‘ভূতের ভয়’, ছুটি হল
মাজদিয়ার স্কুল

‘ভূতে’র ভবিষ্যৎ নিয়ে ভেবে আকুল মাজদিয়া শিবমোহিনী বালিকা বিদ্যালয়।
বুধবার দিনেদুপুরে সিঁড়ির ঘরের আধো অন্ধকারে ছায়া দেখে আঁতকে উঠেছিল এক ছাত্রী। তারপরেই সেই স্কুলে ছড়িয়ে পড়ে ‘ভূতের ভয়’। হুড়মুড়িয়ে ছাত্রীরা বেরিয়ে আসতে থাকে ক্লাস থেকে। শুরু হয়ে যায় হট্টগোল। তাতে ‘ভূত’ ব্যাচারার কী হল, কেউ জানে না। তবে স্কুল সামলাতে ছুটি দিয়ে দিলেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রধান শিক্ষিকা বিজয়া রায় দাস বলেন, “যা অবস্থা হয়েছিল, তাতে ছুটি না দিয়ে উপায় ছিল না। ভয়ে থরথর করে কাঁপছিল অনেকে। কেউ কেউ কাঁদতে শুরু করে দেয়। অনেক চেষ্টা করেও শান্ত করা যায়নি।” তাই স্কুলের দরজা খুলে দিতেই ছাত্রীরা ছুটে বেরিয়ে যায় বিদ্যালয় ভবন থেকে। ভর দুপুরে সেই দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে যান মাজদিয়া বাজারের লোকজন। তারপরে ভূতের খবর শুনে সারা এলাকা জুড়েই ছড়িয়ে পড়ে চাপা হাসি। তত ক্ষণে ছাত্রীরা যে যার বাড়ি ফিরে গিয়েছে। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, এই দিন স্কুল শুরু হয়েছিল স্বাভাবিক ভাবেই। বেলা দেড়টা নাগাদ টিফিন শুরু হয়। আর তখনই ছড়ায় ভূতের কথা। সিঁড়ির কোনের ঘরে ছায়া দেখতে পায় কোনও এক ছাত্রী। তারপরেই শুরু হয়ে যায় হইচই হট্টগোল। কিন্তু সেই ছাত্রীটিকে চিহ্নিত করা যায়নি। আবার অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, তিন তলার একটি অন্ধকার ঘরের সামনে ছাত্রীদের মধ্যেই কেউ কাউকে ভয় দেখিয়েছে। তবে সে কথাও কেউ স্বীকার করেনি। স্কুলের সহ শিক্ষিকা অঞ্জুশ্রী আচার্য বলেন, “অনেক ছাত্রীই ভয় পেয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কেন ভয় পেয়েছে, তা প্রথমে আমরা বুঝতেই পারছিলাম না। অনেকে ভাল ভাবে কথাই বলতে পারছিল না। একটু পরে বুঝতে পারলাম, ওরা ভূতের ভয় পেয়েছে।” কিন্তু এখন যখন পদার্থবিদেরা ঈশ্বর-কণার কাছাকাছি পৌঁছতে পেরেছেন, ঘরে ঘরে যেখানে ইন্টারনেট রয়েছে, মোবাইল, কেবল চ্যানেল, তখন এই যুগে কী করে একটি স্কুলে ভর দুপুরে এত ছাত্রী ভূতের ভয় পায়? মাজদিয়ার প্রবীণ ব্যবসায়ী স্বপন ভৌমিক বলেন, “হাস্যকর একটা ঘটনা। এখনকার মেয়েরা আগের মতো নয়। জমজমাট বাজার এলাকার মধ্যে ওই স্কুল। ছাত্রী সংখ্যা অনেক। সেখানে কী করে এমন কুসংস্কার থাকতে পারে?” তাঁর কথায়, “তা ছাড়া অনেক সময়ে বিভিন্ন বাড়ি নিয়ে নানা গুজব থাকে। কিন্তু ওই বাড়িটি নিয়ে সে সব কোনওদিন ছিল না।” কৃষ্ণনগর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক উৎপল ভট্টাচার্য বলেন, “ভূতের ভয় ঠাকুরমার ঝুলির মতোই একটা পুরনো দিনের ঘটনা। এখনকার ছেলেমেয়েরা যে ভূতের গল্প পড়ে, তারা বেশ ভাল, কখনও কখনও তাদের কাণ্ডকারখানায় হাসিও পায়। লীলা মজুমদার বা শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ভূতের গল্পের চাহিদাই তো বেশি। তাঁদের ভূতেরা সাধারণত পুরনো দিনের ভূতের মতো ভয় দেখায় না।”
মনোবিদ দেবাশিস দাশগুপ্তের অবশ্য বক্তব্য, “গা ছমছমে ভূতের গল্প বরাবরই ছিল। এখনও রয়েছে। ইন্টারনেট, টেলিভিশনের কেবল চ্যানেলে সেই সব ভয়াল ভূতেরা এখনও রয়ে গিয়েছে। ইংরেজি ভূতের গল্পও অনেকেই গোগ্রাসে গেলে। সেখানে ড্রাগন থেকে জাদুদণ্ডের কেরামতি সবই তো রয়েছে। তার সঙ্গে রয়েছে আজন্মলালিত ভূতে বিশ্বাস।” তাঁর কথায়, “তা ছাড়া, ওই স্কুলে যা হয়েছে, তা আসলে গণ-হিস্টিরিয়া। এক জন দু’জন ভয় পেয়েছে, তাই দেখে আরও অনেকে কিশোরী ভয় পেয়ে গিয়েছে।”
এই দিন আকাশ কালো করে মেঘ ঘনিয়ে এসেছিল। স্কুল বাড়িটিও পুরনো দিনের। ঘরগুলো আধো-অন্ধকার। কোনও কোনও ঘরে আলো কম। তার মধ্যে আচমকা ওই ভূতের কাহিনি ছড়িয়ে পড়ায় পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছিল বলে জানিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী মৌসুমী মণ্ডল বলে, “আমরা তখন ক্লাসে ছিলাম। হঠাৎ দেখি সবাই ছুটোছুটি করছে। শুনলাম স্কুলে নাকি ভূত ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরাও তখন ব্যাগ নিয়ে দৌড় লাগাই।” একাদশ শ্রেণির ছাত্রী সঞ্চিতা বিশ্বাস বলে, “আমি ভূত দেখিনি। কিন্তু অনেকে বলেছে কেউ একজন নাকি দেখেছে। সে কে জানি না। তবে সবাই ভয় পেয়ে গিয়েছিল।” অঞ্জুশ্রীদেবীর কথায়, “ অনেকেই জোর করে স্কুলের বাইরে চলে যেতে চাইছিল। তাই বাধ্য হয়েই ছুটি দিয়ে দিতে হয়।” প্রধান শিক্ষিকা বিজয়াদেবী বলেন, “বৃহস্পতিবার থেকেই স্কুলে ছাত্রীদের বিজ্ঞানমনস্ক করে তোলার চেষ্টা শুরু হবে। আশা করছি, ভয় কাটবে।” স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কোনও এক ছাত্রী দেখেছে বলে অন্যরা দাবি করছে, কিন্তু কে সেই ছাত্রী, তা আর জানা যায়নি। ছাত্রীরা কী বলছে?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.