প্রাপ্যে বঞ্চনার নালিশে
তাল কাটছে জিএসটি’র
র্থিক সংস্কারের পথে এগোতে আগামী অর্থবর্ষের শুরু থেকে পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) চালু করতে চাইছে মনমোহন সরকার। কিন্তু রাজ্যগুলোর সঙ্গে মতপার্থক্যের জেরে তা কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এবং এ ক্ষেত্রেও ‘যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত হানা’র জন্য কেন্দ্রের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলছে ইউপিএ-শরিক ও বিরোধী শাসিত বিভিন্ন রাজ্য।
এই তালিকায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গও। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের অভিযোগ: কেন্দ্রীয় বিক্রয়করের ক্ষতিপূরণ হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের প্রাপ্য অন্তত ১৮০০ কোটি টাকা একতরফা ভাবে কেটে নিয়েছে দিল্লি। এ নিয়ে অভিযোগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তকে ‘যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় বড় আঘাত’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। প্রণব মুখোপাধ্যায়ের জায়গায় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ অর্থ মন্ত্রকের ভার নেওয়ার পরে নতুন কর ব্যবস্থা নিয়ে বিজেপি নেতৃত্ব ও রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার দায়িত্ব বর্তেছে যোজনা কমিশনের উপাধ্যক্ষ মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়ার উপরে। রাজ্যগুলোর অর্থমন্ত্রীদের নিয়ে গঠিত এমপাওয়ার্ড কমিটির চেয়ারম্যান, বিহারে বিজেপির উপ মুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদীর সঙ্গে ইতিমধ্যে তিনি কথাও বলেছেন। কিন্তু তাতে কতটা ফল মিলবে, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
সমস্যাটা কোথায়? সারা দেশে অভিন্ন পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) চালুর স্বার্থে দিল্লির প্রস্তাব ছিল, কেন্দ্রীয় বিক্রয়কর (সিএসটি)-এর হার ধাপে ধাপে শূন্যে নামিয়ে আনা হোক। এতে রাজ্যগুলোর যে আর্থিক ক্ষতি হবে, কেন্দ্রই তা পুষিয়ে দেবে। কথা ছিল, জিএসটি চালু হবে ২০১০ সালে। নানান মতভেদের জেরে এখনও তা না-হলেও বিক্রয়করের হার কমানো শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এর দরুণ রাজ্যগুলির ক্ষতি কেন্দ্র পুরোটা মেটাচ্ছে না বলে অভিযোগ। অমিতবাবুর হিসেবে, “গত দুই অর্থবর্ষে পশ্চিমবঙ্গের প্রাপ্য মোট ১৮৩৮ কোটি ৯২ লক্ষ টাকার ন্যায্য পাওনা কেন্দ্র স্রেফ গায়ের জোরে কেটে নিয়েছে। দিল্লি গিয়ে দরবার করেও ফল হয়নি।” এমপাওয়ার্ড কমিটির হিসেবে, ২০১০-’১১ অর্থবর্ষে ক্ষতিপূরণ বাবদ কেন্দ্রের কাছে সব রাজ্যের সম্মিলিত দাবি ছিল ১৯ হাজার কোটির। এ পর্যন্ত মেটানো হয়েছে সাকুল্যে ৬ হাজার কোটি। সুশীল মোদীও বলছেন, “সম্পূর্ণ অন্যায় ভাবে রাজ্যগুলোর পাওনা কেটে নেওয়া হচ্ছে।” প্রণববাবু যাতে পদত্যাগের আগে সমস্যার সুরাহা করে যান, সে ব্যাপারে তিনি প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধও জানিয়েছিলেন বলে সুশীলের দাবি।
