দক্ষিণ কলকাতা: গড়িয়া, সোনারপুর
কালিকাপুর
ভরসা সেই ‘নিধিরাম’
ক জন মাত্র চিকিৎসক। তাঁর ভরসাতেই চলছে সোনারপুর সংলগ্ন কালিকাপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগ মিলিয়ে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরে নির্ভরশীল সংলগ্ন এলাকার প্রায় দেড় লক্ষ বাসিন্দা। আর পাঁচটা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তুলনায় চকচকে চেহারা হলেও এই হাসপাতাল নিয়ে বাসিন্দাদের অভিযোগের শেষ নেই।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ধরনের একটি দশ শয্যার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালানোর জন্য ন্যূনতম দু’জন চিকিৎসক, ছ’জন নার্সিং স্টাফ, ছ’জন গ্রুপ ডি স্টাফ, তিন জন সাফাইকর্মী প্রয়োজন। কিন্তু এক জন চিকিৎসক, দু’জন নার্সিং স্টাফ এবং এক জন গ্রুপ ডি স্টাফ দিয়েই কালিকাপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কাজ দিনের পর দিন চলছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। যদিও এ বিষয়ে সোনারপুরের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণব মজুমদার কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
অথচ, কালিকাপুর এক ও দুই, প্রতাপনগর এক, চাকবেড়িয়া, মকরমপুর, নারায়ণপুর, কমলপুর, সাহেবপুর, রায়পুর, খড়িবোদা, জাফরপুর, হাসানপুর, চম্পাহাটি এবং সাউথ গড়িয়া এলাকার বাসিন্দারা অসুস্থ হলে প্রথমে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই আসেন। তাঁদের অভিযোগ, অধিকাংশ সময়েই রোগীদের ‘রেফার’ করে দেওয়া হয় সুভাষগ্রাম কিংবা বারুইপুর হাসপাতালে। এলাকাবাসীরা জানালেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হাল ফেরানোর জন্য বিভিন্ন মহলে আবেদন জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক জন চিকিৎসকের ২৪ ঘণ্টা থাকার কথা, কিন্তু থাকেন না। সারা দিন স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলা থাকার কথা থাকলেও তা থাকে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাও অত্যন্ত খারাপ। জেনারেটরের ব্যবস্থা নেই। লোডশেডিং হলে রোগীদের গলদঘর্ম অবস্থায় কাটাতে হয়। স্থানীয় বাসিন্দা সুনীত বিশ্বাসের কথায়: “এই হাসপাতালে প্রসবের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু যথাযথ ‘লেবার রুম’ নেই। পর্দা দিয়ে আড়াল করা একটা ঘরকেই ‘লেবার রুম’ বলে চালানো হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনেক বার ব্যবস্থা করার কথা বলা হলেও লাভ হয়নি।”
সাধারণত জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়েরিয়া, ছোটখাটো চোট-আঘাতে স্থানীয় বাসিন্দারা এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান। টিকাকরণ, রক্ত ও কফ পরীক্ষা, যক্ষ্মা, কুষ্ঠ এবং চোখের চিকিৎসাও হয় এখানে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বেশির ভাগ সময়ে এই কেন্দ্রে এই সব রোগের ওষুধও মেলে না। বাইরে থেকে বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়। চিকিৎসকের পাশাপাশি এক জন ফার্মাসিস্টও আছেন এখানে। এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা জানালেন, ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক কোনও দিন অনুপস্থিত থাকলে ফার্মাসিস্টই রোগীদের দেখেন। কাঁটা-ছেড়ার ক্ষেত্রে অনেক সময়ে হাসপাতালের চিকিৎসকের বদলে অন্য কর্মীরাই সেলাই করে দেন বলেও অভিযোগ করেন তাঁরা।
বাসিন্দারা আরও জানালেন, সম্প্রতি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ঘরগুলো নতুন করে মেরামত হলেও চিকিৎসা পরিষেবার কোনও উন্নতি হয়নি। স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে আলোর ব্যবস্থা থাকলেও রাতে সেগুলো জ্বালানো হয় না। ফলে অন্ধকারের সুযোগে অনেক বহিরাগত ভিড় জমান। নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলতেও কিছু নেই বলেও অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
কালিকাপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা সোনারপুর (দক্ষিণ) বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক তৃণমূলের জীবন মুখোপাধ্যায় বিভিন্ন সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘‘এই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির যে সব সমস্যা রয়েছে, তা আমি স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিমন্ত্রীকে জানিয়েছি। এই কেন্দ্রের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য আমার বিধায়ক তহবিল থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা অনুমোদনও করেছি।”
স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মীর অভাবের অভিযোগ অবশ্য মানছেন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাস। তবে তাঁর বক্তব্য, “অনেক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই লোকজনের ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু আমাদের এখন লক্ষ্য হল, প্রতিটি ব্লকে একটি করে স্বাস্থ্যকেন্দ্র ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নীচের স্তরে যে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি রয়েছে, তার আউটডোরগুলোকে ঠিকমতো চালানো।”

ছবি: পিন্টু মণ্ডল




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.