তাঁকে তখন হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশের কুড়িটা দল। তোলপাড় করা হচ্ছে গোটা মহীশূর শহর। শহরের পুলিশ কমিশনারের কাছে বারবার আসছে মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোন। সঙ্গে উদ্বিগ্ন প্রশ্ন, কোথায় তিনি, কুপ্পাহাল্লি সীতারামাইয়া সুদর্শন?
যাঁকে নিয়ে ভোর থেকে টানা ছ’ঘণ্টা ধরে এত নাটক, তিনি তখন ভাইয়ের বাড়ি থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে এক ক্যুরিয়র সংস্থার কর্মীর বাড়িতে। কী ভাবে গেলেন সেখানে? কেনই বা গেলেন? পুরোটাই এখনও ধোঁয়াশা।
দিন তিনেক আগে মহীশূরে ভাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসেন প্রাক্তন সঙ্ঘপ্রধান সুদর্শন। আজ ভোরে নিয়মমতো হাঁটতে বেরোন। কিন্তু নিয়মে ছেদ পড়ল যখন বাড়ির লোকেরা দেখলেন, সময় পেরিয়ে গেলেও ফেরার নাম নেই ৮১ বছর বয়সী বৃদ্ধের। |
শুরু হল খোঁজ। তাতে পুলিশের সঙ্গে যোগ দিলেন আরএসএস কর্মীরাও। ছ’ঘণ্টা তোলপাড়ের পরে বেলা বারোটা নাগাদ ললিত মোহন হেলিপ্যাড এলাকা থেকে পুলিশকে ক্যুরিয়র সংস্থার কর্মী অশ্বথ ফোনে জানান, টিভিতে ‘ব্রেকিং নিউজে’ যে বৃদ্ধের মুখ দেখাচ্ছে, তিনি আপাতত তাঁরই বাড়িতে বসে আছেন।
হঠাৎ কী করে ‘হারিয়ে গেলেন’ সুদর্শন? পুলিশকর্তারা বলছেন স্মৃতিভ্রংশ। আর তাই রাস্তা হারিয়ে ফেলেন তিনি। যাঁর বাড়িতে সুদর্শনের হদিস মেলে, সেই অশ্বথ জানান, “প্রথমে এসে তিনি জল চাইলেন। তখনও পরিচয় জানি না। বুঝলাম পথশ্রমে ক্লান্ত। পথ ভুলে গিয়েছেন।” এর পর ‘বৃদ্ধ’কে বিশ্রাম নিতে বলেন অশ্বথ। বলেন কিছু খেয়ে যেতেও “ভদ্রলোক বলেন, স্নান না করে কিছু খাই না।” এ সব যখন ঘটছিল, তখন বিজেপি নেতাদের মনে ঘোর আশঙ্কা। এক নেতা বললেন, “আমরা তো ভয়ই পাচ্ছিলাম যে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও দীনদয়াল উপাধ্যায়ের পরে এ বার সুদর্শনের কিছু হবে না তো?” জনসঙ্ঘের ওই দুই নেতার মৃত্যুই রহস্যে মোড়া।
অনেকে অবশ্য বলছেন, আদতে ভোপালবাসী সুদর্শন হয়তো অচেনা শহরে রাস্তা গুলিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, তা হলে অশ্বথকে তিনি নিজের পরিচয় দেননি কেন? তাই ঘুরেফিরে আসছে স্মৃতিভ্রংশের প্রসঙ্গটাই। যেন ‘ব্ল্যাক’-এর অমিতাভ বচ্চন। আইসক্রিমটা হাতে নিলেন, কিন্তু ফিরতে পারলেন না নিজের জায়গায়। কোথায় যেন হারিয়ে গেল সাম্প্রতিক স্মৃতি।
সুদর্শনও কি এমনই স্মৃতিভ্রংশে আক্রান্ত? ঠিক কী হয়েছিল তাঁর? ভুলে যাওয়া রোগ বা ‘ডিমেনশিয়া’র শিকার যাঁরা হন, তাঁদের অনেকেরই এমন আচমকা ‘পথ ভোলার’ মতো উপসর্গ দেখা দেয়। সেটা মস্তিষ্কের সমস্যা। কিন্তু বয়সের জন্য স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার ব্যাপারটা আলাদা। ৯৫ বছরে মৃত্যুর কিছু দিন আগেও টনটনে ছিল জ্যোতি বসুর রাজনৈতিক জ্ঞান। মৃত্যুর কয়েক মাস আগে এক অনুষ্ঠানে দিব্যি নিজের ছোটবেলার গল্প বলেছিলেন ৯০ বছরের সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়। প্রবীণ অশোক ঘোষ এখনও পথে নেমে আইন অমান্য করেন। আর অশীতিপর লালকৃষ্ণ আডবাণীর তো এখনও দলের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছে। পক্ষান্তরে, পশ্চিমবঙ্গের আর এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অজয় মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিভ্রংশ হয়েছিল মৃত্যুর আগে। দীর্ঘদিন প্রকাশ্যে আসেন না অটলবিহারী বাজপেয়ী। বিজেপির একাংশের মধ্যে কানাঘুষো, তাঁরও স্মৃতি বিকল হয়েছে।
সুদর্শন-রহস্য হয়তো ভেদ করতে পারবেন তাঁর ঘনিষ্ঠ বা চিকিৎসকরাই। আপাতত তাঁর ভালয়-ভালয় বাড়ি ফেরাটাতেই স্বস্তি দেখছেন সকলে। |