|
|
|
|
|
|
|
ওকে ওর ব্যক্তিগত জায়গা ছেড়ে দিন |
সন্তান বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার নিজস্ব জগৎ তৈরি হয়। বাবা মায়ের উচিত সন্তানের এই ব্যক্তিগত জায়গাটাকে
গুরুত্ব দেওয়া। অন্য দিকে, সন্তানেরও বোঝা দরকার যে বড় হওয়ার পরও জীবনে বাবা-মায়ের একটা বিশেষ
জায়গা থেকেই যায়। পরামর্শ দিচ্ছেন মন-চিকিৎসক আবীর মুখোপাধ্যায় |
|
আমার ছেলের বয়স ১৯ বছর। ইঞ্জিনিয়ারিং-এ প্রথম বর্ষের ছাত্র। পড়াশোনায় মোটামুটি ভালই। তবে ইদানীং লক্ষ করছি ও যেন কেমন চঞ্চল ও অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছে। পড়াশোনার চেয়ে মোবাইল ও কম্পিউটার নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করে বেশি। কোনও কাজ করতে বললে ভুলে যায়। বার বার ডেকেও সাড়া পাওয়া যায় না। একটুতেই রেগে যায়। আমাকে যেন সব কিছু লুকোতে চেষ্টা করে। বাড়িতে একদম থাকতে চায় না। আমি ওর সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশতে চেষ্টা করি, কিন্তু ও সেটা বুঝতে চায় না। মা হিসেবে এমন পরিস্থিতিতে আমার কী করণীয় সেই বিষয়ে পরামর্শ দিলে ভাল হয়।
তৃপ্তি পাল, শ্রীরামপুর |
|
ছবি: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য |
|
তোমাকে বলছি |
তুমি কি জানো তোমার মা তোমাকে নিয়ে খুব চিন্তিত? কোনও কারণে কি তোমার মন ভাল নেই অথবা কোনও বিষয়ে তুমি কি অতিরিক্ত চিন্তায় আছ? তুমি তো পড়াশোনা নিয়ে যথেষ্ট সিরিয়াস তার প্রমাণ তুমি স্বচ্ছন্দে ইঞ্জিনিয়ারিং-এর কোর্সে ভর্তি হতে সক্ষম হয়েছ। কোনও কারণে তোমার জীবনের অগ্রাধিকারের জায়গাগুলি হঠাৎ পরিবর্তিত হয়নি তো?
কয়েকটা বিষয় নিয়ে সতর্ক হওয়া দরকার। প্রথমত, তুমি কাদের তোমার বন্ধু মনে করছ? দ্বিতীয়ত, তোমার বিশেষ বন্ধু তৈরি হয়েছে কি? সেই সম্পর্কে কোনও রকম সংঘাত হয়েছে কি? তৃতীয়ত, কোনও নেশা করছ না তো?
এই সমস্ত বিষয় নিয়ে মনে দ্বন্দ্ব তৈরি হলেও এটি অবশ্য কারও সঙ্গে আলোচনা করা প্রয়োজন। এই বয়সে মা-বাবা তোমাকে কিছু বলতে এলে সেগুলি মেনে নিতে হয়তো অসুবিধে হয়। নিজস্ব ধারণাগুলো কোনও ভাবে খণ্ডিত হলেও মনটা বিক্ষিপ্ত লাগে। কিন্তু একটা কথা জেনো, মা-বাবা কখনও তোমার ক্ষতি চাইবেন না। বরঞ্চ তাঁদের কথা শুনলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম। তোমার যদি মনে হয় যে তোমার মন খারাপ, কিছু করতে ভাল লাগছে না, অকারণে রেগে যাচ্ছ এবং ক্লান্ত বোধ করছ, পছন্দের জিনিসের প্রতি আকর্ষণ হারাচ্ছ, তা হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নাও। |
|
বাবা-মাকে বলছি |
আপনার ছেলের বয়সটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টিন-এজ-এর শেষ ধাপে ও পৌঁছেছে। এই বয়সে ছেলে ও মেয়েদের শরীর, মন ও ব্যবহারে কিছু পরিবর্তন আসতে শুরু করে। সম্পর্কের সংজ্ঞা বদলাতে শুরু করে।
ও ইঞ্জিনিয়ারিং-এর প্রথম বর্ষের ছাত্র। তার মানে ছাত্র হিসেবে ও যথেষ্ট সিরিয়াস। এত দিন পড়াশোনাটা ওর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ছিল। এখন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ঢুকে চাপটা একটু শিথিল হয়েছে। বন্ধুবান্ধবদের পরিধি এবং আচরণ বদলেছে। সামাজিক মূল্যবোধ পাল্টেছে। এই বয়সের যুবকেরা প্রতিবাদী হয়ে ওঠে, নিজস্ব মূল্যবোধকে প্রতিষ্ঠিত করতে। এবং সেখানেই গুরুজনদের সঙ্গে সংঘাতের একটা আবহাওয়া তৈরি হতে থাকে।
