পশ্চিমে চিন্তিত প্রশাসন
সাংসদ তহবিলের অর্ধেক টাকাই পড়ে
সাংসদ তহবিলের অর্ধেক অর্থও খরচ হয়নি ‘পিছিয়ে পড়া’ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়। ফলে পরের ধাপের টাকাও চাইতে পারেনি প্রশাসন। তাই পুরনো প্রকল্প দ্রুত রূপায়ণে জোর দিচ্ছে প্রশাসন। সম্প্রতি জেলার চারটি মহকুমায় এ নিয়ে আলাদা বৈঠকও হয়েছে। যেখানে বিডিওদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন সাংসদ-প্রতিনিধিরাও। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্লক প্রশাসনকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে দ্রুত প্রকল্পগুলি রূপায়ণ করে খরচের হিসাব পাঠিয়ে দেওয়া হয়। না হলে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা চাওয়া যাবে না। কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, সাংসদ তহবিলের প্রথম কিস্তির ৮০ শতাংশ খরচের পরেই দ্বিতীয় কিস্তির টাকা চাওয়া যাবে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জঙ্গলমহলের সাংসদ পুলিনবিহারী বাস্কে ছাড়া বাকি দুই সাংসদের প্রাপ্ত অর্থের ৫০ শতাংশও খরচ করা যায়নি। এই ঘটনায় চিন্তিত প্রশাসন।
জেলা প্রশাসনের অবশ্য যুক্তি, ২০১১-১২ আর্থিক বছরের সাংসদ তহবিলের টাকা পাওয়া গিয়েছিল চলতি বছরের মাত্রই মে মাসে। ফলে কাজ এগোনোর জন্য যথেষ্ট সময় মেলেনি। কিন্তু দ্রুত কাজ শেষ না করা গেলে সমস্যা বাড়বে। কারণ, এটা ২০১২-১৩ আর্থিক বছর চলছে। গত আর্থিক বছরের অর্ধেক টাকা খরচ না করতে পারলে চলতি আর্থিক বছরের অর্থ পেতে সমস্যা হবে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) অরিন্দম দত্ত ও জেলা উন্নয়ন ও পরিকল্পনা আধিকারিক প্রণব ঘোষ বলেন, “যাতে দ্রুত সাংসদ তহবিলের অর্থে প্রকল্প রূপায়ণ করা যায়, সে জন্য বিডিওদের পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে। তা ছাড়াও জেলা-স্তর থেকেও নিয়মিত নজর রাখা হবে। আশা করা যায়, শীঘ্রই প্রথম কিস্তির টাকা খরত করে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা চাইতে পারব।”
প্রতি-সাংসদ বছরে ২ কোটি টাকা পান। ওই টাকা তিনি এলাকার উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারেন (এখন অবশ্য ওই পরিমাণ বাড়িয়ে বছরে ৫ কোটি টাকা হয়েছে)। প্রশাসনিক পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, ২০০৯-’১০ আর্থিক বছরেরও কিছু টাকা পড়ে রয়েছে। মেদিনীপুরের সাংসদ প্রবোধ পণ্ডা ২০০৯-১০ ও ২০১০-১১ আর্থিক বছরে ২ কোটি করে ৪ কোটি টাকা পেয়েছিলেন। ’০৯-’১০ আর্থিক বছরে ওই টাকায় ৮৯টি প্রকল্প জমা দিয়েছিলেন। তার মধ্যে ৮২টি প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও কয়েকটি প্রকল্পের কাজ শেষ করা যায়নি। ফলে ৭ লক্ষ ২২ হাজার টাকা পড়ে রয়েছে। আর ’১০-’১১ আর্থিক বছরে ২ কোটি চাকায় ৬২টি প্রকল্প জমা দিয়েছিলেন। তার মধ্যে ৬১টি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি রয়েছে ১টি। সেটি ৫ লক্ষ ১৩ হাজার টাকার। ২০১১-১২ আর্থিক বছরে নিজের সাংসদ তহবিল থেকে পেয়েছিলেন আড়াই কোটি টাকা। আর আনস্পেন্ট ব্যালান্স ফান্ড থেকে পেয়েছিলেন ১ কোটি ১৪ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা (দেশের যে সমস্ত সাংসদেরা অর্থ খচ করতে পারেন না তাঁদের টাকা অন্যান্য সাংসদদের দিয়ে দেওয়া হয়, যা আনস্পেন্ট ব্যালান্স ফান্ড)। ফলে সব মিলিয়ে পেয়েছিলেন ৩ কোটি ৬৪ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা। যে টাকায় ১৮৩টি প্রকল্প তৈরি করেছিলেন। তার মধ্যে ১২৬টি প্রকল্প রূপায়িত হলেও ৫৭টি প্রকল্প এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। ফলে ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকা পড়ে রয়েছে। তিন বছরে পড়ে থাকা টাকার পরিমাণ ১ কোটি ২২ লক্ষ ৩৫ হাজার।
ঘাটালের সংসদ গুরুদাস দাশগুপ্তের তহবিলের অর্থেরও একই অবস্থা। ২০০৯-’১০ সালে ২ কোটি টাকায় ১০৪টি প্রকল্পের মধ্যে এখনও ৮টি প্রকল্পের কাজ হয়নি। পড়ে রয়েছে সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা। ’১০-’১১ আর্থিক বছরের ২ কোটি টাকায় ৭৫টি প্রকল্প জমা দিয়েছিলেন। এখনও ১১টি প্রকল্পের কাজ হয়নি। পড়ে রয়েছে ২০ লক্ষ টাকা। ২০১১-’১২ সালে তিনিও আনস্পেন্ট ব্যালান্স ফান্ড মিলিয়ে ৩ কোটি ৬৪ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা পেয়েছিলেন। ৬৭টি প্রকল্প তৈরিও করেছিলেন। যার মধ্যে ৩৭টি প্রকল্পের কাজই শেষ হয়নি। পড়ে রয়েছে ২ কোটি ৬ লক্ষ টাকা। তিন বছরে পড়ে থাকা টাকার পরিমাণ ২ কোটি ৩৩ লক্ষ ৫০ হাজার।
ঝাড়গ্রামের সাংসদ পুলিনবিহারী বাস্কের টাকায় অবশ্য অন্যদের থেকে ভাল কাজ হয়েছে। ’০৯-’১০ সালে ৪০টি প্রকল্পের মধ্যে ২টি পড়ে রয়েছে। পড়ে থাকা টাকার পরিমাণ ৬ লক্ষ। ’১০-’১১ আর্থিক বছরে ২১টি প্রকল্পের মধ্যে মাত্র ১টির কাজ হয়নি। পড়ে থাকা টাকার পরিমাণ ৩ লক্ষ। ’১১-’১২ আর্থিক বছরে ৩ কোটি ৬৪ লক্ষ ২৮ হাজার টাকায় ৫২টি প্রকল্প তৈরি করেছিলেন। যার মধ্যে পড়ে রয়েছে মাত্র ৭টি। পড়ে থাকা টাকার পরিমাণ ২৪ লক্ষ ২৮ হাজার। তিন বছরে পড়ে থাকা টাকার পরিমাণ ৩৩ লক্ষ ২৮ হাজার। পুলিনবাবুর তহবিলের দ্বিতীয় কিস্তির টাকা এ বার চাইবে প্রশাসন। কিন্তু অন্যদের তহবিলের টাকার ক্ষেত্রে এই অবস্থা কেন? তা খতিয়ে দেখতেই প্রশাসন বৈঠক করেছিল। সেখানে সাংসদদের প্রতিনিধিরা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে কোনও ত্রুটি নেই। কারণ, তাঁরা সময়েই প্রকল্প রিপোর্ট দিয়েছেন। এ বার প্রকল্প বাস্তবায়িত করার কাজ প্রশাসনের।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.