যে ডুয়ার্সের বেহাল রাস্তা দেখে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নিজেই জনস্বার্থ মামলা করেছেন খোদ প্রধান বিচারপতি, ভরা বর্ষায় সেখান দিয়েই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সফর ‘মসৃণ’ করতে নাজেহাল পুলিশ-প্রশাসন।
রাতারাতি কোথাও মাটি-পাথর পেলে ‘তাপ্পি’ দেওয়া হচ্ছে। আবার কোথাও বৃষ্টির মধ্যেই পিচ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু, যে সড়ক নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জে এন পটেল সম্প্রতি মামলা করেছেন, সেই মাদারিহাটের রাস্তার হাল এতটুকুও ফেরেনি। সে জন্যই মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের কেউ কেউ আগ্রহ প্রকাশ করলেও তাঁদের সফরসূচিতে জলদাপাড়া আপাতত বাদ রাখা হয়েছে। প্রশাসনের একাধিক কর্তা জানান, মাদারিহাটের রাস্তার হাল ‘বিপজ্জনক’ বলে মন্ত্রী-আমলাদের একাংশের ‘ইচ্ছে’ সত্ত্বেও জলদাপাড়ায় রাতে থাকার অনুরোধ আপাতত ‘সবিনয়ে ফেরাতে’ হয়েছে।
শুধু তাই নয়, তড়িঘড়ি মাটি-পাথর-পিচ ঢেলে যে সব রাস্তার গর্ত ভরাট হচ্ছে, টানা বৃষ্টি হলে সে সব ভেসে গেলে কী হবে, তা ভেবে দুশ্চিন্তায় জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলা পুলিশ-প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রীর কালিম্পং সফর নিয়েও পুলিশ-প্রশাসন উদ্বেগে। কারণ, রোজই বৃষ্টি হওয়ায় পাহাড়ে মাঝেমধ্যেই ধস নামছে। |
তবে উত্তরবঙ্গের পাহাড় ও সমতলের বেহাল রাস্তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পুরোপুরি ওয়াকিবহাল বলে দাবি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের। তিনি বলেন, “পাহাড়-সমতলের অনেক রাস্তাই বেহাল। ওই সব ক’টি রাস্তারই দায়িত্ব কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণাধীন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের। ওই রাস্তা সারানো নিয়ে টালবাহানার জন্য মানুষের দুর্ভোগ চলছে। সে সব কিছু মাথায় রেখেই পুলিশ-প্রশাসনকে সব ঠিক করতে হচ্ছে।” িতিন বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী নিজে বহুবার কেন্দ্রকে অনুরোধ করেছেন। পাহাড়-সমতলের মানুষের যাতায়াতের দুর্দশা দূর করতে দ্রুত কাজ করানোর জন্য বলেছেন। এমন চলতে থাকলে আমাদের ফের রাস্তায় নামতে হবে।”
সরকারি সূত্রের খবর, আজ, মঙ্গলবার দুপুরে বাগডোগরা বিমানবন্দরে নামবেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী সহ রাজ্যের অন্তত ১০ জন মন্ত্রী, ২৩ জন সচিব ও রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়েরও থাকার কথা। বিকেল ৪ টেয় জলপাইগুড়ি আর্ট গ্যালারিতে প্রশাসনিক বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী। রাতেই মুখ্যমন্ত্রী সড়ক পথে কোচবিহার রওনা হবেন। কাল, বুধবার কোচবিহারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিলান্যাস করে মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক বৈঠক করবেন। পরদিন, বৃহস্পতিবার কালিম্পঙে যাওয়ার কথা তাঁর। কবি ভানুভক্তের জন্মদিন উপলক্ষে সেখানে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সে দিনই বিকেলের বিমানে কলকাতায় ফেরার কথা মুখ্যমন্ত্রীর।
ঘটনা হল, বাগডোগরা থেকে মুখ্যমন্ত্রী ‘মিনি মহাকরণ’ নিয়ে যে সড়ক পথে যাবেন, সেই শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি রোডও খানাখন্দে ভর্তি। জলপাইগুড়ি থেকে কোচবিহারে যাবেন যে পথে, সেই জাতীয় সড়কেও নিত্যযাত্রীরা কার্যত প্রতি পদে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেন। সেখান দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি নিতে চাইছে না পুলিশ। বিকল্প যে রাস্তা চ্যাংরাবান্ধা হয়ে কোচবিহার গিয়েছে, সেটিতেও বেশ কয়েকটি জায়গা বর্ষায় ছোটখাট ডোবার মতো হয়ে যায়। তড়িঘড়ি গর্ত বোজালেও রাতভর বৃষ্টিতে ফের বেহাল হলে কী হবে, সেই আশঙ্কা পূর্ত দফতর উড়িয়ে দিতে পারছে না।
ঘটনাচক্রে, এদিনই মাদারিহাটের রাস্তা সারানোর জন্য কেন্দ্র অর্থ বরাদ্দ করেছে। প্রশাসনের কর্তারা অবশ্য বলছেন, টাকাটা আর ক’দিন আগেই পাওয়া গেলে মুখ্যমন্ত্রীর সফরের মুখে এমন উদ্বেগে পড়তে হত না। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের শিলিগুড়ির দফতরের অন্যতম আধিকারিক পঙ্কজ মিশ্র অবশ্য দাবি করেছেন, “আমরা রাস্তা মেরামতের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বর্ষার জন্য সমস্যা হচ্ছে। বৃষ্টি থামলেই পুরোদমে কাজ হবে।” |