পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসত
দক্ষিণ দমদম
আতঙ্কের জঞ্জাল-ট্রাক
বিশাল চেহারার ট্রাকগুলোকে রাস্তায় দেখলেই সিঁটিয়ে থাকেন পথচারীরা। একটু অসাবধান হলেই সোজা ঘাড়ের উপরে এসে পড়বে। অভিযোগ, জনবহুল পথে বেপরোয়া গতিতে চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে। দক্ষিণ দমদম পুরসভার জঞ্জাল সংগ্রহের এই ট্রাকগুলি এখন রীতিমতো বিভীষিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে এলাকাবাসীর কাছে। অভিযোগ উঠেছে, পুরসভাকে বার বার বিষয়টি জানিয়েও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ভিড়ে ঠাসা রাস্তা ধরে প্রচণ্ড গতিতে চলতে গিয়ে লজ্ঝড়ে চেহারার ট্রাকগুলি মাঝেমধ্যেই নিয়ন্ত্রণ হারায়। দুর্ঘটনার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ থেকে ট্রাফিক পুলিশকর্মী কেউই। কয়েক দিন আগে এয়ারপোর্ট এক নম্বর গেটের কাছে কর্তব্যরত এক ট্রাফিক পুলিশকে ধাক্কা মারে পুরসভার এই জঞ্জালবাহী ট্রাক। শুধু ওই ট্রাফিককর্মীকেই নয়, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেটি ধাক্কা মারে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অটোকেও। ঘটনাস্থলেই মারা যান ওই ট্রাফিক পুলিশকর্মী। অটোচালক ও এক যাত্রী গুরুতর জখম হন। জঞ্জালের ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যুর ঘটনা আগেও ঘটেছে। ছোটখাটো দুর্ঘটনাও লেগেই থাকে।
দক্ষিণ দমদম পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, পুর এলাকার বিভিন্ন ভ্যাট থেকে জঞ্জাল তোলার ট্রাক রয়েছে ২২টি। তার মধ্যে রোজ চলে ১৫-১৬টি। সারা দিন ধরে এই ট্রাকগুলি বিভিন্ন এলাকার ভ্যাট থেকে জঞ্জাল সংগ্রহ করে প্রমোদনগর ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ফেলে আসে। এক একটি ট্রাক প্রতি দিন তিন-চারটি ট্রিপ করে।
অভিযোগ, ট্রাকগুলোর অবস্থা এমনিতেই লজ্ঝড়ে। বিশেষত চাকার অবস্থা খুবই খারাপ। অনেক গাড়ির হর্ন নেই। কোনওটা এতটাই দূষণ ছড়াতে ছড়াতে যায় যে, কালো ধোঁয়ায় ভর্তি হয়ে যায় চারপাশ। এই জঞ্জালবাহী ট্রাকগুলি কালিন্দী বাজার, শ্রীভূমি বাজার, এস কে দেব রোড, বাঙুর বাজার, দমদম পার্ক বাজার, দমদম রোডের বাগজোলা খালপাড়-সহ বিভিন্ন এলাকার ভ্যাট থেকে জঞ্জাল সংগ্রহ করে। তার পরে আর এন গুহ রোড, গোরা বাজার, সেন্ট্রাল জেল, নতুন বাজার, সুভাষনগর এলাকা দিয়ে প্রমোদনগর ডাম্পিং গ্রাউন্ডে পৌঁছয়।
আর এন গুহ রোডের বাসিন্দা দেবাশিস বসু বলেন, ‘‘একেই গাড়িগুলোর অবস্থা খুব খারাপ। তার মধ্যে প্রচণ্ড গতিতে চলাচল করে। ফলে নিয়ন্ত্রণ হারাতেই পারে। কিছু দিন আগে আমাদের এলাকায় একটা জঞ্জালের ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফুটপাথে উঠে পড়েছিল। ভাগ্য ভাল, দুপুরবেলায় ফুটপাথে কেউ ছিল না। তা না হলে সে দিন বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত।’’ গোরাবাজার এলাকার আর এক বাসিন্দা অমল চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘দেখলে মনে হয় গাড়িগুলোর টায়ার যে কোনও সময়ে খুলে পড়ে যাবে। অনেক গাড়ির আবার নম্বর প্লেট পড়া যায় না। দূর থেকে এই গাড়িগুলো দেখলেই ভয়ে সাবধান হয়ে যাই।’’
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, গাড়িগুলির অবস্থা এতটাই বেহাল যে প্রমোদনগর ডাম্পিং গ্রাউন্ডে যাওয়ার পথে রাস্তাতেই অনেক সময়ে কিছুটা জঞ্জাল পড়ে যায়। সুভাষনগর এলাকার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, জঞ্জালবাহী ট্রাকগুলি এলাকা দিয়ে যাওয়া মানেই দুর্গন্ধ আর কালো ধোঁয়ার দূষণ। দুর্ঘটনার আশঙ্কা তো রয়েছেই। বার বার কাউন্সিলরদের এ ব্যাপারে অভিযোগ করা সত্ত্বেও কোনও ফল হয়নি।
কেন জঞ্জালবাহী ট্রাকের মেরামতি ও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না? দক্ষিণ দমদম পুরসভার বক্তব্য, এই ট্রাকগুলি তাদের নয়। এজেন্সির মাধ্যমে চুক্তির ভিত্তিতে চলে। তাই রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট এজেন্সির। দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারপার্সন অঞ্জনা রক্ষিত বলেন, ‘‘কয়েকটি গাড়ির অবস্থা সত্যিই খুব খারাপ। আমরা এজেন্সির সঙ্গে সম্প্রতি মিটিং করেছি। গাড়িগুলো বদলানো ও রক্ষণাবেক্ষণ করার কথা বলা হয়েছে।’’
চেয়ারম্যান পারিষদ (জঞ্জাল সাফাই) প্রবীর পাল বলেন, ‘‘গাড়িগুলোকে এক দিনের জন্য মেরামত করতে পাঠালেই এলাকায় ভ্যাট থেকে জঞ্জাল ঠিকমতো সাফ হবে না। তখন আবার অন্য সমস্যা। তবু আমরা এজেন্সিকে বলেছি যতটা সম্ভব সাফাইয়ের কাজ ঠিক রেখে একেবারে লজ্ঝড়ে গাড়িগুলো বদলে ফেলতে। সেই প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে।’’

ছবি: সুদীপ ঘোষ




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.