|
|
|
|
দেনা ব্যাঙ্কের ব্যবসার দর্শন বদলে দিচ্ছেন কর্ত্রী
|
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
দেশের স্বার্থ মাথায় রেখেই ব্যবসার দর্শন বদলাচ্ছে দেনা ব্যাঙ্ক। শুধু শহরের চৌহদ্দিতে কর্মকাণ্ড না-বাড়িয়ে অনেক বেশি করে ঝুঁকছে গ্রামের দিকে। কেন, সোমবার কলকাতায় তা স্পষ্ট করে দিয়ে গেলেন এই ‘পরিবর্তনের’ কাণ্ডারী। চেয়ারপার্সন ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর নূপুর মিত্র। প্রথম বাঙালি মহিলা হিসেবে কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শীর্ষ পদে বসা নূপুরদেবীর দাবি, “গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়নে ঋণ দেওয়ার বিষয়টি ব্যাঙ্কের অগ্রাধিকারের তালিকায় নিয়ে আসা জরুরি। এ বিষয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কমিটির সদস্য হওয়ার সুবাদে এই নিয়ে সুপারিশও করেছি।”
গ্রামমুখী হয়েও যে ব্যাঙ্কিং ব্যবসায় মুনাফার কড়ি গোনা সম্ভব, তা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন নূপুরদেবী। জন্ম বা লেখাপড়া উত্তরপ্রদেশে হলেও, কলকাতার সঙ্গে যাঁর নাড়ির টান অটুট। বাবা সুরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় আদপে আলমবাজারের মানুষ। দাদু সুধীর চট্টোপাধ্যায় নামী ফুটবলার। কিন্তু সরকারি প্রশাসক হিসেবে বাবার বদলির চাকরির সুবাদে নূপুরদেবীর জন্ম উত্তরপ্রদেশের বায়ুনে। স্কলও ওই রাজ্যেই। তবে ছড়িয়ে-ছিটেয়ে। তিন জায়গায়। নৈনিতাল, ঝাঁসি ও লখনউয়ে।
|
নূপুর মিত্র। —নিজস্ব চিত্র |
ইংরেজি মাধ্যমের ‘কৌলিন্য’ তাঁর ছিল না। ছিল না এমবিএ-র মতো পেশাদার ডিগ্রিও। বরং প্রথমে বিএসসি এবং তার পর আইনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর সেই ১৯৭৫ সালে প্রবেশনারি অফিসার হিসেবে ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার চাকরিতে ঢুকে পড়েছিলেন তিনি। তার পর টানা ৩৪ বছর কেটেছে এই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কেই। যেখানে অন্য সকলের থেকে তাঁকে আলাদা করে দিয়েছে চিন্তার স্বকীয়তা, ক্ষুরধার মস্তিষ্ক এবং অবশ্যই মানবিক মূল্যবোধ।হয়তো সেই কারণেই কর্মীদের মধ্যেও জনপ্রিয় তিনি।
ব্যাঙ্কিং দুনিয়ায় এখনও পুরুষদের ‘আধিপত্য’। ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। আই সি আই সি আই ব্যাঙ্কের ছন্দা কোছার, এইচ এস বি সি-র নয়নালাল কিদোয়াই, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের শিখা শর্মা, ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার রঞ্জনা কুমার প্রমুখ। কিন্তু তালিকা একেবারেই দীর্ঘ নয়। তাই সেই বন্ধুর পথে হেঁটে প্রথম বাঙালি মহিলা হিসেবে কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শীর্ষে পৌঁছতে প্রতি পদে নিজেকে প্রমাণ করতে হয়েছে তাঁকে। কখনও ইউরোপের দায়িত্ব সামলেছেন। কখনও একা হাতে ঘুরিয়ে দিয়েছেন দেশেরই কোনও অঞ্চলে ব্যাঙ্কের ব্যবসার মোড়।
স্বীকৃতি মিলেছে ধৈর্য আর নাছোড় লড়াইয়ের। ২০০৯-এ ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্কে এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর হিসেবে যোগ দেন তিনি। আর ২০১১-র নভেম্বরে উঠে এসেছেন দেনা ব্যাঙ্কের শীর্ষ পদে।
ডিসেম্বরে অবসরের পর সিমলার কাছে সোলানে পাকাপাকি ভাবে থাকতে চান নূপুরদেবী। চান গান শোনা, বই পড়া আর বেড়ানোর মধ্যেই নতুন জীবন খুঁজে নিতে। রুটিন বাঁধা জীবনে যা কিছুর জন্য অনেক কষ্টে সময় বার করেন তিনি।
স্বামী-মেয়ে-সংসার দেখে এত বড় দায়িত্ব সামলাতে দমছুট লাগেনি? “আমরা মেয়েরা তো হেঁশেল সামলেই সব করি।” একা হাতে সব সামলানোর এই দক্ষতাই হয়তো শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছে নূপুরদেবীকে। |
|
|
|
|
|