|
|
|
|
বাধ্য করা হচ্ছে লিয়েন্ডারের সঙ্গে খেলতে, সাফ জানালেন সানিয়া |
গৌতম ভট্টাচার্য • কলকাতা |
সানিয়া মির্জার অলিম্পিকে ওয়াইল্ড কার্ড পাওয়ার দিনেই ভারতীয় টেনিস গভীর থেকে গভীরতর সঙ্কটে পড়ে গেল। মঙ্গলবার মাঝরাতে এআইটিএ-র এক কর্তা খুব খুশি হয়ে বলছিলেন, “মধুরেণ সমাপয়েৎ হল। সানিয়াকে বলে দেওয়া হয়েছে লিয়েন্ডার পেজের সঙ্গেই খেলতে হবে। ও সেটা মেনেও নিয়েছে। আমাদের জানিয়ে দিয়েছে মিক্সড ডাবলস খেলবে লিয়েন্ডারের সঙ্গে।” আর আজই তো অলিম্পিক মিক্সড ডাবলস টিম জানানোর চূড়ান্ত দিন ছিল।
দেশের এক নম্বর প্লেয়ারকে ক্ষয়িষ্ণু মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার এমন আত্মপ্রসাদে ডুবে থাকার সময়ও ভারতীয় টেনিস সংস্থা জানে না যে, লন্ডন থেকে সানিয়ার সার্ভ ও ভলিতে ক্ষতবিক্ষত হতে হবে তাদেরই। সানিয়া টেনিসজীবনের শুরু থেকে নানা বিতর্কে জড়িয়েছেন। কিন্তু এমন চরম পরিস্থিতিতে কখনও পড়েননি যেখানে টেনিস সংস্থা, এত দিনের সহকর্মী লিয়েন্ডার, বাবার বন্ধু ভেস পেজ এবং অভিভাবক-স্থানীয় সুব্রত রায়ের আবেগের বিরুদ্ধে গিয়ে তাঁকে তীব্র কষাঘাত করতে হবে। বেশ রাত্তিরে বাবার আইডি থেকে আনন্দবাজারকে পাঠানো মেলে সানিয়া পরিষ্কার জানিয়ে দেন, তিনি মন থেকে এতটুকুও খেলতে চান না লিয়েন্ডারের সঙ্গে। পার্টনার হিসেবে তাঁর পছন্দ মহেশ ভূপতি। নানা প্রভাব খাটিয়ে তাঁকে লিয়েন্ডারের সঙ্গে খেলতে বাধ্য করা হচ্ছে। ভেস পেজ নিরাপত্তার অভাবে ভুগছেন। এবং মহেশ ‘দেশের স্বার্থেই’ তাঁর সঙ্গে অলিম্পিকে জুটি না বাঁধতে বাধ্য হয়েছেন। |
|
সানিয়ার বিবৃতি বলছে, “লি-হেশ বিতর্কে গত কয়েক দিনের ঘটনায় আমি ব্যথিত এবং মর্মাহত। ডাক্তার ভেস পেজ টিভি-তে বলেন, মিক্সড ডাবলসে তাঁর ছেলের সঙ্গে খেলার ব্যাপারটা আমাকে লিখিত দিতে হবে। আমার দায়বদ্ধতা দেশের কাছে। তার জন্য আমি যে কারও সঙ্গে খেলতে পারি। যদিও নিজে পছন্দ করতে দেওয়া হলে সেটা জানানোর অধিকার আমার আছে।” সানিয়া যদিও বলেছেন, লিয়েন্ডারের সঙ্গী হিসেবে তাঁকে বাছার জন্য তিনি সম্মানিত। কিন্তু এ-ও মনে করিয়ে দিয়েছেন, “এক মহাতারকাকে শান্ত করতে যে ভাবে আমাকে বোড়ে হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে তাতে একুশ শতকের এক ভারতীয় নারী হিসেবে আমি হতাশ এবং অপমানিত।”
উইম্বলডন কোর্ট থেকে বেরিয়ে এসে রাতে অন্যতম জাতীয় নির্বাচক জয়দীপ মুখোপাধ্যায় আনন্দবাজারকে বললেন, “সানিয়ার বিবৃতির কথা এইমাত্র শুনলাম। ও সত্যিই আঘাত পেয়েছে। আর আমি বলব ঠিকই করেছে। কেরিয়ারের শুরুর দিন থেকে ওকে দেখছি। কোনও দিন এত আক্রমণাত্মক বিবৃতি দিতে দেখিনি।” জয়দীপ আরও বললেন, “এই নিয়ে তৃতীয় জন হল যে লিয়েন্ডারের সঙ্গে খেলতে চাইছে না। সবাই কেন ওকে এড়িয়ে যাচ্ছে বুঝতে পারছি না। যদিও লন্ডনে বসে জেনেছি, মিক্সড ডাবলসে লিয়েন্ডার-সানিয়াই অলিম্পিকে যাচ্ছে। কিন্তু সানিয়ার এ রকম বিবৃতির পর লিয়েন্ডার খেলবে কি না সেটা ওর ব্যাপার।”
মাঝরাতে এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ভারতীয় টেনিসমহলে তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। মুম্বইতে সহারা গোষ্ঠীর এক কর্তা বলেন, “স্যার (সুব্রত রায়) জরুরি বৈঠকে। আমরা ওঁকে একটু পরে জানাব।” অনিল খন্নার ঘনিষ্ঠ এআইটিএ কর্তারা আশ্চর্য হয়ে যান সানিয়া বিস্ফোরক মেল করেছেন শুনে। মেয়ের হয়ে ইমরান মির্জার পাঠানো এই মেল থেকে কারও কারও অবশ্য এমন ধারণাও জন্মাচ্ছে, তা হলে কি লিয়েন্ডারের সঙ্গে ডাবলস খেলতে বাধ্য করা হল বলেই সানিয়ার এমন বিদ্রোহী মনোভাব? নাকি টেনিস কর্তাদের ওপর ওয়াইল্ড কার্ড পাওয়ার দিনেই চাপ তৈরি করে রাখলেন তিনি? ভারতের অলিম্পিক নাটকের তিন পাত্র-পাত্রী এখন ইংল্যান্ডে। সানিয়া, মহেশ এবং লিয়েন্ডার। অন্যতম নির্বাচক জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেও কিন্তু কথা বলে মনে হল কেউ আঁচই পাননি, সানিয়া যে এত বড় বিদ্রোহ করতে যাচ্ছেন।
সানিয়া যদিও বলেছেন, অলিম্পিকে যার সঙ্গে খেলুন না কেন, নিজের সেরাটাই দেবেন। তা সত্ত্বেও ভারতীয় টেনিস কর্তাদের কিন্তু সম্পূর্ণ অসহায় দেখাচ্ছে। তাঁদের কেউ কেউ অবশ্য মাঝরাতে বলছিলেন সানিয়া-লিয়েন্ডার যদি শেষ পর্যন্ত জুটি বেঁধে নামেন, তা হলে প্রমাণ হবে এখনও আমরাই নিয়ন্ত্রণ করছি। টেনিসমহলের গরিষ্ঠ অংশ কিন্তু মনে করে, সানিয়ার এই মেলের পর আত্মসম্মান বাঁচাতে লিয়েন্ডার নিজেই অলিম্পিক থেকে নাম তুলে নেবেন। |
|
|
|
|
|