‘বল’শালীদের সাম্রাজ্যে
জাম্পিং পেত্জি (pezzi) বল নিয়ে খেলেছেন কখনও? এই খেলনাটা ইতালির, তৈরি করেছিলেন আকুইলিনো ক্যাসানি। তার পর, বলটির গুরুত্ব উপলব্ধি করে ১৯৬৩ সালে ব্রিটিশ ফিজিয়োথেরাপিস্ট মেরি কুইনটন তাঁর কর্মস্থল সুইজারল্যান্ডে প্রথম বার চিকিৎসার প্রয়োজনে এটির ব্যবহার শুরু করেন। মূলত, সেরিব্রাল পালসি, মায়োপ্যাথি এবং মাসকুলার ডিসট্রফি আক্রান্তদের স্নায়ু ও পেশির দুর্বলতা কাটাতে, হাঁটতে চলতে অসুবিধা ও শরীরের ভারসাম্য সংক্রান্ত অসামঞ্জস্য ঠিক করতে এই বলকে কাজে লাগান। পরে সুইজারল্যান্ডের ফিজিক্যাল থেরাপি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য ওই দেশের চিকিৎসাকেন্দ্রগুলিতে পেত্জি বল জনপ্রিয় হয়। উত্তর আমেরিকায় পৌঁছানোর পর এই বলের নাম হয় ‘সুইস বল’। এ দেশে কয়েক বছর আগে পর্যন্ত শুধুমাত্র ফিজিয়োথেরাপি, নিউরো-রিহ্যাবিলিটেশন এবং স্পোর্টস মেডিসিন চিকিৎসাকেন্দ্রগুলির মধ্যেই সুইস বলের ব্যবহার সীমিত ছিল। নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে আমেরিকান ফিটনেস বিশেষজ্ঞ পল চেক ফিটনেসের দুনিয়ায় সুইস বলকে জনপ্রিয় করে তোলেন। সুইস বল এখন আরও নতুন নতুন অনেক নামই পেয়েছে। যেমন ‘ফিট বল’, ‘জিম বল’, ‘পিলাটিস বল’, ‘ফিটনেস বল’, ‘স্পোর্টস বল’, ‘স্টেবিলিটি বল’, ‘থেরাপি বল’, ‘সুইডিশ বল’, ‘বডি বল’ ইত্যাদি।
বাচ্চা থেকে বয়স্ক ব্যক্তি, সম্পূর্ণ ফিট থেকে একেবারে আনফিট, প্রত্যেকেই সুইস বল ব্যবহার করতে পারেন। বাচ্চাদের জন্য অন্য সব ব্যায়ামের তুলনায় সুইস বল নিয়ে এক্সারসাইজ সব সময় আকর্ষণীয় ও মজার। তাই ওদের আগ্রহও বেশি হয়। যাঁরা দীর্ঘদিন মাংসপেশির দুর্বলতা কাটাতে ব্যায়াম করছেন, তাঁরা শক্ত মেঝের তুলনায় এই বলে বেশি আরাম পান। বল দিয়ে ব্যায়ামের সময় শরীরের ভারসাম্য ও মাংসপেশির দৃঢ়তা বজায় রাখতে হয়, ফলে এক সঙ্গে অনেকগুলি পশ্চারাল পেশি কাজ করে, যার জন্য দেহের বাহ্যিক পেশিসমূহের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ পেশিগুলিও ব্যায়ামের মধ্যে থাকে। ফলে তাড়াতাড়ি দৃঢ় হয়, শক্তিও জমে। তবে সুইস বল ব্যবহার শুরুর আগে ঠিক করে নিতে হবে কেন ও কী উদ্দেশ্যে আপনি সুইস বল ব্যবহার করছেন।
উদ্দেশ্য যদি ফ্লেক্সিবিলিটি হয়, তবে বল দিয়ে স্ট্রেচিং এবং সন্ধিগুলির কোমলতা বাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট ব্যায়ামগুলি করুন।
দেহের অতিরিক্ত ওজন ও অবাঞ্ছিত মেদ কম করতে বল নিয়ে পিলাটিসের ভঙ্গিমা অভ্যাস করুন। বেশ কিছু পিলাটিস ওয়ার্ক-আউট সুইস বলের সাহায্যে করতে পারলে তাড়াতাড়ি মেদ ঝরে।
মাংসপেশি টানটান রাখতে রেজিস্টেড এক্সারসাইজ করুন। সে ক্ষেত্রে নিজের দেহের ওজন কাজে লাগিয়ে এক্সারসাইজ করুন। এ ছাড়া ডামবেল, বারবেল নিয়ে ওয়েটট্রেনিং-এর সময় সুইসবলের ব্যবহার একটা সাপোর্ট সিস্টেম হিসাবে কাজ করে। অল্প, মাঝারি এবং সামান্য ভারী কয়েকটা সেট ডামবেল দিয়ে পেট, কোমর, বুক, পিঠ, কাঁধ থেকে শুরু করে হাত ও পায়ের সমস্ত পেশিগুলিকেই সুইস বল দিয়ে টোন করে বাড়ানো যায়। রেজিস্টেড এক্সারসাইজ সরাসরি ফ্লেক্সিবিলিটি না বাড়ালেও, এক নাগাড়ে কিছু দিন সুইস বল-এর সাহায্যে বডি টোন-এর অভ্যাস করলে পরোক্ষে ফ্লেক্সিবিলিটি অনেক বাড়ে। জিমে ওয়েটট্রেনিং-এর পর সুইস বল দিয়ে কুল ডাউন করা যায়। বলের সাহায্য নিয়ে মাংসপেশিগুলির স্ট্রেচিং প্রাকৃতিক উপায়ে শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে। পেশি দুর্বলতা, আড়ষ্টতা, জোর কম থাকার ফলে যাঁরা দীর্ঘ দিন কোমরের ব্যথায় ভুগছেন, তাঁদের জন্য সুইস বল উপকারী। বিশেষ করে শিরদাঁড়ার মাংসপেশি, ইরেকটর স্পাইনেটাস, গ্লুটিয়াল ও পায়ের হ্যামস্ট্রিং-এর শক্তি ও নমনীয়তা বাড়িয়ে তুলতে সুইস বল দারুণ কাজ করে।
বলের মাধ্যমে ব্যায়াম প্রথমেই একা একা অভ্যাস করা উচিত নয়। নিজে নিজে অভ্যাস করতে গেলে ফল বিপজ্জনক হতে পারে। চোট-আঘাতের সম্ভাবনা প্রবল। বাড়িতে কিংবা জিমে যেখানেই করুন, পার্সোনাল ট্রেনারের সাহায্য নিতেই হবে। অন্তত যত ক্ষণ না পর্যন্ত আপনার পুরোপুরি ভারসাম্য ও পদ্ধতিটা যথাযথ ভাবে আয়ত্তে আসছে, তত ক্ষণ এই সাহায্য প্রয়োজন। তা ছাড়া যে কোনও শরীরচর্চা, সে সুইস বল দিয়েই হোক বা অন্য কোনও উপায়ে, প্রথম বার শুরু করার আগে বর্তমান শারীরিক ফিটনেস কেমন জেনে নেওয়া জরুরি।

