গাইঘাটার সুটিয়ায় দুষ্কৃতীদের আনাগোনা ঠেকাতে ওই এলাকায় লাঠিসোঁটা নিয়ে রাতপাহারায় নামবে তৃণমূল।
শনিবার সুটিয়া-বারাসত পল্লি উন্নয়ন বিদ্যাপীঠের মাঠে সুটিয়া গণধর্ষণ-কাণ্ডের অন্যতম সাক্ষী বরুণ বিশ্বাসের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আয়োজিত এক সভায় এ কথা ঘোষণা করেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল পর্যবেক্ষক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। সেই সঙ্গে সিপিএমের নাম না করে তাঁর কটাক্ষ, “সুটিয়া গণধর্ষণে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সুশান্ত চৌধুরী, বীরেশ্বর ঢালি কোন রাজনৈতিক দলের আশ্রয়ে ছিল তা বলতে চাই না। ওই দলকে পঞ্চায়েত নির্বাচনে নিশ্চিহ্ন করে দিন।” পক্ষান্তরে, কলকাতায় বরুণবাবুর কর্মস্থল মিত্র ইনস্টিটিউশন (মেন) স্কুল চত্বরে শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ আয়োজিত এক শোকসভায় রাজ্যের প্রাক্তন স্কুল শিক্ষামন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা পার্থ দে-র মন্তব্য, “সমাজবিরোধীরা রাজনীতি পরিচালনা করছে। তাদের মদত দিচ্ছে কিছু রাজনীতিক। বরুণবাবুর হত্যাকারীরাও তাঁদের প্রশ্রয় পাচ্ছে।” |
২০০০ সাল থেকে সুটিয়ায় একের পরে এক গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল। ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে ও পুলিশি ‘নিষ্ক্রিয়তা’র বিরুদ্ধে ‘প্রতিবাদী মঞ্চ’ গড়ে আন্দোলনে নামেন স্থানীয় কিছু মানুষ। সেই ‘মঞ্চ’-এরই সম্পাদক ছিলেন স্কুলশিক্ষক বরুণবাবু। গত ৫ জুলাই সন্ধ্যায় গোবরডাঙা স্টেশনের কাছে তাঁকে গুলি করে খুন করে দুষ্কৃতীরা। ওই মামলায় ইতিমধ্যে একাদশ শ্রেণির এক ছাত্র-সহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এ দিন বরুণ-হত্যার প্রতিবাদসভায় খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “সুটিয়াকে আর জ্বলতে দেব না। ছোট ছেলেদের যারা টাকা জুগিয়ে খুনে মদত দিয়েছে, সরকার তাদের খুঁজে বের করবেই।” বরুণ-খুনের মতো ফের কোনও অনর্থ যাতে না ঘটে, সে জন্য সুটিয়া পুলিশ ক্যাম্পে পুলিশকর্মীর সংখ্যা এবং গাড়ির ব্যবস্থার আশ্বাস দেন জ্যোতিপ্রিয়বাবু। ‘প্রতিবাদী মঞ্চ’-এর সভাপতি ননীগোপাল পোদ্দার-সহ ৩ জনের জন্য পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও জানান। বীরেশ্বর ঢালি, সুশান্ত চৌধুরীদের বাইরে থেকে টাকা জুগিয়ে সংশোধনাগার থেকে বার করার পরিকল্পনা হচ্ছে বলেও মন্ত্রী আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “ওদের কোনও মতেই বেরোতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে আমরা উচ্চ আদালতে যাব। ওরা ছাড়া পেলে আমরাও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারব না।” তাঁর সংযোজন, “এখানে মহিলারা সন্ত্রস্ত। তৃণমূল এখানে ক্যাম্প করে রাতপাহারা দেবে। প্রতি সপ্তাহে একটি করে রাজনৈতিক মিছিল হবে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। লাঠিসোটা নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকবে আমাদের লোকজন। দুষ্কৃতীদের ঢুকতে দেওয়া হবে না। আমাদের দলেও তাদের স্থান নেই।” |
মিত্র ইনস্টিটিউশন (মেন) স্কুল চত্বরে স্মরণসভা। |
সভায় খাদ্যমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সৌগত রায়, রাজ্যের ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর, অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ মন্ত্রী উপেন বিশ্বাস, সাংসদ গোবিন্দচন্দ্র নস্কর প্রমুখ। উপেনবাবু বলেন, “গণধর্ষণ-কাণ্ডের সময় যারা রাজ্য শাসন করেছে, তাদের উচিত গলায় গামছা দিয়ে সুটিয়ার মানুষের কাছে ক্ষমা চাওয়া।” সভায় মন্ত্রীদের কাছে গণধর্ষণ-কাণ্ডে জড়িত দুষ্কৃতীদের সাঙ্গোপাঙ্গোদের কাছে ‘থেকে যাওয়া’ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি জানান বরুণের কাকা অতুলবাবু। সভার আগে বরুণের বাড়িতে গিয়ে তৃণমূলের পক্ষ থেকে সমবেদনা জানান জ্যোতিপ্রিয়বাবুরা।
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমিতাভ নন্দী অবশ্য বলেন, “গণধর্ষণ-কাণ্ড নিন্দনীয়। আমরা সেই সময়ে প্রতিবাদী মঞ্চকে সহযোগিতা করি। অনেককে গ্রেফতার করা হয়। এ বার বরুণকে কারা খুন করল, তাদের খুঁজে বের করুক সরকার। দেখা হোক, তারা কোন দলের।”
মিত্র ইনস্টিটিউশন (মেন) চত্বরের শোকসভায় বরুণবাবুর মৃত্যুর নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি তুলে প্রাক্তন অথর্মন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত বলেন, “রাজ্য খুব খারাপ সময়ে পড়েছে। শিক্ষকদের উপরে স্কুলে-স্কুলে আক্রমণ হচ্ছে।” বিগত বাম সরকারের আর এক মন্ত্রী কান্তি বিশ্বাস বলেন, “যে স্কুলে আমি শিক্ষকতা করতাম, সেই স্কুলেরই ছাত্র টাকার লোভে শিক্ষককে খুন করেছে। এই ঘটনা রাজ্যকে কলঙ্কিত করেছে।” এ দিন সকালে কংগ্রেসের প্রতিনিধি দলও সুটিয়ায় বরুণের বাড়িতে গিয়ে সমবেদনা জানায়।
|
ছবি: শান্তনু হালদার, নিজস্ব চিত্র |