|
|
|
|
|
|
|
রিয়ো ১৯৯২ রিয়ো ২০১২ |
|
গত কয়েক দিনে খবরের কাগজের পাতায় নিশ্চয়ই দ্বিতীয় রিয়ো সম্মেলনের নাম চোখে পড়ছে। চলতি ভাষায় যাকে ‘রিয়ো প্লাস টোয়েন্টি’ বলা হচ্ছে। বলতে পারো আবার বছর কুড়ি পরে। ১৯৯২ সালের পর ২০১২ সালে ব্রাজিলের রিয়ো ডি জেনেইরো শহরে রাষ্ট্রপুঞ্জের কনফারেন্স অন সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট হল। জুনের ২০ থেকে ২২ তারিখ। এই বৈঠকের গুরুত্ব কতটা, তা বোঝানোর জন্য একটা তথ্যই যথেষ্ট বলা হচ্ছে, রাষ্ট্রপুঞ্জের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সভা।
এই বৈঠকের গুরুত্ব কী, সেটা বোঝার জন্য কুড়ি বছর পিছিয়ে যেতে হবে। ১৯৯২ সালের ৩ থেকে ১৪ জুন রিয়ো ডি জেনেইরো-তে এক বিরাট সম্মেলন হয়েছিল। ১৭২টি দেশ প্রতিনিধি পাঠিয়েছিল সেই সম্মেলনে, তার মধ্যে ১০৮টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানই প্রতিনিধি হিসেবে এসেছিলেন। সেই বৈঠকেই প্রথম বার পরিবেশের প্রশ্নটি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়েছিল। আন্তর্জাতিক মঞ্জে সেই প্রথম বার নেতারা স্বীকার করেছিলেন, আধুনিক সভ্যতা যে ভাবে পরিবেশের ক্ষতি করছে, তাতে বিপর্যয় অনিবার্য। সেই বিপর্যয় এড়াতে হলে সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট বা সুস্থায়ী উন্নয়নের পথেই হাঁটতে হবে গোটা দুনিয়াকে। সেই বৈঠকে যে বিষয়গুলি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়েছিল, তার কয়েকটা হল পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিষাক্ত পদার্থ পরিবেশে মিশছে কি না, তা খতিয়ে দেখা; বিকল্প শক্তি ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া; ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমিয়ে গণপরিবহণ ব্যবস্থাকে মজবুত করা ইত্যাদি। ভবিষ্যতের পরিবেশনীতি কী হবে, তার একটি পরিকল্পনা এই সম্মেলনে গৃহীত হয়। তার নাম আজেন্ডা ২১।
১৯৯২ সালের রিয়ো সম্মেলনের পর থেকেই পরিবেশ-নীতির ক্ষেত্রে ‘সুস্থায়ী উন্নয়ন’ কথাটি পাকাপাকি জায়গা করে নিয়েছে। কাকে বলে সুস্থায়ী উন্নয়ন? অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রাকৃতিক সম্পদকে যদি এমন ভাবে ব্যবহার করা যায় যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মও সেই প্রাকৃতিক সম্পদকে উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করতে পারে, তবে তাকেই সুস্থায়ী উন্নয়ন বলা হবে। অর্থাৎ, প্রকৃতিতে যে হারে সম্পদ সৃষ্টি হয়, সম্পদ ব্যবহারের হার তার চেয়ে বেশি হলে চলবে না। অন্য দিকে, পৃথিবীর তাপমাত্রা এমন ভাবে বাড়িয়ে দেওয়া যাবে না যাতে বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বাসযোগ্য না থাকে।
১৯৯২ সালের রিয়ো সম্মেলনে যে সুর বাঁধা হয়েছিল, ১৯৯৭ সালের কিয়োটো সম্মেলন তাকে একটা কাঠামো দিল। তৈরি হল কিয়োটো প্রোটোকল বিশ্ব উষ্ণায়নের বিপদকে প্রতিহত করতে কোন দেশ কোন দায়িত্ব পালন করবে, তার নির্দেশিকা। ১৯৯৭ সালের পর গোটা দুনিয়ার সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয়ের তালিকায় কিয়োটো প্রোটোকলের পাকাপাকি ঠাঁই হয়েছে। উন্নত দেশগুলি এই প্রোটোকলের বিরোধী, কারণ পরিবেশ দূষণের ক্ষেত্রে তাদের যে ঐতিহাসিক দায় রয়েছে, তার নিরিখে পরিবেশ রক্ষার দায়িত্বের সিংহভাগ তাদের ঘাড়েই চাপিয়েছিল কিয়োটো প্রোটোকল।
২০১২ সালে কিয়োটো প্রোটোকলের মেয়াদ ফুরিয়েছে। গত কয়েক বছরে রাষ্ট্রপুঞ্জের জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলনে দেখা গিয়েছে, উন্নত বনাম উন্নয়নশীল দুনিয়ার লড়াই খুব জমে উঠেছে। তৈরি হয়েছে একটা নতুন শ্রেণি দ্রুত উন্নয়নশীল দেশ সেই শ্রেণির মুখ্য চরিত্র চিন আর ভারত। পরিবেশ রক্ষার অনেকখানি দায় এদের ওপর চাপাতে চায় উন্নত বিশ্ব।
এই প্রেক্ষিতে দ্বিতীয় রিও সম্মেলন আয়োজিত হল। মাঝের দুই দশকে যে শুধু পরিবেশই খানিক বদলিয়েছে, তা নয় দুনিয়ার চেহারাটাও অন্য রকম হয়ে গিয়েছে। |
|
|
|
|
|