সুইস বল ব্যবহারের নিয়ম
• মাথা ধরার রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, চোখের অতিরিক্ত পাওয়ার, বুকে ব্যথা, হার্নিয়া, সন্ধি মুচকে যাওয়া, পেশিতে অতিরিক্ত টান ইত্যাদি সমস্যায় ও গর্ভবতী অবস্থায় এই ব্যায়াম করবেন না।
• বল দিয়ে ফ্লোরে ব্যায়ামের সময় এক্সারসাইজ ম্যাট ব্যবহার করুন এবং ফ্লোর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
• আস্তে আস্তে সুইস বল ব্যবহার করুন। ভারসাম্য বজায় থাকবে।
• অন্য সব ব্যায়ামের মতোই সুইস বল ব্যবহারের সময় শ্বাস নেওয়া ছাড়ার অভ্যাসটা ঠিক হতে হবে। শ্বাস নেওয়ার সময় বুক প্রসারিত করুন আর ছাড়ার সময় পেট ভেতর দিকে সঙ্কুচিত করে মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন। শ্বাস ছাড়ার সময়টা ১:২ অনুপাতে বেশি রাখুন।
• বার বার সময় পরিবর্তন না করে সারা দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়েই এই ব্যায়ামগুলো করুন।
• দেহের উচ্চতা অনুযায়ী বলের আয়তন ঠিক করুন। উচ্চতা ৫’২” বা তার কম হলে ৪৫ সেন্টিমিটার, ৫’৩” থেকে ৫’৮”-র বেলায় ৫৫ সেন্টিমিটার এবং ৫’৯” থেকে ৬ ফুট পর্যন্ত ৬৫ সেন্টিমিটার আর তার থেকে বেশি উচ্চতাতে ৭৫ সেন্টিমিটার বল বেছে নিন।

যোগাযোগ: ৯৮৩৬০১৬২১৫



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.