|
|
|
|
|
|
|
বিষয়: সোশাল নেটওয়ার্ক |
তুমি কি ফেসবুকে আছ? আর টুইটারে? আমার সহকর্মীরা সকলেই ফেসবুকে আছে। ঠিক দু’বছর আগে আমিও টুইটার ডট কম-এ নাম লিখিয়েছিলাম। দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে এই গত দু’বছরে। মত আদান-প্রদানের এই মাধ্যমটা সত্যিই দুর্দান্ত। এর সাহায্যে আমার চিন্তা-ভাবনা, খবরাখবর জানিয়েছি সবাইকে, এমনকী কুইজও করেছি। টুইটার শুরু করার সময় জানতামই না, ২০১২ সালের জুন মাসে আমার ৮০,০০০ ‘ফলোয়ারস’ হবে আর একটা প্রথম সারির মিডিয়া রেটিং এজেন্সি (যারা জনপ্রিয়তার নিরিখে মাধ্যমগুলিকে নম্বর দেয়) আমাকে তাদের প্রথম দশ ভারতীয় টুইটার-ব্যবহারকারীদের তালিকায় রাখবে। খুবই বিনম্র বোধ করছি। এক সাংবাদিক বন্ধু জানিয়েছেন, পূর্ব ভারতে সব থেকে বেশি ‘ফলোয়ার্স’ নাকি আমারই। খুব আনন্দ হয়েছিল জেনে।
সোশাল নেটওয়ার্কিং নিয়ে হইচই উত্তেজনা থাকবেই। তার সঙ্গে কয়েকটা সতর্কতামূলক কথাও জানিয়ে রাখি। এই সব সোশাল মিডিয়ায় থেকে বুঝেছি, এই দুনিয়া চরিত্রে ভারী বিশৃঙ্খল, এখানে একটা নৈরাজ্য চলে। সদস্যদের এখানে প্রায় চরম স্বাধীনতা আর স্বেচ্ছাচারের সুযোগ দেওয়া হয়। আমরা এ কথা জানি, ঠেকে বুঝেছি আর ব্যাপারটা ভাল মনে নেওয়ারও চেষ্টা করি।
|
|
কিন্তু যতই হোক, ব্যাপারটা তো মানবজীবনের সঙ্গে জড়িত। তাই কিছু নিয়ম মেনে চলাও আবশ্যিক। দেখতে গেলে, এই সোশাল নেটওয়ার্কিং বিষয়টি এখনও আমাদের কাছে নতুনই। এখনও তার গঠন, বিবর্তনের পর্যায় চলছে। তাই এর জন্য বিশেষ কিছু নিয়ম বা রীতি চালু করতে হয়েছে। আবার কিছু কিছু সাধারণ নিয়ম আছে, যেগুলি সোশ্যাল মিডিয়ার প্রয়োজন ও প্রেক্ষিত অনুসারে পরিমার্জন করে নিতে হয়েছে। এটা যেমন এক নতুন প্রযুক্তির ব্যাপার, তেমনই এর একটা সমাজতাত্ত্বিক দিকও আছে। এই সুন্দর যোগাযোগ মাধ্যমটিকে অনেকেই অপব্যবহার করছে। কয়েকটি দৃষ্টান্ত:
বিশেষ জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রকাশ করে ব্লগ বা পোস্ট করা হচ্ছে। কিংবা, আপলোড করা ছবিতে কোনও বিশেষ ধর্মবিশ্বাসকে আঘাত করা হচ্ছে, কোনও দেবতাকে অপমান করা হচ্ছে। যেমন, দেবতার চেহারায় কুকুরের মুখ বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে সমাজে হিংসাত্মক মনোভাব বাড়ছে। কিংবা অন্যের সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে, তাকে নানা ভাবে বিপদে ফেলা হচ্ছে। যেমন, কেউ নিজের স্কুলের সহপাঠীর প্রোফাইলটি হ্যাক করে, ভান করল যেন সে-ই আসল ব্যক্তি। তার পর, আমেরিকার একটি কলেজকে জানাল, সহপাঠীটি তাদের ভর্তির প্রস্তাবটি নাকচ করছে।
ফেসবুক উপভোগ কর। আমি নিশ্চিত, তোমরা নিয়ম মেনেই এই সব সাইট ব্যবহার করবে। নিয়মের মধ্যে থেকেই খেলা চালিয়ে যাওয়াটা কিন্তু ভারী মজার। সেটাই উপভোগ করা যাক। |
|
২০০৩ সালে, প্রধানত আমেরিকায় ‘MySpace’-এর পথ চলা শুরু হয়। ‘Friendster’-এর সঙ্গে
তার
