|
|
|
|
স্বাস্থ্যে কেলেঙ্কারির তদন্ত তালিকায় নতুন সংযোজন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
রক্ত-পরীক্ষার কিট নিয়ে দুর্নীতির যে ঘটনা বামফ্রন্ট আমলে ঘটেছিল, সে সম্পর্কে নতুন করে তদন্ত করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। বাম জমানার তিনটি ‘স্বাস্থ্য কেলেঙ্কারি’ নিয়ে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে তদন্তে নেমেছে। তার সঙ্গে জুড়ল কিট-কেলেঙ্কারির এই পুনর্তদন্ত।
২০০৪-এ একটি সংস্থা রাজ্যকে এড্স-জীবাণু পরীক্ষার এক লক্ষ সরঞ্জাম (মনোজাইম কিট) সরবরাহ করেছিল। প্রতিটার দাম পড়ে ২০ টাকা। পরে দেখা যায়, সেগুলোর মেয়াদ পেরিয়ে গিয়েছে। তার আগেই অবশ্য বহু কিট বিভিন্ন হাসপাতালে পৌঁছে গিয়েছিল। এমনকী, তা দিয়ে বেশ কিছু রক্তের নমুনাও পরীক্ষা করা হয়।
তদানীন্তন বাম সরকার ঘটনাটির তদন্তের নির্দেশ দেয়। কিন্তু মেয়াদ-উত্তীর্ণ মনোজাইম কিট খরিদের সঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের কোন কোন অফিসার জড়িত, তদন্তে তা ধরা পড়েনি। উপরন্তু সরকারি একটি ল্যাব ওই কিটকে ‘ত্রুটিহীন’ সার্টিফিকেট দেয়। স্বাস্থ্য-কর্তাদের অনেকে তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে তখন প্রশ্ন তুলেছিলেন। রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পরে খোদ মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতার নির্দেশে বিষয়টি নিয়ে ফের তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত চালাচ্ছে তৃণমূল চিকিৎসক সংগঠনের গড়া একটি কমিটি। তারা রিপোর্ট জমা দেবে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরেই।
বাম আমলের আরও তিনটি স্বাস্থ্য-দুর্নীতি নিয়ে এখন সরকারি পর্যায়ে তদন্ত চলছে। স্বাস্থ্য দফতরের হুঁশিয়ারি: ক্রমশ আরও কিছু ‘কেলেঙ্কারি’ তারা সামনে নিয়ে আসবে। সামগ্রিক ভাবে পুরো ব্যাপারটায় যে হেতু দফতরের একাধিক কর্তার নাম জড়িত, তাই ‘কেঁচো খুঁড়তে সাপ’ বেরোনোর আশঙ্কাও করছেন অনেকে। এক কর্তার কথায়, “জার্মান সাহায্যপ্রাপ্ত প্রকল্পে যন্ত্রপাতি সরবরাহের জন্য সবচেয়ে কম দর দিয়েছিল রাজ্য সরকারি সংস্থা ওয়েবেল। অথচ বরাত পায় বেশি দর হাঁকা বেসরকারি সংস্থা। দু’টির দামের ফারাক প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা। ২০১০-এর এই অনিয়মও এখন সামনে এসেছে।”
বস্তুত স্বাস্থ্য বাজেটের দিন শাসকদলের বিধায়কেরা অভিযোগ তুলেছিলেন, বাম আমলে রাজ্যের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। ব্রিটিশ সরকার ও বিশ্বব্যাঙ্কের অর্থসাহায্যে চলা বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে যেমন তদন্ত শুরু হয়েছে, তেমন রাজ্য এড্স প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (স্যাক্স) এবং মেডিক্যাল সার্ভিস কর্পোরেশনের ‘দুর্নীতি’রও তদন্ত চলছে। প্রয়োজনে কিছু ক্ষেত্রে সিআইডি-তদন্তের দাবিও ওঠে শাসকদলের তরফে। বিরোধী দলনেতা তথা প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্র পাল্টা বলেন, সিবিআই তদন্তেও তাঁরা প্রস্তুত।
নতুন সরকার গঠনের পরেই স্যাক্সে বিবিধ আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে তদন্তাদেশ দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে লাখ লাখ টাকা নয়ছয়ের নালিশ শুধু ওষুধ বা সরঞ্জাম কেনাকাটা ঘিরে নয়। সরকারি অর্থে কর্তাদের নিত্য ভুরিভোজ ও নিয়মিত সপ্তাহান্তে দিল্লি ভ্রমণেরও অভিযোগ উঠেছিল। স্বাস্থ্য-সূত্রের খবর: তদন্তের জেরে এক জনকে আপাতত ‘কম্পালসারি ওয়েটিং’-এ রাখা হলেও আরও কিছু অফিসার এতে জড়িত। রিপোর্ট জমা পড়লে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রিপোর্ট চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। দিন কয়েকের মধ্যেই প্রকাশিত হবে।”
তবে মেডিক্যাল সার্ভিস কর্পোরেশন সংক্রান্ত তদন্তে সরকার খানিকটা দ্বিধায় বলে দফতর সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে। প্রথম দফার তদন্ত খতিয়ে দেখতে দ্বিতীয় দফায় আর একটা কমিটি গড়া হয়। এবং তদন্তে একটি সংস্থাকে ‘নিয়ম ভেঙে’ মেডিক্যাল কলেজ তৈরির বরাতদানের বিষয়টি প্রমাণিত হলেও সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে এখনই সরানো যাচ্ছে না। কেন?
এক স্বাস্থ্য-কর্তার ব্যাখ্যা, “সংস্থাটিকে বাদ দিলে বহরমপুর, মালদহ, সাগর দত্ত তিনটের কাজই মাঝপথে বন্ধ হয়ে যাবে। তাই অনিয়মটা মানতে হচ্ছে।” আর সুশান্তবাবুর মন্তব্য, “দোষটা ওই সংস্থার নয়। বরং যারা নিয়ম ভেঙে বরাত দিয়েছে, তাদের। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু মেডিক্যাল কাউন্সিলকে মুচলেকা দিয়ে তিনটি মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন মিলেছে, এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ না-হলে সব পণ্ড হবে। তাই ওরাই নির্মাণ চালিয়ে যাচ্ছে।” |
চার অধ্যায় |
|
|
|
|
বিষয় |
মেডিক্যাল কলেজ
নির্মাণ |
এড্স রোধের
টাকা নয়ছয় |
বিশেষ এনজিওকে
সুযোগ |
মনোজাইম কিট
কেলেঙ্কারি |
অভিযুক্ত |
মেডিক্যাল সার্ভিস
নিগম |
স্যাক্স |
স্যাক্স |
স্যাক্স ও
নির্মাতা সংস্থা |
তদন্তকারী |
মহাকরণের
বিশেষ কমিটি |
স্বাস্থ্য দফতর |
স্বাস্থ্য দফতর |
তৃণমূল ডাক্তার
সংগঠনের কমিটি |
|
|
|
|
|
|