|
|
|
|
|
|
মাটিতে পা পড়বে যখন
ঘরে ঢুকে প্রথমেই যেখানে পা ফেলবেন, তার চেহারা মলিন
হলে
চলে?
মেঝেকেও তো সুন্দর পা দু’খানির উপযুক্ত হতে
হবে,
তা-ই না? ইন্টিরিয়র ডিজাইনার
উর্বশী বসু |
|
কার্পেট, দরি, গালচে, দামি পাপোশ মেঝেকে চাপাচুপি দেওয়ার হাজারখানেক উপায়। আর যাঁরা মাটিকে এত রকম সাজপোশাক পরানোয় বিশ্বাস রাখেন না? তাঁদের জন্য তো রয়েছেই লাল চকচকে মেঝে, যার চার দিক মোড়া থাকবে কালো বর্ডার দিয়ে, নয়তো মজুত বিলিতি মার্বেল, যার মোম-মাজা গা দিয়ে ঠিকরে বেরোবে আভিজাত্য। উঁহু, ভাবনায় যে গলদ রয়ে গেল। কারণ, এই ‘হয় এটা, নইলে ওটা’র ধারণা এখন মুছতে বসেছে। কোন ঘর, কী ভাবে ব্যবহার হয়, তা মাথায় রেখে ফ্লোরিং নিয়ে নানা রকম পরীক্ষানিরীক্ষা এখন দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ঘরের মুড, টোন, অনেক কিছুই নির্ভর করে ঠিকঠাক ফ্লোরিংয়ের ওপর।
হার্ড ফ্লোরিং যাঁদের ভীষণ পছন্দের, তাঁরা ইতালিয়ান মার্বেল বেছে নিতে পারেন। মোটামুটি প্রতি স্কোয়্যার ফুটে ২৫০-৩০০ টাকা খরচ পড়বে। দাম শুনেই যাঁরা আঁতকে উঠলেন, তাঁদের বলি, অনেকেই কিন্তু ইতালিয়ান মার্বেল শুধু ড্রইং রুমের জন্য বেছে নেন। এর মূল বৈশিষ্ট্য হল চকচকে ভাব। এই গ্লসি ভাব বজায় রাখতে হলে দিনে অন্তত দু’বার মেঝে মুছতে হবে। ময়লা জমে চকচকে ভাব হারিয়ে গেলে কিন্তু ইতালিয়ান মার্বেলের অর্ধেক কৌলীন্যই নষ্ট।
ভিনদেশি মার্বেলের হাতছানিতে যাঁরা মোটেই মজছেন না, তাঁরা এ দেশি মার্বেলও লাগাতে পারেন। ভারতীয় মার্বেলের মধ্যে মাকরানা মার্বেল, রাজনগর মার্বেল, কাটনি মার্বেল ইত্যাদি ক্রেতাদের ভারী পছন্দের। দামও ইতালিয়ান মার্বেলের চেয়ে বেশ অনেকটাই কম। তবে, মার্বেলের সাদা ভাব যত বাড়বে, দামও তত বেশি পড়বে।
শ্বেতপাথরের ঝকঝকে আমেজ পেতে চান, অথচ এতটা বেহিসেবি হতেও মন সায় দিচ্ছে না? এ ক্ষেত্রে টাইল্সই হতে পারে আপনার সেরা পছন্দ। ভারতে নিটকো, জনসন অ্যান্ড জনসন, এশিয়ান, ভারমোরা প্রভৃতি কোম্পানি নানা রকমের টাইল তৈরি করে। সবচেয়ে ভাল হয় ডিজাইনার টাইল লাগালে। কার্পেটের দরকারই পড়বে না মোটে। ঘরের মাঝখানে মেঝে জুড়ে যদি একখানা পেখম মেলা ময়ূর, বা উজ্জ্বল আলপনা বিছিয়ে থাকে, কেমন চমৎকার লাগবে ভাবুন তো?
