যে দিন অস্ত্রোপচার হবে, তার আগের দিন সন্ধ্যায় রোগীর পরিবারকে রক্ত জোগান দিতে বললেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মানিকতলা কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়ে লাইন দেখে মাথায় হাত রাজারহাটের বাসিন্দা অসীম মণ্ডলের। শহরের নানা প্রান্ত ঘুরে শেষমেশ একটি বেসরকারি সংস্থায় গিয়ে রক্ত জোগাড় হল।
ঘটনাস্থল বিধাননগরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল। তবে, এমন অভিজ্ঞতা শুধু বেসরকারি নয়, এলাকার সরকারি হাসপাতালের ক্ষেত্রেও একই। সল্টলেক, দক্ষিণদাঁড়ি, লেকটাউন, বাঙুর, দমদম পার্ক, বাগুইআটি, রাজারহাট-নিউটাউন, মহিষবাথান, সর্দারপাড়া, পোলেনাইট, বারোকপাট সমেত বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেরই অসীমবাবুর মতো অভিজ্ঞতা হয়েছে। কারণ, রক্তের জন্য সরকারি ভরসা বলতে মানিকতলা কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্ক। অন্যথায় বেশি অর্থে বেসরকারি সংস্থায় গিয়ে রক্ত জোগাড় করা। কিন্তু মানিকতলার ব্লাড ব্যাঙ্কে প্রতি দিন যে পরিমাণ ভিড় থাকে, তাতে অনেকেই রক্ত না পেয়ে ফিরে যান বলে অভিযোগ। দীর্ঘ দিন ধরেই এই সমস্যা চলছে।
অবশেষে বিধাননগর পুরকর্তৃপক্ষ একটি ব্লাড ব্যাঙ্ক তৈরির পরিকল্পনা করছেন। পুরকর্তৃপক্ষের কথায়, বাসিন্দারা দীর্ঘ দিন ধরে ব্লাড ব্যাঙ্কের দাবি জানিয়ে চলেছেন। এ বিষয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে তাঁরা জানান। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরও জানিয়েছে, প্রস্তাব পেলে তারা বিবেচনা করবে। |
উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ, বসিরহাট, ব্যারাকপুর-সহ মহকুমা ও জেলা হাসপাতালে ব্লাড ব্যাঙ্কের ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানান জেলা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ব্যতিক্রম বিধাননগর মহকুমা হাসপাতাল। এখানে ব্লাড ব্যাঙ্কের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা থাকলেও আজ পর্যন্ত এই সংক্রান্ত কোনও কাজই হয়নি। এমনকী, এখানে একটি ব্লাড স্টোরেজ ইউনিট করার প্রস্তাবও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে পাঠানো হয়েছে বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর। সমস্যার কথা স্বীকার করে উত্তর ২৪ পরগনার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুকান্ত শীল বলেন, ‘‘কতগুলি সরকারি পদ্ধতি আছে। রাজ্য সরকার যদি ব্লাড ব্যাঙ্কের তৈরির সিদ্ধান্ত নেন, তা হলে কোনও সমস্যাই থাকবে না। একটি ব্লাড স্টোরেজ ইউনিট তৈরির প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু কার্যকরী হয়নি।’’
মহিষবাথানের বাসিন্দা তারাপদ হালদার বলেন, ‘‘আমাদের মতো পিছিয়ে পড়া এলাকার বাসিন্দাদের সরকারি হাসপাতাল ছাড়া গতি নেই। সে জন্য বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালই ভরসা। কিন্তু রক্ত জোগাড় করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সরকার ব্যবস্থা নিক।’’ সল্টলেকে বাসিন্দাদের একটি সংগঠন বিধাননগর (সল্টলেক) ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, ‘‘শুভ প্রচেষ্টা। পুরসভাকে অভিনন্দন। ব্লাড ব্যাঙ্কের প্রয়োজন আছে। কিন্তু পুরকর্তৃপক্ষ যদি ব্লক কমিটিগুলিকে যুক্ত করে পরিকল্পনা কার্যকরী করেন তা হলে ভালো হয়।’’ বিধাননগর পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তীর কথায়: ‘‘বিধাননগরের ক্ষেত্রে এটি গুরুতর সমস্যা। দীর্ঘ দিন ধরে বাসিন্দারা এই দাবি জানাচ্ছেন। আমরা ব্লাড ব্যাঙ্ক তৈরির পরিকল্পনা করছি। রাজ্য সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হবে।’’
কিন্তু এত দিন এই বিস্তীর্ণ এলাকায় পৃথক কোনও ব্লাড ব্যাঙ্ক তৈরি হল না কেন? স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, জনসংখ্যা, আয়তন, হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা-সহ বেশ কয়েকটি বিষয়ের নিরিখে ব্লাড ব্যাঙ্ক তৈরির চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। রাজ্য, কেন্দ্রীয় সরকার ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে রাজ্যে মোট ১০৯টি ব্লাড ব্যাঙ্ক রয়েছে। কিন্তু বাসিন্দাদের দাবি, জনসংখ্যা বাড়ছে,
বসতিও বাড়ছে। তাই ব্লাড ব্যাঙ্কের সংখ্যা বাড়ানো হোক।
সমস্যার কথা স্বীকার করে রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘হাসপাতালে ব্লাড ব্যাঙ্ক থাকার প্রয়োজন আছে। কিন্তু এ নিয়ে একটি সমস্যা আছে। বিধাননগর পুরকর্তৃপক্ষ পুর হাসপাতালে ব্লাড ব্যাঙ্ক করলে আমাদের এক্তিয়ারে পড়ে না। তবে মহকুমাশাসক কিংবা পুরসভার তরফে প্রস্তাব এলে খতিয়ে দেখে বিবেচনা করা হবে।’’ |