দলের নির্দেশ মেনে সিঙ্গুরে যাননি সিপিএমের প্রবীণ বিধায়ক আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা। সাময়িক গরহাজিরার পরে এ বার দলের ‘শৃঙ্খলা’ মেনে রাজ্য কমিটির বৈঠকেও যোগ দিলেন। আপাতত ‘বিদ্রোহ’ শেষ করে রেজ্জাক কি এর পরে দলের কথা শুনেই চলবেন? সিপিএমের ভিতরে-বাইরে আলোচিত হচ্ছে এই প্রশ্ন!
কিছু দিন আগেও রেজ্জাক জানিয়েছিলেন, তিনি আর আলিমুদ্দিনে রাজ্য কমিটির বৈঠকে যাবেন না। কেন যাবেন না, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, রাজ্য কমিটির বৈঠকে কাজের কাজ কিছুই হয় না। শুধু ‘হাত তুলতে’ তিনি আর যাবেন না। কিন্তু শনিবার, সিপিএমের দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠকের প্রথম দিন প্রথমার্ধে রেজ্জাক যোগ দেন। ভাঙড়ে দলের কর্মসূচি থাকায় বিকেলে অবশ্য তিনি আর বৈঠকে আসেননি। রেজ্জাক রাজ্য কমিটির বৈঠকে যোগ দেওয়ায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু ‘খুশি’।
তিনি তা হলে ‘মান ভেঙে’ রাজ্য কমিটির বৈঠকে যোগ দিলেন? জবাবে রেজ্জাক বলেন, “সকালে গিয়েছি। বিকেলে ভাঙড়ে কর্মসূচি থাকায় আর যেতে পারিনি।” তবে আজ, রবিবার রাজ্য কমিটির বৈঠকের দ্বিতীয় দিন তিনি না-ও যেতে পারেন বলে ঘনিষ্ঠদের ইঙ্গিত দিয়েছেন রেজ্জাক। দলেরই একাংশের মতে, টানা তিন বার কোনও কমিটির বৈঠকে গরহাজির থাকলে শৃঙ্খলার প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারে বুঝেই রেজ্জাক এ দিন ‘ঝাঁকি দর্শন’ দিয়েছেন!
পাশাপাশি, ভাঙড়ে তাঁর ও কৃষক নেতা তুষার ঘোষের উপরে তৃণমূলের ‘হামলা’র পরে যে ভাবে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র-সহ সিপিএম নেতারা তাঁর পাশে দাঁড়ান, তাতেও রেজ্জাক খুশি। তাঁর কথায়, “আমি সব সময়ে আন্দোলনের রাস্তায় আছি।” দলীয় সূত্রে খবর, যে ভাবে গত কয়েক মাস রেজ্জাক দলীয় শৃঙ্খলা ভাঙছিলেন, তাতে তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ রাজ্য কমিটি ও জেলা কমিটির সদস্যেরাও ক্ষুব্ধ। তাঁরা সে কথা সরাসরিই রেজ্জাককে জানান। স্বাভাবিক ভাবেই রেজ্জাক তাঁর পুরনো অবস্থান কিছুটা হলেও ‘নরম’ করেছেন।
রাজ্য কমিটির বৈঠকে এ দিন দলের আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়। রাষ্ট্রপতি পদে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সিপিএম সমর্থন করলেও কেন্দ্রের জনবিরোধী আর্থিক নীতির বিরুদ্ধে সংসদের ভিতর ও বাইরে আন্দোলন চলবে বলে বিমানবাবু বৈঠকে জানান। কেন প্রণববাবুকে সমর্থন করা হল, রাজ্য কমিটির সদস্যদের কাছে সে ব্যাপারে বিস্তারিত ব্যাখ্যা না-করে বিমানবাবু বলেন, দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট পার্টি পত্রিকায় এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলেছেন। সুতরাং, নতুন করে কিছু বলার নেই। কিন্তু প্রণববাবুকে সমর্থন করা হলেও বিগত পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক লাইনের কোনও পরিবর্তন হয়নি বলে বিমানবাবু জানান। আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে মহিলা ও তরুণদের আরও বেশি করে পার্টির সদস্য করা ও নেতৃত্বে আনার উপরেও বিমানবাবু জোর দিয়েছেন।
আগামী এক মাস ধরে পথে নেমে আন্দোলন করার উপরে জোর দিচ্ছে সিপিএম। গণতান্ত্রিক অধিকারের উপরে আক্রমণ, ক্রমবর্ধমান নারী নির্যাতন, শিক্ষায় নৈরাজ্যের প্রেক্ষাপটে আন্দোলনে নামা হবে বলে ঠিক হয়েছে। সেই সঙ্গে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তার ব্যাপারে জেলায় জেলায় কর্মসূচি পালন করা হবে। প্রসঙ্গত, সিপিএমের রাজ্য কমিটির প্রাক্তন সদস্য, হাওড়া জেলার পীতবসন দাস এ দিনই প্রয়াত হয়েছেন। |