প্রথম দিকের উপভোক্তারা তখন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছিল। সেই সুযোগে শুরুর দিকে ‘MySpace’
রমরমিয়ে চলছিল।
এই সাফল্যে দারুণ সাহায্য করেছিল একটা ইন্ডি-রক ব্যান্ড। তারা ফ্রেন্ডস্টার-এর
প্রোফাইল
সংক্রান্ত
বিধিনিষেধের
গণ্ডিতে আটকে যাচ্ছিল। সাইটটি থেকে বহিষ্কৃতও হয়েছিল।
তখন তারা ‘MySpace’-এ
এসে
অন্যদেরও সাইট বদল করতে উৎসাহ দিয়েছিল। |
|
|
জানো কি |
• বিংশ শতাব্দীর ত্রিশের দশকে, জেকব লেভি মোরেনো একটা নতুন ধারণার কথা বলতে শুরু করলেন। সোশিয়োগ্রাম। একটা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে সম্পর্কটাকে, একটা মানচিত্রের মতো করে ছকে ফেলার সেটাই বোধ হয় প্রথম প্রচেষ্টা। ‘সোশাল নেটওয়ার্ক’ শব্দগুচ্ছটি ব্যবহৃত হয় আরও পরে, ১৯৫৪ সালে। নরওয়ের একটা জেলেদের গ্রামে, মানুষগুলোর মধ্যে জটিল সম্পর্কগুলোকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে, নৃতাত্ত্বিক জন বার্নেস এই পরিভাষাটি প্রয়োগ করেন।
• উনিশ শতকেরই ষাটের দশকে, শারীরতত্ত্ববিদ স্ট্যানলি মিলগ্রাম ‘সিক্স ডিগ্রিস অব সেপারেশন’ তত্ত্বটি নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন। তাঁর এই কাজ-কর্মের ভিত্তি ছিল তাঁর নিজের ‘স্মল ওয়ার্ল্ড এক্সপেরিমেন্ট’। প্রথমে কয়েক জনকে বেছে নিলেন। তার পর তিনি তাঁদের সবাইকে একটা চিঠি পাঠিয়ে দিলেন। এঁরা হলেন ‘স্টার্টারস’। এই ‘স্টার্টারস’রা যত জনকে চেনেন, তাঁদের প্রত্যেককে আবার চিঠিটা পাঠিয়ে দিতে বললেন মিলগ্রাম। তিনি চিঠিটার একটা শেষ গন্তব্যস্থান বেছে রেখেছিলেন। তিনি দেখতে চাইছিলেন, ক’টা হাত ঘুরে চিঠিটা সেই গন্তব্যে পৌঁছয়। পরে তিনি জানান, গড় হিসাব মতো, ছয় জায়গায় ঘুরে চিঠিটা সেই নির্দিষ্ট শেষ সীমান্তে পৌঁছেছিল! অন্য গবেষকরা সে সময়ে মিলগ্রামের গবেষণায় কিছুতে বিশ্বাস করেননি। এর অনেক পরে ২০০৩ সালে আমেরিকার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈজ্ঞানিকরা একটা নতুন পরীক্ষা করেন। এই পরীক্ষায় ১৬৬ টি দেশের প্রায় ৬০,০০০ মানুষের ই-মেল-এর ওপর লক্ষ রাখা হয়েছিল। সেই পরীক্ষার ফলাফল কিন্তু মিলগ্রামের দাবির সঙ্গে অনেকটাই মিলে গিয়েছিল।
• যান চলাচল ও যোগাযোগ ব্যবস্থা যখন আজকের অবস্থায় এসে পৌঁছয়নি, তখন এই ‘সোশাল নেটওয়ার্ক’ বা আন্তঃ-সামাজিক যোগাযোগ-জাল একটি বিশেষ ভৌগোলিক অঞ্চলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ইন্টারনেট, ই-মেল, তাৎক্ষণিক বার্তা পরিষেবা এবং গ্রুপ চ্যাটিং ইত্যাদি আসার পর, এই আন্তঃসামাজিক যোগাযোগ-জাল এখন অনেক বেশি উন্নত, ব্যাপ্ত। মানুষের সঙ্গে নিমেষে যোগাযোগ করা যায় এখন।
