সরকারি বেসরকারি অংশীদারি উদ্যোগ, পরিভাষায় ‘পিপিপি মডেল’, অপরিচিত কিছু নহে। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে, শিক্ষাক্ষেত্রে এমন বহুবিধ উদ্যোগ দেশ জুড়িয়াই দৃশ্যমান। অবশ্য, পশ্চিমবঙ্গের কথা আলাদা। এই রাজ্যে প্রায় সাড়ে তিন দশকের বাম শাসনের সিংহভাগই যে কোনও বেসরকারি উদ্যোগের প্রতি বিষম ঘৃণায় অতিবাহিত হইয়াছে। বেসরকারি পুঁজির প্রতি সেই বাম ও গণতান্ত্রিক বিরূপতায় রাজ্যের বিশেষ সুবিধা হয় নাই। বরং, উল্টাটিই সত্য। বাম জমানার অন্তিম কালে আসিয়া শাসক গোষ্ঠীর মনোভাব পরিবর্তনের একটি সম্ভাবনা দেখা দিয়াছিল, কিন্তু সেই ধারা ফলবান হইতে না হইতেই মহাকরণেও জমানা বদলাইয়া গেল। সাম্প্রতিক হিসাব বলিতেছে, পশ্চিমবঙ্গে ‘পিপিপি মডেল’-এ মাত্র একটি মেডিক্যাল কলেজ আছে। কর্নাটকে এই সংখ্যাটি একচল্লিশ। সহসা সব ছাড়িয়া মেডিক্যাল কলেজ-এর খতিয়ান কেন? কারণ, সরকারি সূত্র মারফত জানা গিয়াছে, পশ্চিমবঙ্গ হইতে প্রতি বৎসর যথেষ্ট সংখ্যক এম বি বি এস চিকিৎসক পাশ করেন না। বাধ্য হইয়া বিভিন্ন হাসপাতাল এবং চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান হোমিয়োপ্যাথি, আয়ুর্বেদ, ইউনানি প্রভৃতি শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিদের ‘রেসিডেন্ট মেডিক্যাল অফিসার’, তথা ‘আর এম ও’ রূপে নিয়োগ করিতেছে। একটি পুরানো বিধি আছে, এবং তাহার ভিতরে একটি ফাঁক আছে। সেই ফাঁক গলিয়াই এই জাতীয় নিয়োগ। সেই সব নিযুক্ত ব্যক্তির শিক্ষা এবং যোগ্যতার প্রতি কটাক্ষ না করিয়াও বলা চলে, এই ব্যবস্থাটি, চলতি বিধিমতে, বেআইনি নহে, কিন্তু অসঙ্গত। অবাঞ্ছিতও বটে। তাহা শুধু নৈতিক কারণে নহে, প্রক্রিয়াগত কারণেও বটে। কারণ, তাঁহারা ‘অ্যালোপ্যাথ’ চিকিৎসকদের ন্যায় মানবশরীর-সংক্রান্ত নানা বিদ্যা অধ্যয়ন করিলেও ভিন্ন গোত্রের হইবার কারণে সেই ‘ফামার্কোলজি’ শিক্ষা করেন না। ফলে, ‘অ্যালোপ্যাথি’-নির্ভর হাসপাতালে রোগীদের ‘অ্যালোপ্যাথিক’ ঔষধ প্রদান করিবার বিধিসম্মত অধিকার তাঁহাদের নাই। অথচ, এই কাণ্ডটি চলিতেছে।
আইনের যে ফাঁকটি দিয়া এই ধরনের নিয়োগ, সেই বিধিটির পরিবর্তনের ভাবনাচিন্তা শুরু হইয়াছে। রাজ্যে এম বি বি এস শিক্ষার আসনও পূর্বের তুলনায় বাড়ানো হইয়াছে। তাহাতেও যে যথেষ্ট সংখ্যক যোগ্য ব্যক্তির চাহিদা মিটিবে, এমন আশা নাই। প্রক্রিয়াটি শুরু হইলেও সমস্যা উপযুক্ত জমি এবং বাড়ির। রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতিতে যে কোনও উদ্যোগ শুরু হইবার পূর্বে ইহাই মৌলিক সংকট বলিয়া পরিগণিত। তবে এই সমস্যাটি সমাধানের কথাও ভাবা হইয়াছে, তাহাও যথেষ্ট সাধু ভাবনা। রাজ্যের বহু সরকারি হাসপাতাল রুগ্ণ দশায় পতিত। অনেকগুলি কার্যত প্রেতপুরীর আকার ধারণ করিয়াছে। বেশ কিছু হাসপাতাল কোনও ক্রমে টিম টিম করিয়া চলিতেছে। অথচ, এই সব ভবনের সহিত বিস্তর জমি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়িয়া আছে। স্থির হইয়াছে, যথাসম্ভব এইগুলিরই নবায়ন করিয়া নূতন মেডিক্যাল কলেজ গঠন করা হইবে। অর্থাৎ, ইহার ফলে বর্তমান স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর অবহেলিত সম্পদগুলিকেও পুনর্ব্যবহারের একটি সম্ভাবনা জাগিয়াছে। এই সম্পদগুলি যদি নূতন মেডিক্যাল কলেজ-এর আকার পায়, তাহা দুই দিক হইতে লাভজনক। প্রথমত, প্রায়-নষ্ট-হইতে-থাকা জমি এবং স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর নূতন একটি কার্যকর ব্যবহার সম্ভব হইতে পারে। দ্বিতীয়ত, ইহার ফলে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের স্বাস্থ্য পরিষেবারও উন্নততর হইয়া উঠিবার সম্ভাবনা। অসুখটি চিহ্নিত হইয়াছে। অতঃপর, দ্রুত নিরাময় কাম্য। |