মাটির দু’-তিন ফুট নীচ থেকে ছোট বাটি কিংবা হাঁড়ি করে জল নিয়ে ভরতে হচ্ছে বালতিতে। কখনও বা জল ভরতে ভরতেই জল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কারণ, আগের মতো নির্দিষ্ট সময় ধরে আর জল আসছে না। ফলে দেখা দিয়েছে পানীয় জলের সঙ্কট। বেহালার ১২২ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে গত প্রায় এক বছর ধরে ছবিটা এ রকমই।
১২২ নম্বর ওয়ার্ডের রাজা রামমোহন রায় রোডের উপরে উদয়াচল, পঞ্চাননতলা, মুচিপাড়া থেকে শুরু করে সোদপুর এলাকার কে কে মুখার্জি রোড, উস্তাদ আলি খান সরণির বিভিন্ন বাড়িতে দেখা দিয়েছে জলের জন্য তীব্র হাহাকার। উদয়াচলের বাসিন্দাদের অভিযোগ, বছরখানেক আগেও এই সমস্যা ছিল না। উদয়াচলেরই এক বাসিন্দা বললেন, “পাইপে এখন দু’টি কল লাগাতে হয়েছে। আগে উপরের কলে জল পড়ত। তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেই আরও নীচে এই দ্বিতীয় কল লাগাতে হয়েছে। কিন্তু তাতেও জল ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না।” |
শুধু মাটির নীচের কল নয়, জলের ট্যাঙ্কগুলিও অর্ধেক মাটির তলায়, অর্ধেক মাটির উপরে। কারণ, পুরসভার জল ধরে রাখতে ট্যাঙ্কগুলি ছাদের উপর করলে তাতে জল পৌঁছবে না। তাতেও অবশ্য কোনও লাভ হয়নি। নীচে পাইপলাইন করেও অধিকাংশ বাড়িতে একফোঁটা জলও পৌঁছয় না। বিশেষত বড় রাস্তা থেকে যে সব রাস্তা অনেক ভিতরে, সেগুলির ক্ষেত্রে এই সমস্যা অনেক বেশি প্রকট বলে অভিযোগ।
পুরসভার এই ওয়ার্ডের প্রতিটি বাড়িতেই তাই কুয়ো রয়েছে। আছে রাস্তার ধারের নলকূপ। পুরসভার জল না এলে ভরসা সে সবই। জানা গেল, পুরসভার জল আসার সময় সকাল সাতটা থেকে ন’টা, বিকেলে চারটে থেকে সাড়ে ছ’টা। কিন্তু বছরখানেক ধরে মুচিপাড়া, পঞ্চাননতলা, উদয়াচলে সেই সময়সীমা কমে সকালে মাত্র দেড় ঘণ্টার মতো আর বিকেলে কোথাও পনেরো মিনিট তো, কোথাও আধ ঘণ্টা জল আসছে বলে অভিযোগ। আবার, উস্তাদ আমির আলি খান সরণি, কে কে মুখার্জি রোডের ভিতরের এলাকাগুলিতে পুরসভার পানীয় জল পৌঁছয়ই না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
বাসিন্দাদের অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর সোমা চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “আমার এলাকার অনেক জায়গাতেই পানীয় জলের সঙ্কট রয়েছে। গার্ডেনরিচে যে কাজ চলছে, সেটি সম্পূর্ণ হলে দাসপাড়া বুস্টার এবং সিরিটি বুস্টার পাম্পিং স্টেশনে জলের পরিমাণ বাড়বে। তখনই এই এলাকাগুলিতে জল সরবরাহ বাড়ানো যাবে।”
এ প্রসঙ্গে পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের ডিজি বিভাস মাইতি বলেন, “প্রত্যক্ষ ভাবে না হলেও পরোক্ষ ভাবে এই দুই পাম্পিং স্টেশনে পুরোমাত্রায় জল বুস্টার করা শুরু হলে জল সরবরাহের পরিমাণ বেড়ে যাবে।” |