|
|
এখন কেমিক্যাল ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করে এক ধরনের ভিট্রিফায়েড টাইল তৈরি হচ্ছে। এই টেকনোলজির সাহায্যে ভিট্রিফায়েড টাইল্স-এর ওপর একটা অদৃশ্য আস্তরণ ফেলে দেওয়া হয়। ফলে এই ধরনের টাইল জল এবং ধুলোময়লা প্রতিরোধ করতে পারে। তাই, এর ওপর চা-কফি বা কালি পড়ে গেলেও দাগ চট করে উঠে আসে, মেঝে নষ্ট হয় না।
তেল চকচকে টাইল্স দেখতে সুন্দর, কিন্তু যত্ন করা কষ্টকর। জোরে আসবাব নামালে কোণ ভেঙে যেতে পারে। ফলে অনেকেই ম্যাট ফিনিশ্ড টাইল্স ব্যবহার করেন। তবে এই টাইল কিছুটা নিষ্প্রভ। আসবাব বেশি থাকলে এমনিতেই ঘরে আলো কম খেলে। এর ওপর ম্যাট টাইল্স-এ আলো আরও কম লাগে। তাই ঘরের অবস্থান দেখে টাইল বাছবেন। তবে কিচেন বা বাথরুমের জন্য এই টাইল ভাল। সঙ্গে এটি অ্যান্টি স্কিড (যা সহজেই পিছলে যায় না) কিনা, পরখ করে নিন।
পুরনো, ক্ষতিগ্রস্ত মেঝের চটজলদি মেক-ওভার করতে হলে ভিনাইল ফ্লোরিং সেরা। কিচেন বা বাথরুমেও ভিনাইল ফ্লোরিংয়ের ব্যবস্থা করা যায়। তবে, অতিরিক্ত জল পড়লে এই মেঝে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সেই চেনা টাইল, পাথরের ঘেরাটোপে মেঝেকে আটকে না রাখতে চাইলে উড্ন ফ্লোর বানিয়ে নিতে পারেন। হার্ড উড বা সলিড উড দিয়ে তৈরি হবে এই মেঝে। টিক উড, মেপ্ল, ওক রং অনুযায়ী তৈরি করে নিন। তবে অবশ্যই কাঠের মেঝের রং বাছার আগে ঘরের আসবাবের রং কী, সেটা দেখে নিতে হবে। না হলে খাপছাড়া লাগতে পারে। অনেকের ধারণা, আর্দ্রতা কাঠের মেঝের ক্ষতি করে। ধারণাটি পুরো ঠিক নয়। মেঝে কতটা টেকসই হবে, তা আবহাওয়ার চেয়ে অনেক বেশি নির্ভর করে কেমন ভাবে তার দেখভাল করা হচ্ছে, তার ওপর। অল্প ভেজা কাপড় দিয়ে নিয়মিত মুছতে পারলে কাঠের মেঝে বহু দিন ঠিক থাকবে।
তবে কাঠের মেঝে বানাতে গেলে খরচটাও একটু বেশি পড়ে যায়। তাই ল্যামিনেটেড ফ্লোরিং-এর কথা ভাবতে পারেন। এতে সলিড উডের বদলে পাতলা পাতলা শিট মেঝের ওপর পেতে দেওয়া হয়। টিক, ওয়ালনাট, ওক কালারের উড ফিনিশ্ড টাইল্সও পাওয়া যায়। এগুলির যত্ন নেওয়াও সহজ।
ইউরোপে সম্প্রতি দারুণ জনপ্রিয় হয়েছে কর্ক ফ্লোরিং। ওকের মতো গাছের ছাল থেকে এগুলি তৈরি হয়। এই মেঝেতে ঘুণ ধরে না। তা ছাড়া এটি ফায়ার রেজিস্ট্যান্ট। তাই, কর্ক ফ্লোরিংয়ের উপযুক্ত জায়গা অবশ্যই রান্নাঘর। আস্তে আস্তে আমাদের দেশেও এর ব্যবহার শুরু হচ্ছে। |
সাক্ষাৎকার: পৌলমী দাস চট্টোপাধ্যায় |
|
|
|
|
|