|
|
|
|
|
কিছুটা ফিকে হয়েছে
বাজারের প্রতিকূলতা
অমিতাভ গুহ সরকার |
|
সেনসেক্স-এর ‘বেস ক্যাম্প’ এখন সতেরো হাজারে। একটু এগিয়ে সবে পৌঁছেছে ১৭,৫০০-র ঘরে। শিখরে পৌঁছতে এখনও ঢের দেরি। উচ্চতা যত বাড়তে থাকবে, ততই পড়তে হবে ঝড়, ঝঞ্ঝা এবং তুষারপাতের সামনে।
এই অবস্থায় পরের উচ্চতায় ওঠার আগে ঘর গুছিয়ে নিতে (‘কনসলিডেশন’) এখন ব্যস্ত মুম্বই সূচক। প্রতিকূল শর্তগুলি খানিকটা ফিকে হয়েছে। রুপোলি রেখার মতো এক এক করে দেখা দিচ্ছে অনুকূল শর্ত। অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে খানিকটা দিশা পেয়েছে গ্রিস, স্পেন এবং ইতালির মতো ইউরোপীয় দেশগুলি। ভারতীয় টাকার দাম কিছুটা বেড়েছে। বেড়েছে বিদেশি লগ্নির আগমন। অনেকটা কমেছে অপরিশোধিত তেলের দাম। কাশ্মীরে ধাক্কা খেয়ে মৌসুমী বায়ু অবশেষে প্রবেশ করেছে উত্তর ভারতের কৃষি বলয়ে। প্রত্যেকটি খবর শক্তি জুগিয়েছে সূচককে। সরকার যদি আর্থিক সংস্কারে নতুন করে উৎসাহ দেখায়, তবে তা টনিকের কাজ করবে। শেয়ার বাজারের উত্থান মৃত-সঞ্জীবনীর কাজ করবে মিউচুয়াল ফান্ডের জগতে।
চলতি সপ্তাহে বাজারের নজর ঘুরবে ২০১২-’১৩ অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিক ফলাফলের প্রতি। এপ্রিল-জুন এই তিন মাসের কোম্পানি ফলাফল প্রকাশের পালা শুরু হয়ে যাবে দিন দু’তিনের মধ্যেই। নামীদের মধ্যে রীতি অনুযায়ী প্রথম দিকেই হাজির হবে অগ্রণী তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিস। যে-সব তথ্য বাজার থেকে পাওয়া যাচ্ছে, তা থেকে অনুমান করা যায়, গত তিন মাসে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি ব্যবসায় যতটা না উন্নতি করেছে, তার তুলনায় বেশি লাভ তারা ঘরে তুলবে টাকার সাপেক্ষে মার্কিন ডলারের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধির কারণে। একই কথা প্রযোজ্য রফতানি প্রধান অনেক সংস্থার ক্ষেত্রে। অন্য দিকে, আমদানি-নির্ভর ভারতীয় কোম্পানিগুলি যে তেমন ভাল ফল প্রকাশ করতে পারবে না, তা এক রকম মেনেই নেওয়া হয়েছে।
শিল্পকে চাঙ্গা করতে সুদ কমানো শুরু হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক গত সপ্তাহে ঋণে সুদ কমিয়েছে ২৫ বেসিস পয়েন্ট। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে শীর্ষ ব্যাঙ্কের কাছে জমার উপর কোনও সুদ দেওয়া হবে না। অন্য দিকে, বাজারে নগদের জোগান বাড়াতে ৭৮০০ কোটি ডলার মূল্যের বন্ড বাজার থেকে কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাঙ্ক অব ইংল্যান্ড। ঋণের উপর ১০০ বেসিস পয়েন্ট এবং জমায় ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্যতম শক্তিশালী অর্থনীতি চিন। এই সব সিদ্ধান্ত ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ককেও প্রভাবিত করবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে সুব্বারাও হয়তো সুদ কমানোর আগে দেখে নিতে চাইবেন পণ্যমূল্য বৃদ্ধির হার কোথায় দাঁড়ায়।