সমস্যা হল, অনেক সময় গুরুজনদের মূল্যবোধকে ভুল প্রমাণ করতে তারা নিজেরা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে পড়ে। তা ছাড়া কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল সেই নিয়ে নিজেদের মনেও একটা দ্বন্দ্ব তৈরি হতে থাকে। কিন্তু সেটা স্বীকার করতে নিজের সদ্যপ্রতিষ্ঠিত আত্মমর্যাদায় বাধে। এই দ্বন্দ্বের কারণে ওদের মধ্যে চঞ্চলতা ও অন্যমনস্কতা তৈরি হয়। মা বাবার সব কথাই সেকেলে এবং অবাস্তব মনে হতে থাকে। এবং সেই কারণেই বাড়ির বাইরের সম্পর্কগুলো বেশি গুরুত্ব পেতে শুরু করে। মনে রাখতে হবে এই সময়ে কিন্তু বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে বিশেষ বন্ধুত্বের একটা সম্ভাবনা তৈরি হতে শুরু করে। মোবাইল এবং কম্পিউটারের প্রতি আসক্তি হচ্ছে আধুনিক যুগের ইঙ্গিতবাহী। মাদকদ্রব্য এবং অন্য নেশার প্রতি আসক্তিও এই বয়সের ধর্ম।
মানসিক দিক থেকে এই বয়সে এই সব কারণে ছেলেমেয়েরা হঠাৎ করে মানসিক অবসাদের শিকারও হতে পারে। এ রকমটি হলে তারা নিজেদের মধ্যে গুটিয়ে গিয়ে সমস্ত রকম কাজকর্ম এবং সম্পর্ক থেকে বিচ্যুত হতে থাকে। নেতিবাচক চিন্তা প্রাধান্য পেতে শুরু করে। খাওয়া এবং ঘুম কমে যেতে পারে। পড়াশোনা এবং অন্যান্য কাজে অবনতি লক্ষ্য করা যায়। এই লক্ষণগুলি সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রয়োজন।
আপনার সমস্যার অন্য একটা দিকও থাকতে পারে। আপনি লিখেছেন যে ও আপনার কাছ থেকে সব কিছু লুকোতে চেষ্টা করে। আপনার এই চিন্তার কিন্তু অন্য রকম একটা ব্যাখ্যাও হতে পারে। আপনার কি মনে হচ্ছে যে ছেলে আপনার কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে? ছেলেরা একটা বয়সে পৌঁছলে তাদের জীবনের প্রাধান্য বদলে গেলে মায়েরা নিরাপত্তাহীন বোধ করতে শুরু করেন। এবং এই কারণেই হয়তো ছেলেদের স্বাভাবিক ব্যবহারকেও অস্বাভাবিক মনে হতে পারে। সেটা যদি হয় তবে নিজের মনকে বোঝাতে হবে যে ছেলে বড় হচ্ছে এবং প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই আপনার ওপর ওর নির্ভরশীলতা কমছে। মেয়েদের অনেক সময় এই সত্যতা মেনে নিতে অসুবিধে হয় বলেই কিন্তু পরবর্তী জীবনে জটিলতা বাড়তে থাকে। শাশুড়ি বউমা-র মূল সংঘাতও অনেক সময় এই চিম্তাধারা থেকেই সৃষ্টি হয়। তাই এই ব্যাপারে মনকে ঠিক ভাবে চালনা করা জরুরি: পরে অনেক সমস্যা এড়ানো যায়।
আপনি ছেলের সঙ্গে বন্ধুর মতো মেশার চেষ্টা করেন, এটা খুব ভাল। এই ভাবে তার মনের অবস্থান আপনি বুঝতে পারবেন। ওকে এটা বোঝাতে হবে যে আপনি ওর ভাবনাচিন্তাকে গুরুত্ব এবং মূল্য দিচ্ছেন। জীবন এবং ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে ওর কী ধারণা, সেটা বুঝতে হবে। ওকে ওর ব্যক্তিগত জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। তবেই কিন্তু ও আপনাকে মূল্য দেবে এবং আপনার কাছে নিজের মনের কথা খোলাখুলি বলতে সাহস পাবে। এই রকম পরিস্থিতিতে আপনার আপত্তির জায়গাগুলো আপনি খোলসা করে বলতে পারবেন। এই অবস্থায় যদি আপনি বোঝেন যে ও মানসিক অবসাদে ভুগছে তখন আপনার পক্ষে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া সহজতর হবে। |
|
ছেলেমেয়েকে নিয়ে মা-বাবার সমস্যা? নাকি মা-বাবাকে নিয়ে ছেলেমেয়ের সমস্যা? পড়ার খরচ
নিয়ে অভিভাবকের দুশ্চিন্তা? দূরের শহরে পড়তে যাওয়ার নামে মেয়ের গায়ে জ্বর আসা? যে
মুশকিলই হোক না কেন, পরিবারের সবাই মিলেই সমাধানে পৌঁছতে হবে। এ বার থেকে
‘প্রস্তুতি’-ও কথা বলবে গোটা পরিবারের সঙ্গেই। অভিভাবকদের বা সন্তানের যে কোনও দুশ্চিন্তার
কথা আমাদের জানান (এবং জানাও) নিজেদের সমস্যা। সুচিন্তিত উত্তর দেবেন বিশেষজ্ঞরা।
ইমেল: prastuti@abp.in বিষয়: Haate Haat।
অথবা, চিঠি পাঠান (এবং পাঠাও) এই ঠিকানায়:
হাতে হাত, প্রস্তুতি,
আনন্দবাজার পত্রিকা,
এ বি পি প্রাঃ লিঃ,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা ৭০০ ০০১ |
|
|
|
|
|
|