দিল্লির তিহাড় জেলে বিনা সাজায় বন্দি বাংলাদেশের কুষ্ঠিয়ার মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি সৌধের স্থপতি রশিদ আহমেদ।
বাংলাদেশের নামী স্থপতি। সত্তর পেরিয়ে আশি ছুঁতে চলেছেন। কিন্তু আট বছর ধরে এ দেশের কারাগারে বন্দি এই প্রবীণ শিল্পী।
তিস্তা নিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে জট যখন ঘোরালো, সেই সময় রশিদের মুক্তি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে নতুন জটিলতা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নিয়মিত ভারতের বিদেশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে এই শিল্পীর মুক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দিলেও এখনও পর্যন্ত কোনও মামলার কিনারা হয়নি।
দিল্লিতে বাংলাদেশ হাই কমিশন সূত্রের কথায়, ২০০৪ সালে রশিদ তাঁর পূত্রবধূ নুর নহরের সঙ্গে অজমেড় শরিফে
যাওয়ার জন্য ভারতে আসেন। দিল্লিতে তাঁরা পাহাড়গঞ্জে একটি হোটেলে ওঠেন। কিন্তু কোনও বিষয় নিয়ে বচসা বাধে হোটেলের ম্যানেজারের সঙ্গে। এর পরেই কিছু লোক জাল নোট চক্রে যুক্ত অভিযোগে তাঁদের গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। পরে জানা যায়, প্রবীণ এই শিল্পী ও তাঁর পুত্রবধূ সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। জালিয়াতির অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। তার পর থেকে দিল্লির তিস হাজারি আদালতে মামলা চলছে। বিনা সাজায় এখনও তিহাড় জেলে বন্দি রয়েছেন দু’জনেই।
বাংলাদেশ সরকার এই শিল্পীর মুক্তির দাবিতে আট বছর ধরেই সক্রিয়। ২৯ জুনও নয়াদিল্লির বিদেশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে আরও একটি বার্তা পাঠানো হয়েছে দিল্লির বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে। তাতে বলা হয়েছে, রশিদ আহমেদের মতো এক জন নামী শিল্পী এ ভাবে জালিয়াতি করতে পারেন না। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হবে, তা যদি ধরেও নেওয়া হয়, তা হলেও এত দিন ধরে তাঁকে কারাবন্দি রাখা অর্থহীন। যত দিন তিনি জেল খেটেছেন, অভিযোগের নিরিখে এখনই তাঁদের মুক্তি পাওয়া উচিত। বাংলাদেশ নয়াদিল্লির কাছে অনুরোধ জানাচ্ছে, প্রবীণ এই শিল্পীর স্বাস্থ্য ক্রমশই অবনতির দিকে যাচ্ছে। অন্তত জীবদ্দশায় নিজের দেশে ফিরে যান তিনি।
রশিদকে ভারতের জেল থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য তাঁর মেয়েও বহু বছর ধরে সক্রিয়। গ্রেফতারের কয়েক মাসের মধ্যেই তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী নটবর সিংহকে একটি চিঠি লিখেছিলেন সেই সময়ের কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি। ২০০৫ সালের ১৪ জুলাই লেখা সেই চিঠিতে দাশমুন্সি জানান, পুলিশ এই শিল্পী ও তাঁর পুত্রবধূর সামনে কোনও বিবৃতি নথিভুক্ত করেনি। অথচ ২০০৪ সালের ২২ ডিসেম্বর থেকে তিহাড় জেলে দু’জনকে বন্দি রাখা হয়েছে। দুই বাংলাতেই এই শিল্পী সমান শ্রদ্ধেয়। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্কের প্রেক্ষাপটে এই মামলা প্রত্যাহার করে শিল্পীকে মুক্তি দেওয়া হোক। প্রিয়রঞ্জনের কথায়, ‘আমি ভাবতেই পারি না, এমন এক জন সৎ স্থপতি এ ধরনের অপরাধ করতে পারেন!’ চিঠির সঙ্গে শিল্পীর বিবরণও প্রিয়রঞ্জন পাঠিয়েছিলেন নটবরকে। কিন্তু তার পর এত বছর কেটে গেলেও কোনও সুরাহা হয়নি। এই বিষয়ে বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য অবশ্য জানা যায়নি। কিন্তু দিল্লিতে বাংলাদেশ হাই কমিশনের মন্ত্রী (কনসুলার) নাজিবুর রহমান বলেন, “এমন এক জন ব্যক্তিত্ব এ ধরনের অপরাধ করতে পারেন আমরা বিশ্বাস করি না। আদালতে মামলাটির যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, বাংলাদেশ সরকার সেই দাবি জানাচ্ছে। কোনও অঘটন ঘটে গেলে আমাদের জবাব দেওয়ার অবস্থাও থাকবে না!” |