|
মনোরঞ্জন ২... |
|
আওয়ারা জিৎ |
তাঁর ফেলে আসা
জীবন। কালীঘাটের পুরনো পাড়ায়।
নতুন ছবি ‘আওয়ারা’ মুক্তির আগে।
নায়ক মাতলেন বহু চেনা আওয়ারাগিরিতে।
গল্প করলেন
ইন্দ্রনীল রায়-এর সঙ্গে। |
|
|
আমার আওয়ারাগিরি শুরু এই কালীঘাট রোডের বাড়ি থেকেই। আজ ভাবলে অবাক লাগে ‘সাথী’র শ্যুটিং করতে এই বাড়ি থেকেই স্কুটারে করে স্টুডিও যেতাম। তারপর হরদা’ (হরনাথ চক্রবর্তী)-রা বললেন ট্যাক্সি করে আসতে। ‘সাথী’ রিলিজের ঠিক আগেই বাড়ি পাল্টে আলিপুরে চলে যাই। এখানেই ক্রিকেট, ফুটবল, সারারাত আড্ডাকোনও আওয়ারাগিরি বাদ যেত না। |
|
আজ ভাবলে অবাক লাগে, আওয়ারাগিরি করার সময় কত রকম কাজ করতাম। কলকাতায় বোধহয় আমি দ্বিতীয় ব্যক্তি যে কেব্ল টিভির ব্যবসায় নেমেছিলাম। লোকের বাড়ি বাড়ি কানেকশন দিতাম। এর ছাদ, ওর কার্নিশে দাঁড়িয়ে তার লাগাতাম। তারপর যখন ডিশ অ্যান্টেনা এল, তখন যতটা লগ্নি করা উচিত, তা ছিল না বলে ছেড়ে দিলাম। তারপর বিল্ডিং মেটিরিয়াল সাপ্লাইয়ের ব্যবসা করতাম। প্রথম আয়টা আজও মনে আছে। দু’ লরি স্টোন চিপ্স বিক্রি করে ৫০০ টাকা প্রফিট করেছিলাম। একসময়ে বদমায়েশি কম করিনি। ইয়ামাহা-আরএক্স ১০০ বাইকে আমার পেছনের সঙ্গী হেলমেট পরেনি। পার্ক সার্কাসে ধরা পড়েছি। তখন ওয়ান-ওয়ে রাস্তা। পুলিশের ডিউটি চেঞ্জ হবে। পুলিশরা যখন নিজেদের মধ্যে ডিউটি হ্যান্ডওভার করতে ব্যস্ত সেখান থেকে বাইক নিয়ে পালিয়েছি। এত জোর চালিয়েছি যে রাস্তার লোক হাততালিও দিয়েছে। |
|
|
|
এই সিঁড়িটা ছাদে যাওয়ার। এখান থেকে প্রচুর বার ঝড়ের গতিতে নেমেছি যখন শুনেছি কালীঘাটে কোনও বড় ফিল্মস্টার এসেছেন। অপর্ণা সেন, রাখী, সুলক্ষণা পণ্ডিত, ঋষি কপূর... এঁদের সবাইকে প্রথম দেখি কালীঘাট মন্দিরে। |
|
যখন আওয়ারাগিরি তুঙ্গে, তখন লেক রোডের উদিপি হোম ছিল আমার রোজের ঠিকানা। প্রায় রোজই ক্যারম খেলে এখানে আড্ডা মারতে আসতাম। কফি আর ইডলি ছিল আমার সবচেয়ে পছন্দের। যখন টাকা থাকত, তখন দিতাম। যখন থাকত না, দিতাম না। এত আওয়ারাগিরি করতে পারতাম কারণ দোকানটার মালিক রঘু আমার বন্ধু। |
|
|
