন যে, “অণ্ণা-অনুগামীদের এক জনও ভোটে জিততে পারবেন না। জামানত বাজেয়াপ্ত না হলে সেটাই হবে অলৌকিক ঘটনা।”
কিরণ বেদীদের অবশ্য দাবি, অণ্ণা সৎ ও নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন ব্যক্তিদেরই রাজনীতিতে নিয়ে আসবেন। দশ দিনের অনশন ভাঙার আগে দুর্বল শরীর নিয়ে কেজরিওয়ালও বোঝানোর চেষ্টা করেন, তাঁরা এমন এক রাজনৈতিক দল গঠন করবেন, যা বর্তমান রাজনীতির গতিপথই বদলে দেবে। অন্য দলগুলির থেকে এই পার্টি আলাদা হবে। সাধারণ মানুষও দলের কর্মসূচি ঠিক করবে। সাধারণ মানুষের মত নিয়েই তৈরি হবে দলের নাম। ‘স্বরাজ’ নামটাই আলোচনায় শোনা যাচ্ছে বেশি। কেজরিওয়ালের লেখা নতুন বইয়ের নামও তাই। |
|
|
|
|
|