ক্রেতা-বিক্রেতার কথাবার্তা পুরোটাই ইশারায়। মোটরবাইকে সওয়ার ক্রেতা এসে যদি দাঁড়ান নির্দিষ্ট জায়গায়, তা হলে ইশারাটুকুরও দরকার পড়ে না আর। বিক্রেতা বুঝে নেন খদ্দের হাজির। ক্রেতার হাতে মাদক পৌঁছে দিতে কাজে লাগানো হয় বারো থেকে সতেরো বছর বয়সী কিশোরদের। অভিযোগ, সেই ছেলেদের হাতে হাতে মাদক পৌঁছে যায়
স্কুল-কলেজের অন্দরেও।
পুলিশ-প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে এ ভাবেই অবাধে গাঁজা, চরস, হেরোইনের কারবার চলছে ডায়মন্ড হারবার রোড সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, নেশাখোরদের উপদ্রবে এলাকায় চুরি-ছিনতাই লেগেই রয়েছে। ডায়মন্ডহারবার রোড লাগোয়া বেহালা চৌরাস্তা, সখের বাজার, শকুন্তলা পার্ক, শীলপাড়া, বুড়োঅশ্বত্থতলা, এস এন রায় রোড, তিন নম্বর চ্যাটার্জি কলোনি, বকুলতলার মোড়, ঠাকুরপুকুর-সহ বিভিন্ন এলাকা কার্যত নেশাখোরদের ‘মুক্তাঞ্চল’। বেহালা এলাকায় চুরি-ছিনতাই নিত্য-নৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। |
কী ভাবে চলে মাদক কেনাবেচা?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাদকাসক্ত জানান, গাঁজা, চরস, হেরোইন বিক্রির জন্য বিভিন্ন এলাকায় ‘পেডলার’ রয়েছে। তাদের মাধ্যমেই এই সব মাদকদ্রব্য বিক্রি হয়। দিনে এক জন নেশাগ্রস্তের চার থেকে ছয় পুরিয়া হেরোইন দরকার। প্রতি পুরিয়ার দাম চল্লিশ থেকে ষাট টাকার মধ্যে। হেরোইনে আসক্তদের সাধারণ ভাবে দেখে বোঝা যায় না তাঁরা নেশাগ্রস্ত কি না। কিন্তু সবচেয়ে বেশি নেশা হয় এতেই। হেরোইনের নেশায় খরচ পড়ে দিনে কয়েকশো টাকা। ওই মাদকাসক্তের দাবি, নেশার টাকা জোগাতে ধনী-গরিব নির্বিশেষে চুরিতে হাত পাকিয়ে ফেলে।
এলাকাবাসীরা জানালেন, পার্কের আড়ালে, রাস্তার পাশে ছোট ছোট গুমটিতে চলে মাদক কেনাবেচা। স্থানীয় বাসিন্দা ঈশান রায়ের কথায়: “চুরি-ছিনতাই করতে গিয়ে অনেক বার পড়শি বা পথচারীদের হাতে ধরা পড়েছে অপরিচিত যুবকেরা। পুলিশের হাতে তুলেও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সমস্যার কোনও সুরাহা হয়নি।”
মাদক কারবারের এই রমরমার বিষয়ে কলকাতা পুলিশের ডিসি (সাউথ ওয়েস্টার্ন ডিভিশন) সুব্রত মিত্র বলেন, “বেহালা এলাকার কোথাও প্রকাশ্যে সংগঠিত ভাবে মাদক বিক্রি হয় না। কিন্তু অসংগঠিত ভাবে কেউ কিছু করলে তা চিহ্নিত করা কঠিন কাজ। তবে চুরি-ছিনতাইয়ের অভিযোগে অভিযুক্তদের পঞ্চাশ শতাংশই হয় নেশাগ্রস্ত বা মাদকাসক্ত।”
তা হলে কি লুকিয়ে-চুরিয়ে চলতেই থাকবে মাদক ব্যবসা? লালবাজারের এক পুলিশকর্তার দাবি ‘‘বিষয়টি সম্পর্কে সবিস্তার খোঁজখবর নিয়ে অবশ্যই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |