|
|
|
|
আনন্দবাজারকে পাঠানো সানিয়া মির্জার সেই আক্রমণাত্মক ই-মেল |
‘আমাকে বোড়ে হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে’ |
...লি-হেশ বিতর্কে গত কয়েক দিনের ঘটনায় আমি ব্যথিত এবং মর্মাহত। ডাক্তার ভেস পেজ টিভি-তে সরাসরি বলেন, অলিম্পিকে মিক্সড ডাবলসে তাঁর ছেলের সঙ্গে আমার খেলার ব্যাপারটা আমাকে লিখিত দিতে হবে। পরিষ্কার জানাচ্ছি, আমার দায়বদ্ধতা দেশের কাছে। তার জন্য আমি লিয়েন্ডার, মহেশ, বোপান্না, সোমদেব বা বিষ্ণু বর্ধন, যে কোনও কারও সঙ্গে খেলতে পারি। যার সঙ্গে খেলার জন্য দেশ আমাকে বিবেচনা করবে। যদিও আমাকে যদি নিজে পছন্দ করতে দেওয়া হয়, নিশ্চয়ই নিজের পছন্দ জানানোর অধিকার আমার আছে।
আমি লিয়েন্ডারকে বলতে চাই, বিষ্ণু বর্ধন খুবই প্রতিভাবান এক জন প্লেয়ার। যার পার্টনার হয়ে গুয়াংঝৌ এশিয়াডে মিক্সড ডাবলসে রুপো জিতেছিলাম আমি। যখন ভারতীয় টেনিসের তিন মহীরূহ ওই এশিয়াড থেকে সরে দাঁড়িয়েছিল। আমি নিশ্চিত, লিয়েন্ডারকে পার্টনার পেলে বিষ্ণু আরও ভাল খেলবে। আমি লিখিত সম্মতি দিলে তবে লিয়েন্ডার বিষ্ণুর সঙ্গে খেলার কথা ভাববে (ভেস আঙ্কল টিভি সাক্ষাৎকারে যা বলেছেন), এটা আমার, বিষ্ণুর এবং লিয়েন্ডার, তিন জনের পক্ষেই অপমানজনক।
গোটা ঘটনায় ভারতীয় টেনিসের এক মহাতারকাকে শান্ত করতে যে ভাবে আমাকে বোড়ে হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে তাতে একুশ শতকের এক জন ভারতীয় নারী হিসেবে আমি হতাশ এবং অপমানিত। লিয়েন্ডারেরর সঙ্গী হিসেবে আমাকে যে বাছা হয়েছে তার জন্য আমি সম্মানিত। কিন্তু যে ভাবে ব্যাপারটা ঘোষিত হয়েছে তাতে গোটা প্রক্রিয়াটার ভেতর পুরুষতন্ত্র ফুটে বেরিয়েছে। আমি ভারতের এক নম্বর মহিলা টেনিস প্লেয়ার, যে প্রায় এক দশক ধরে সিঙ্গলস ও ডাবলসে এক নম্বর— তাকে কি না শর্তসাপেক্ষে এমন এক জনের সঙ্গে মিক্সড ডাবলসে খেলতে হবে যাতে সেই প্লেয়ারটি বিশেষ এক জনকে নিয়ে ডাবলসে খেলতে পারে। যদিও এটা ভারতীয় টেনিসের সর্বোচ্চ সংস্থার সিদ্ধান্ত, তবু এটা ভারতীয় নারীত্বের চরম অপমান বলেই আমি মনে করছি। এর প্রতিবাদ হওয়া উচিত।
আমার কাছে আরও হতাশার, যে ভাবে সাধারণের কাছে গোটা ঘটনা নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। যাতে একটা বিশেষ মিক্সড ডাবলস টিমকে অলিম্পিকে ভেঙে দেওয়া যায়। যারা কি না কয়েক দিন আগেই গ্র্যান্ড স্লাম খেতাব দেশকে এনে দিয়েছে। আমি আর লিয়েন্ডারই একমাত্র অলিম্পিকে মিক্সড ডাবলসে এ দেশ থেকে সরাসরি খেলার যোগ্যতা পাচ্ছি তা নয়। ওই সদ্য গ্র্যান্ড স্লাম জয়ী ভারতীয় মিক্সড ডাবলস জুটিও অলিম্পিকে যাওয়ার অধিকারী ছিল নিয়ম মতো। আর এটা যদি সত্যি না হত, তা হলে বিরাট বুদ্ধিমান ডাক্তার পেজ নিশ্চয়ই অনিশ্চয়তায় ভুগে আমার কাছ থেকে লিখিত প্রতিশ্রুতি চাইতেন না যে, আমি তাঁর ছেলের সঙ্গেই খেলার কথা দিচ্ছি।
তবে সবার ওপরে আমার নিজের কাছে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার থেকে বড় গর্ব আর কিছু নেই। অলিম্পিকে আমি যার সঙ্গেই খেলি না কেন, নিজের সেরাটা সব সময় দেব। এটাই আমার বরাবরের দর্শন। এবং কোনও দিন সেটার পরিবর্তন ঘটবে না। আমি শুধু আমার প্রিয় দেশের মানুষের আশীর্বাদ কামনা করি। আর কিছু নয়... |
|
|
|
|
|