• ইন্টারনেট জনপ্রিয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোর সৃষ্টি হয়। ১৯৯৭ সালে প্রথম সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটটির আত্মপ্রকাশ। মজার ব্যাপার, সাইটটির নাম ছিল, ‘SixDegrees.com’। তার আগে তো অনেক সাইটই ছিল। সেখানে মানুষজন একে অন্যের সঙ্গে বা একটা দলের মধ্যে কোনও নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে কথাও বলতেন। কিন্তু এই ‘SixDegrees.com’ সাইটে প্রথম বার, ইউজার বা ব্যবহারকারীরা নিজেদের প্রোফাইল ও বন্ধুদের একটা তালিকাও বানাতে পারলেন। ২০০১ সালেই সাইটটি উঠে যায়। তবে সাইটের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বাস করতেন, এটি সময়ের থেকে অনেক এগিয়ে ছিল।
• ২০০১ সালে এল ‘ryze.com’। এটি
চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই একেবারে একটা নতুন ঘরানার সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইট দেখা যেতে লাগল। এখানে, ব্যবহারকারীরা নিজেদের পেশাভিত্তিক যোগাযোগ বাড়াতে শুরু করলেন।
বিভিন্ন পেশার মানুষরা এতে শামিল
হলেন। তাঁরা হঠাৎই বুঝতে পারেলন, নিজেদের মধ্যে রেষারেষি করে লাভ নেই। তার থেকে এই সব সাইটে কথাবার্তা বলে, মত আদান-প্রদান করে, একে অন্যের কাজের দুনিয়ায় সাহায্য করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। সেই সাইটগুলির একটিই এখনও টিকে রয়েছে। ‘linkedIn’। ২০১২-র ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এই সাইটে নথিভুক্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৫ কোটি।
• প্রথম দিকের সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলির মধ্যে অনেকগুলি ব্যর্থও হয়েছিল। এই তালিকার একটি উল্লেখযোগ্য নাম হল ‘Friendster’। এই সাইটের প্রাথমিক নকশাটা ছিল একটু অন্য রকম। তাতে সবাই সব প্রোফাইল দেখতে পেতেন না। কিন্তু তার ফলেই নকল প্রোফাইল বানানোর সমস্যাটা শুরু হল। বেশি বন্ধু পাওয়ার লোভে অনেক ব্যবহারকারীই নকল প্রোফাইল বানাচ্ছিলেন। কড়া পদক্ষেপ নিতে গিয়ে সংস্থাটি সব নকল প্রোফাইলই মুছে দিল। এমনিতেই তখন ব্যবহারকারীদের উৎসাহে ভাটার টান। তার ওপর এই ঘটনায় আসল ব্যবহারকারীদের সঙ্গে সাইটটির দূরত্ব আরও বেড়ে গেল।
• ২০০৪ সালে গুগল নিয়ে আসে ‘Orkut’। আসলে, এটি অরকুট বুয়োক্কোতেন নামে এক তুর্কি সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের সৃষ্টি। এর আগে তিনি স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির জন্য, প্রাক্তনীদের নিজস্ব একটা নেটওয়ার্কিং সাইট বানিয়েছিলেন। সেটার নাম ছিল ‘InCircle’। ‘Orkut’-এর প্রতিষ্ঠাও আমেরিকাতেই। কিন্তু, খুব তাড়াতাড়ি ব্রাজিল, ভারত ও এস্টোনিয়াতে সাইটটি জনপ্রিয় হয়ে উঠল। ২০০৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে, গুগল সিদ্ধান্ত নেয়, এর পর থেকে ব্রাজিল থেকেই সাইটটির দেখাশোনা চলবে। কারণ খবর এসেছিল, ৬০ শতাংশেরও বেশি ব্যবহারকারী সে দেশেরই। যাই হোক, ২০১০-এর মধ্যেই ভারত এবং অন্যান্য অনেক দেশেই ‘Orkut’ জনপ্রিয়তা হারাতে থাকে। তত দিনে নেটওয়ার্কিং বিশ্বের দৈত্য এসে গিয়েছিল যে! তার নাম ‘Facebook’!
