|
|
|
|
আবু হামজা প্রসঙ্গে ফের পাকিস্তানকে চাপ ভারতের |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
আফগানিস্তানের পুনর্গঠন ও উন্নয়নে আন্তর্জাতিক অর্থসংগ্রহের উদ্দেশ্যে আয়োজিত ‘টোকিও সম্মেলনে’ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে রইল ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক। এ দিনের বৈঠকে ভারত থেকে উপস্থিত ছিলেন বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ এবং পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার। ভারতের মূল উদ্দেশ্য ছিল, লস্কর-ই-তইবা সদস্য আবু হামজা ওরফে আবু জিন্দলের কাছ থেকে নতুন করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতে সন্ত্রাসবাদী কাজকর্ম চালানোর যে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে সেই প্রসঙ্গে পাকিস্তানকে চাপে রাখা। সরকারি সূত্রের খবর, সম্প্রতি ভারতে দু’দেশের বিদেশ সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ২৬/১১-র মুম্বই হামলায় জড়িত থাকা নিয়ে লস্কর-ই-তইবা সদস্য আবু জিন্দলের স্বীকারোক্তি সংক্রান্ত বিষয়টি তুলে ধরা হলেও তাকে গুরুত্ব দিতে চাননি পাক বিদেশ সচিব জলিল আব্বাস জিলানি। এই পরিস্থিতিতে পিছিয়ে গিয়েছে কৃষ্ণর সফরও। কারণ, এমনিতেই নানা প্রসঙ্গে চাপে রয়েছে ইউপিএ সরকার। কৃষ্ণ পাকিস্তানে গেলেও যদি তারা সন্ত্রাসবাদী কাজকর্ম স্বীকার না করে তা হলে মুখ পুড়বে সরকারের। সেই কারণেই ‘টোকিও সম্মেলনে’র মতো একটি নিরপেক্ষ মঞ্চকে ব্যবহার করে পাকিস্তানের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছিল ভারত।
আজকের বৈঠকে কৃষ্ণ হিনার কাছে অভিযোগ জানান, পাকিস্তানের মাটিকে ব্যবহার করে ভারতে একের পর এক সন্ত্রাসবাদী কাজকর্ম চালানো হচ্ছে। জিন্দল সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় নথি দেওয়া হলেও পাকিস্তান বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে না। সেই সঙ্গে লস্কর-ই-তইবার প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ সইদ পাকিস্তান থেকে ক্রমাগত ভারত-বিরোধী প্রচার চালিয়ে গেলেও পাকিস্তান সইদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করছে না বলেও দাবি করেন কৃষ্ণ। বৈঠকে উঠে আসে দাউদ ইব্রাহিম এবং সর্বজিৎ প্রসঙ্গও। |
|
আফগানিস্তান নিয়ে সম্মেলনে দুই বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ ও হিনা রব্বানি। টোকিও-য়। ছবি: পিটিআই |
শুধু দ্বিপাক্ষিক বৈঠকেই নয়, আফগানিস্তানে ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মের জন্যও নাম না করে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানকেই দায়ী করেছেন কৃষ্ণ। তিনি বলেছেন, “আফগানিস্তান পুনর্গঠনে ভারতের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের জন্য আন্তর্জাতিক অর্থ সাহায্য অবশ্যই দরকার। কিন্তু সীমান্তবর্তী প্রতিবেশী দেশে যেখানে সন্ত্রাসবাদীরা অতিমাত্রায় সক্রিয়, সেখানে আফগানিস্তানকে সন্ত্রাসমুক্ত করার ক্ষেত্রে প্রশ্ন থেকেই যায়।” প্রসঙ্গত, আজ টোকিওতে আফগানিস্তানকে নিয়ে আয়োজিত ‘ডোনার সম্মেলনে’ ৭০টি দেশ থেকে মোট ১৬০০ কোটি ডলার উঠেছে।
এ দিকে নয়াদিল্লির সুরে সুর মিলিয়েই আজ বিজেপির শীর্ষ নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণীও পাকিস্তানের উপর চাপ বাড়িয়েছেন। নিজের ব্লগে তিনি আজ জানিয়েছেন, সৌদি আরব যদি আবু জিন্দলকে সমর্পণ করাতে পারে, তাহলে পাকিস্তান কেন দাউদ ইব্রাহিমকে ভারতের হাতে তুলে দিতে পারবে না? সম্প্রতি দুই দেশের বিদেশ সচিব পর্যায়ের বৈঠকের সময় দিল্লি সফরে এসে পাক বিদেশ সচিব জলিল আব্বাস জিলানি আডবাণীর বাসভবনে গিয়ে দেখা করেন। সেই বৈঠকেও আডবাণী পাক বিদেশ সচিবকে জানিয়েছিলেন, ইসলামাবাদে সার্ক সম্মেলনে অটলবিহারী বাজপেয়ী ও জেনারেল মুশারফের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসমূলক কাজ করার জন্য পাকিস্তানের মাটি ব্যবহার করা হবে না। কিন্তু সবথেকে আক্ষেপের বিষয়, সেই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে অনুসরণ করা হয়নি। আডবাণী অবশ্য স্বীকার করেন, সম্প্রতি ভারতের তুলনায় পাকিস্তানে অনেক বেশি মানুষ সন্ত্রাসবাদীদের হাতে নিহত হচ্ছেন। তাঁর মতে, তেহরিক-ই-তালিবান-ই-পাকিস্তানের মতো সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী, যারা পাকিস্তানকে নিশানা করছে, তাদের মোকাবিলা করতে পাকিস্তান সক্রিয়। কিন্তু লস্কর-ই-তইবা ও হিজবুল মুজাহিদিনের মতো সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী, যারা ভারতে হামলা চালাচ্ছে, তাদের সহযোগিতা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তান যদি দাউদকে ভারতের হাতে তুলে দেয়, তাহলে পাকিস্তান সম্পর্কে ভারতের মনোভাবেরও পরিবর্তন হতে পারে। |
|
|
|
|
|