১৮৮৭তে প্রকাশ পায় ৬৪৭টি বাংলা গানের সংকলন ‘সঙ্গীত-কল্পতরু’। মুখ্য সঙ্কলক যুবা গায়ক নরেন্দ্রনাথ দত্ত, উত্তরকালের স্বামী বিবেকানন্দ। সহযোগী বৈষ্ণবচরণ বসাকের বয়ানে ‘গ্রন্থের বেশির ভাগ গানের সংগ্রহে একনিষ্ঠ থেকেছেন নরেন্দ্রনাথ’। জাতীয়, ধর্মবিষয়ক, পৌরাণিক, ঐতিহাসিক, সামাজিক প্রভৃতি সাত পর্বে বিষয়ভেদে সাজানো হয়েছে এই সংকলন। ঠাঁই পেয়েছে পূর্বজ ভারতচন্দ্র-নিধুবাবু থেকে শুরু করে নরেন্দ্র-সমকালীন গিরিশচন্দ্র-রবীন্দ্রনাথের গান। সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে অ্যাকাডেমি থিয়েটার নিবেদন করল ‘সঙ্গীত কল্পতরুর গান’। দেবজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায় ও ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুগল পরিবেশনায় শোনা গেল বিবেক-গ্রন্থের ১৪টি সুনির্বাচিত গান। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাট্যভুক্ত রবীন্দ্রনাথের ‘জ্বলজ্বল চিতা’, বিদ্যাভুণী রচিত দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটকের প্রস্তাবনা-গীত ‘নীল বানরে সোনার বাংলা’, গিরিশচন্দ্র ঘোষের চৈতন্যলীলা নাটকের ‘কেশবকুরু করুণাদীনে’ প্রভৃতি। শুরুরও যেমন শুরু থাকে তেমন এই আসরের সূচনায় দেবজিত্ ও ঋদ্ধির কণ্ঠে গীত হয় বিবেকানন্দ রচিত দু’টি গান ‘খণ্ডন ভব বন্ধন’ আর ‘নাহি সূর্য নাহি জ্যোতি’। পরিবেশনার ফাঁকে ফাঁকে শোনা গেল বহু তথ্য সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের ধারাভাষ্যে। যন্ত্র সহযোগিতায় ছিলেন দেবাশিস সাহা, সৌম্যজিৎ ঘোষ, শঙ্কর সাহা এবং ঋদ্ধদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। মঞ্চপটে বিবেকানন্দের পূর্ণাবয়ব প্রতিকৃতিতে পরিবেশ গড়ে তোলেন বিলু দত্ত এবং আলোকশিল্পী বাবলু রায়।
|
সতেরো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ প্রথম বার বিলেতে আসেন ব্যারিস্টার হওয়ার জন্য। জানলেন ইউরোপীয় সঙ্গীত সম্পর্কে। মন দিয়ে শুনলেন কনসার্ট ও অপেরা আর চর্চা করলেন কণ্ঠসঙ্গীত। দেশে ফিরে আসার পর ‘বাল্মীকি প্রতিভা’, ‘কালমৃগয়া’ ও ‘মায়ার খেলা’ গীতিনাট্যের জন্য কবি রচনা করেছিলেন এমন কিছু গান যেগুলির মধ্যে স্পষ্টতই কিছু বিদেশি গানের ছায়া দেখা যায়। সম্প্রতি আইসিসিআর-এ আনন্দব্রতী আয়োজিত ‘সুরে সুরান্তরে’ কবির এই গানগুলি মূল গান সহ পরিবেশন করলেন শিঞ্জিনী আচার্য মজুমদার। সঙ্গে ভাষ্যকার হিসেবে ছিলেন শিল্পী শুভাপ্রসন্ন। অনুষ্ঠানের প্রথম অংশে ছিল মূল ইংলিশ, স্কটিশ ও আইরিশ গান সহ রবীন্দ্রসঙ্গীতগুলি। এই অংশে শিঞ্জিনী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পরিবেশন করলেন ‘ন্যান্সী লী’ ও ‘কালী কালী’, ‘অড ল্যাঙ জাইন’ ও ‘পুরানো সেই দিনের কথা’ প্রভৃতি গানগুলি। প্রতি গানের শুরুতে শুভাপ্রসন্ন উল্লেখ করলেন গান সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক তথ্য। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অংশে ছিল কবির সেই গানগুলি যেগুলি বিদেশি গানের অনুপ্রেরণায় রচিত হলেও মূল গানগুলিকে চিহ্নিত করা যায়নি। যেমন, ‘আলো আমার আলো’, ‘তোমার হল শুরু’, ‘হা রে রে রে’। এই গানগুলির ইংরেজি অনুবাদও শোনালেন শিঞ্জিনী।
|
সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়ের ব্যবস্থাপনায় সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট মঞ্চে রবীন্দ্রসঙ্গীতের অনুষ্ঠানের সূচনা করলেন দেবাশিস বসু। প্রথমে শিল্পী চন্দ্রাবলি রুদ্রদত্ত গাইলেন ‘চোখের আলোয় দেখেছিলেম’। পরে গানের আমেজ পরিপূর্ণ হল প্রমিতা মল্লিক, চিত্রলেখা চৌধুরীর গানে। অন্যান্য শিল্পীর মধ্যে ছিলেন জয়তী চক্রবর্তী, প্রমিত সেন, পূবালী দেবনাথ, শিপ্রা বসু, সৌনক চট্টোপাধ্যায়, মাধবী দত্ত, শিঞ্জিনী আচার্য মজুমদার, গৌতম মিত্র প্রমুখ। |