কাঁচা মালের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে প্রায় সব শিল্পেই। ফলে দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে শিল্প সংস্থাগুলি। এই মাগ্গি-গণ্ডার বাজারে সাধারণ মানুষের বর্তমানে যা আর্থিক অবস্থা, তাতে মেয়াদি ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়লে চাহিদা কমতে বাধ্য। যা হয়েছে গাড়ি, টিভি, ফ্রিজ ইত্যাদি শিল্পের ক্ষেত্রে।
একই কথা প্রযোজ্য বাড়ি/ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রেও।
সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এখন ঠিক শাঁখের করাতের মতো! সুদের হার এবং টাকার জোগান নিয়ন্ত্রণ করে, একই সঙ্গে উৎপাদন বাড়ানো এবং জিনিসপত্রের দাম কমানো বেশ শক্ত কাজ। বর্ষা এত দিন বিরূপ ছিল। আকাশ যদি ঘাটতি পুষিয়ে দেয় এবং কৃষি উৎপাদন সন্তোষজনক হয়, তা হলেও কিছুটা স্বস্তি।
প্রত্যক্ষ ভাবে তো বটেই, পরোক্ষ ভাবেও বর্ষার উপর আমরা কতটা নির্ভরশীল, তার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে গত সপ্তাহে। মরসুমের প্রথম দিকে ক্ষীণ বর্ষা হওয়ায়, ‘ফসল হবে না’, এই আশঙ্কায় সোনা বিক্রি করতে শুরু করেছিলেন উত্তর ভারতের গরিব চাষিরা। অন্য দিকে, ধনী কৃষকেরা বন্ধ করেছিলেন এই হলুদ ধাতুতে লগ্নি। এই কারণে বিয়ের মরসুমেও নেমে আসতে দেখা গিয়েছে সোনার দাম। প্রতি ১০ গ্রামে ৩০,৫০০ টাকা থেকে গত সপ্তাহে পিছলে নেমেছিল পাকা সোনার দাম।
শুনলে অনেকেই অবাক হবেন, প্ল্যাটিনাম এখন সোনার থেকে সস্তা। সোনার দাম অস্বাভাবিক বেড়ে ওঠায় দ্রুত চাহিদা বাড়ছে প্ল্যাটিনাম গহনার। লগ্নির জায়গা হিসাবেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে প্ল্যাটিনাম। আন্তর্জাতিক বাজারে আউন্স প্রতি সোনার দাম যখন ঘোরাফেরা করছে ৮৭,০০০ টাকার আশেপাশেতখন প্ল্যাটিনামের দাম পৌঁছেছে কম-বেশি ৮১ হাজার টাকায়। লম্বা মেয়াদে লগ্নির জায়গা হিসাবে সম্ভাবনাময় হয়ে ওঠায় জনপ্রিয়তা বাড়ছে ই-প্ল্যাটিনামের। আসলে সবে জমে উঠতে শুরু করেছে প্ল্যাটিনামের বাজার। বড় সংখ্যায় লগ্নিকারীদের নজর পড়লে প্ল্যাটিনাম কিন্তু সোনার নীচে পড়ে থাকবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
বর্ষার সঙ্গে সঙ্গে ডিভিডেন্ডের মরসুম শুরু হয়ে গিয়েছে। নজর রাখুন আপনার সব ডিভিডেন্ড সময় মতো ব্যাঙ্কে জমা পড়ল কি না, তার উপর। একই সঙ্গে সময় হয়েছে আয়কর রিটার্ন দাখিলেরও। ৩১ জুলাই শেষ দিন ব্যক্তিগত আয়করদাতাদের জন্য। যাঁদের আয় ১০ লক্ষ টাকা বা তার বেশি, এ বার থেকে তাঁদের অন-লাইনে রিটার্ন ফাইল করা বাধ্যতামূলক। শেষ মুহূর্তের জন্য বসে না-থেকে আগেভাগেই রিটার্ন জমা করে দায়মুক্ত হওয়াতে কিন্তু যথেষ্ট স্বস্তি আছে। |
|
|
|
|
|