১৯৯৬-তে বেঙ্গল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম ক্যারমে। তার জন্য প্র্যাকটিস কম করতাম না। সব হত কালীঘাটের এই ক্লাবে-- কালীঘাট গেম্স কর্নার। আজ এত দিন পর এখানে এসে সব স্মৃতি যেন ফিরে ফিরে আসছে। দুপুর দু’টো নাগাদ ঢুকতাম। বেরোতাম রাত ন’টায়। বর্ধমান, নদিয়া, পুরুলিয়াযেখানেই কম্পিটিশন থাকত পৌঁছে যেতাম। এমনও দিন গেছে, বাড়িতে বলেছি রাত দশটায় ফিরব, ফিরেছি ভোর চারটেয়। সদর দরজায় তখন মা-বাবা দাঁড়িয়ে। আওয়ারাগিরির কোনও সীমা ছিল না। ক্যারমের জন্য একবার পুলিশের গালিও খেয়েছিলাম। বাইকে যাচ্ছি। হেলমেট ছিল না। সার্জেন্ট ধরেছিল আমায়। অনেক বুঝিয়েছিলাম যে ক্যারম টুর্নামেন্ট খেলতে যাচ্ছি, তাই তাড়াহুড়োতে হেলমেট পরতে ভুলে গেছি। বেঙ্গল ক্যারম অ্যাসোসিয়েশনের কার্ডও দেখিয়েছিলাম। সার্জেন্ট সব দেখে বলেছিলেন, “খেলছ তো ক্যারম, কোনও ক্রিকেট, ফুটবল নয়। তার জন্য এত তাড়া কীসের?” খুব মন খারাপ হয়েছিল সেদিন। |
|
স্টার হওয়ার পর আমার আওয়ারাগিরিতে নবতম সংযোজন হয়েছিল পুল অ্যাকাডেমিতে পুল খেলা। দিন নেই, রাত নেই পুল খেলে চলতাম। কত সন্ধেবেলা যে এখানে পুল খেলেছি, তার কোনও ইয়ত্তা নেই। |
দেওয়ালে টাঙানো ওপরের ছবিটা আমার প্রথম পোর্টফোলিও শ্যুট-এর। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের বাগানে ছবিটা তুলেছিল আমার এক বন্ধু। তার নীচেরটা পাড়ার এক স্টুডিওতে তুলিয়েছিলাম। তখন স্টাইল ছিল একটা বড় ছবির মধ্যে তিনটে করে ছবি সুপার-ইম্পোজ করার। আজ এত শু্যট করি, এই দু’টো ছবি ভুলতে পারিনি। |
|
|
আমাদের বাড়ির ছাদ থেকে কালীঘাট মন্দির দেখা যায়। মন্দির থেকে বেরিয়ে বাঁ দিকে প্রথম বাড়িটাই আমাদের। এই পাড়াতে এমন কোনও অনুষ্ঠান ছিল না, যাতে আমি যোগ দিতাম না। সবাই মিলে ঘুড়ি ওড়ানো, মাঞ্জা বানানো, বাদ নেই কিছুই। এমনকী শেওড়াফুলি থেকে টানা পাঁচ বছর তারকেশ্বর গেছি ভোলে বাবার দর্শন করতে। আজকে যখন বাংলা সিনেমা করি, দর্শক আমার সঙ্গে ‘কানেক্ট’ করে, তখন কোথাও যেন মনে হয় তার পুরো ক্রেডিটটাই প্রাপ্য কালীঘাটের এই পাড়াটার। সিন্ধি হয়েও তাই আমি বাঙালি। আজকে আমার বাড়ির সামনে আমার পরের ছবির পোস্টার দেখে সত্যি অবাক লাগে। মা কালীর আশীর্বাদ না থাকলে ১২ বছরে কারওর জীবন এতটা পাল্টাতে পারে না। যে ‘আওয়ারা’ আমি প্রথমে বাজাজ সুপার আর তারপর ইয়ামাহা চালিয়ে ঘুরতাম, আজকে সে অডি কিউ সেভেন গাড়ি নিয়ে ঢোকে। লাইফ ইজ বিউটিফুল। |
ছবি তুললেন সুমন বল্লভ |
|