কী করেছিলেন প্রণববাবু?
অর্থ মন্ত্রকের খবর: প্রণববাবুর সমাধান-সূত্র দিয়ে গিয়েছেন। তা হল, রাজ্যগুলোর বকেয়া দাবির ৫০% মিটিয়ে দেওয়া হোক।
কিন্তু সে ক্ষেত্রে ফের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অনুমতি নিতে হবে। তাতেও রাজ্যগুলো সন্তুষ্ট হবে কি না সন্দেহ। আগামী ১৩ জুলাই এমপাওয়ার্ড কমিটির বৈঠক। সেখানে প্রণববাবুর সূত্র নিয়ে আলোচনা হবে। রাজ্যের ক্ষতি ‘পোষানো’ হচ্ছে না কেন?
মন্ত্রকের পাল্টা দাবি, পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত এমপাওয়ার্ড কমিটির চেয়ারম্যান থাকাকালীন রাজ্যগুলি ভ্যাটের হার ৪% থেকে বাড়িয়ে ৫% করতে রাজি হয়েছিল। সেই অনুযায়ী যতটা রাজস্ববৃদ্ধি হওয়ার কথা, ক্ষতিপূরণের অঙ্ক থেকে তা-ই কেটে নেওয়া হচ্ছে। আর এখানেই রাজ্যের ‘অধিকারে হস্তক্ষেপের’ অভিযোগ উঠেছে। কেন?
অমিতবাবুর প্রশ্ন, “ভ্যাটের হার নির্ধারণ রাজ্যের এক্তিয়ারে পড়ে। এতে কেন্দ্র কেন শর্ত আরোপ করবে?” পটনা থেকে সুশীল মোদী টেলিফোনে বলেন, “ভ্যাটের হারবৃদ্ধি সম্পর্কে কেন্দ্র আমাদের সঙ্গে আলোচনাই করেনি।” অমিতবাবুরও দাবি, ভ্যাট বাড়াতে রাজ্যগুলো রাজি হয়েছিল, এমন কোনও নথি তিনি দফতরে তন্নতন্ন করে খুঁজেও পাননি।
সব মিলিয়ে জিএসটি নিয়ে যথেষ্ট অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। অথচ শিল্পমহলের তরফে বারবার জিএসটি চালু করার দাবি উঠছে। কিন্তু সুশীল মোদীর সাফ কথা, ক্ষতিপূরণের ব্যাপারটার ফয়সালা না-হলে জিএসটি-ও ঝুলে থাকবে। এটা তিনি মন্টেককেও জানিয়ে দিয়েছেন। কংগ্রেস শিবির অবশ্য জিএসটি নিয়ে ‘রাজনীতি করা’র অভিযোগ তুলেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। যে প্রসঙ্গে সুশীল মোদীর মন্তব্য, “কেন্দ্রই জিএসটি চালু করতে পারছে না। তার জন্য রাজ্যগুলো কেন মার খাবে?” উপরন্তু জিএসটি সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনী বিলটি চোদ্দো মাস ধরে স্থায়ী কমিটিতে পড়ে রয়েছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন সুশীল।
অর্থ মন্ত্রকের ওই সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান অবশ্য বিজেপির-ই যশবন্ত সিনহা। অর্থ মন্ত্রকের আশা, বাদল অধিবেশনের আগেই স্থায়ী কমিটি রিপোর্ট জমা দেবে। বাদল অধিবেশনে বিল পাশ হলে কাজ অনেকটা এগোবে। কিন্তু তার পরে থাকছে আর এক বড় পর্ব। অর্ধেক রাজ্যের বিধানসভায় বিলটি পাশ করাতে হবে।
এত বাধা কাটিয়ে আগামী ১ এপ্রিল জিএসটি চালু করা যাবে কি? এটা এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।

দাবি-দেওয়া

২০১০-১১ ২০১১-১২
রাজ্য চেয়েছে ৮৬০.৩৬ ১২০০
কেন্দ্র দিয়েছে ২২১.৪৪ এক টাকাও নয়
কেটে নিয়েছে ৬৩৮.৯২ পুরোটাই
দু’বছরে কাটা গিয়েছে ১৮৩৮.৯২
* অঙ্ক কোটি টাকায়



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.