গুড়াপের সেই বেসরকারি হোমের নানা ‘কাণ্ডকারখানা’ ক্রমশ প্রকাশ্যে আসছে। ওই হোমে সাম্প্রতিক কালে বিভিন্ন সময়ে মারা যাওয়া জনা ছ’য়েক আবাসিকের দেহ বর্ধমানের জামালপুর এলাকায় সৎকার করতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে জানতে পেরেছেন গুড়িয়া অপমৃত্যু-রহস্যের তদন্তকারী পুলিশে অফিসারেরা। তবে দেহগুলি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, না কবর দেওয়া হয়েছে সে ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত নয়। শনিবার হুগলির পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে এখনই বিস্তারিত কিছু বলার সময় আসেনি। তবে আমরা এ ব্যাপারে বর্ধমানের পুলিশ-কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।” বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা জানান, ওই ব্যাপারে তদন্ত শুরু হয়েছে। |
গুড়াপের খাজুরদহের ওই বেসরকারি হোমটি এ দিনই ফাঁকা করে দেয় প্রশাসন। কলকাতা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং হাওড়ার ৪টি হোমে পাঠিয়ে দেওয়া হয় আবাসিকদের। গত বুধবার দুপুরে গুড়াপের ওই হোমের পাঁচিলের পাশের একটি পুকুরের ধারের মাটি খুঁড়ে আবাসিক গুড়িয়ার (৩২) দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। কী ভাবে তাঁর মৃত্যু হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এ পর্যন্ত ওই মামলায় মোট ১০ জন ধরা পড়েছে। পুলিশ সূত্রের দাবি, ধৃতদের জেরা করে তারা জেনেছে শুধু গুড়িয়াই নন, সাম্প্রতিক কালের মধ্যে ওই হোমে ৫-৬ জন আবাসিক মারা গিয়েছেন। সৎকারের জন্য তাঁদের দেহ গুড়াপ লাগোয়া বর্ধমানের জামালপুরের নির্জন এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। বর্ধমান পুলিশের একটি সূত্র দাবি করেছে, গত ৭ মে ঝর্না সামন্ত (৪৪) নামে এক আবাসিকের মৃতদেহ জামালপুরে নিয়ে গিয়ে সৎকারের চেষ্টা করে গুড়াপের হোমের লোকজন। স্থানীয় বাসিন্দাদের থেকে খবর পেয়ে পুলিশ দেহটি আটক করে এবং একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠায়। হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু ঘটেছে বলে ময়না-তদন্তের রিপোর্টে জানানো হয়। ময়না-তদন্তের পরে মৃতদেহটি হোমের হাতেই তুলে দেওয়া হয়। এ নিয়েও স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ ছিল।
বর্ধমানের পুলিশ সুপার বলেন, “পুলিশের উচিত হয়নি, ঝর্না সামন্তের ব্যাপারে বিস্তারিত খবরাখবর না নিয়ে হোমের লোকজনের হাতে মৃতদেহ দেওয়া। জামালপুর থানার ওসি রজতকান্ত পাল এবং এক এএসআই-এর ভূমিকা নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেবাশিস সরকারকে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।” হুগলি জেলা পুলিশ সূত্রের দাবি, গুড়াপের ওই হোম থেকে আবাসিক নিখোঁজ হয়েছেন, অথচ পুলিশকে তা জানানো হয়নিএমন ঘটনাও ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, কোনও হেফাজতে মৃত্যুর (কাস্টডিয়াল ডেথ) ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সুরতহাল এবং ময়না-তদন্ত করানো বাধ্যতামূলক। জামালপুরে যে সব দেহ সৎকার করা হয়েছে, কোনও ক্ষেত্রেই এই নিয়ম মানা তো দূর, পুলিশকে কিছু জানানোই হয়নি। জেরায় মেলা এই তথ্যের ভিত্তিতে গুড়াপের হোমটি থেকে আবাসিকদের তালিকা সংগ্রহ করে কত জন নিখোঁজ, তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। নিখোঁজদের মধ্যে কাদের মৃত্যু হয়েছে, তা নিয়ে জেরা করা হচ্ছে ধৃতদের। তদন্ত যতই এগোচ্ছে, হোমের উপরে জেলা সমাজকল্যাণ দফতরের ‘নজরদারি’ নিয়েও ততই প্রশ্ন উঠছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, সমাজকল্যাণ দফতর ২০০৯-এ শেষ বার ওই হোম পরিদর্শন করে। সে সময় আবাসিকদের ভাল-মন্দ সংক্রান্ত ‘প্রশ্ন’ উঠলেও, সেগুলির মীমাংসা হওয়ার আগেই ২০১১-য় ফের সরকারি অনুদান পায় ওই হোম। কী ভাবে তারা অনুদান পেল প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “হোমের কাজকর্ম নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। জেলা সমাজকল্যাণ দফতরের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে তদন্তে।” |