• ২০০৩-এ হার্ভার্ডে ছাত্র থাকাকালীন মার্ক জুকেরবার্গ একটা ওয়েবসাইট চালু করেন। এটির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব থেকে জনপ্রিয় ব্যক্তিটি কে, ছাত্ররা সে বিষয়ে ভোট দিতে পারত। কিন্তু কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে সাইটটি শীঘ্রই বন্ধ হয়ে যায়। জুকেরবার্গকে কিছু অপরাধমূলক অভিযোগের মুখোমুখি হতে হয়। পরে অবশ্য সে সব তুলেও নেওয়া হয়। ঘটনাক্রমে, তিনিই বানিয়ে ফেলেন ‘Facebook.com’। ২০০৪ সালের মাঝামাঝি, ফেসবুক কর্পোরেট সংস্থা হিসাবে স্বীকৃতি পায়। ২০০৯-এর মধ্যেই ইন্টারনেটের ট্রাফিক খুব দ্রুত ফেসবুক অভিমুখী হয়ে পড়ে। ২০১০ সালের মধ্যে গুগলের থেকেও বেশি মানুষ ফেসবুকে ঘোরাফেরা করতে শুরু করে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই মুহূর্তে, ফেসবুককে যদি একটা দেশ হিসাবে গণ্য করা যায়, ব্যবহারকারীদের যদি জনসংখ্যা হিসাবে ধরা যায়, তবে এর স্থান হবে পৃথিবীতে তৃতীয়। অর্থাৎ, জনসংখ্যা বিচারে চিন ও ভারতের ঠিক পরেই আসবে ফেসবুক। ২০১২-র মে মাসে, ফেসবুকের শেয়ার প্রথম বার বাজারে নিয়ে আসা হয়। তাতে সংস্থাটির লাভের অঙ্ক দাঁড়ায় ১০৪ বিলিয়ন অর্থাৎ ১০৪০০ কোটি ডলার! |
|
বলো তো |
১) কমস্কোর-এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অন্য স্বাধীন আমেরিকান ওয়েবসাইটগুলির তুলনায়, কোন ওয়েবসাইট সব থেকে তাড়াতাড়ি
১ কোটির সূচক পেরিয়েছে?
২) গুগল হোয়্যাক কী?
৩) এই ওয়েবসাইটটির প্রতিষ্ঠাতা মনে করেছিলেন, অপ্রয়োজনীয় তথ্যের সংক্ষিপ্ত বিস্ফোরণ আর পাখিদের কিচিরমিচির এই কথাগুলো দিয়েই নাকি সাইটটির চরিত্র সব চেয়ে ভাল ব্যাখ্যা করা যায়। এই ধারণাগুলো থেকেই ওয়েবসাইটটির নামও এসেছে। কোন ওয়েবসাইট?
৪) ইউটিউব-এ প্রথম বার কোন খেলার ধারাবাহিক সম্প্রসারণ ব্রিটেনে বিনা মূল্যে দেখা গিয়েছিল? |
|
উত্তর |
১) Pinterest ২) দু’টি শব্দ গুগল করলে, যদি ফলাফলে একটাই ওয়েব পেজ বা
ইন্টারনেট-এর পাতা দেখায়, তখন সেটা গুগল হোয়্যাক
৩) টুইটার ৪) ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ |
|
|
|
|
|
|