কীসে লাভ কীসে ক্ষতি |
ভাল করে ভেবে নাও |
অনেকেরই পছন্দের তালিকায় এখন বি বি এ কিংবা বি সি এ-র মতো কর্মমুখী কোর্স।
কোথায় পড়বে, কেন পড়বে, আলোচনা করছে প্রস্তুতি। সঙ্গে বিশেষজ্ঞদের মতামত। |
উচ্চ মাধ্যমিকের পর কী নিয়ে পড়বে, এই প্রশ্নটার সম্ভাব্য উত্তরের সংখ্যা এখন অনেক বেড়েছে। অনেকগুলো নতুন বিষয় এখন ছাত্রছাত্রীদের পছন্দের তালিকায় ঢুকে পড়েছে। ব্যাচেলর অব বিজনেস ম্যানেজমেন্ট এবং ব্যাচেলর অব কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশনস অর্থাৎ বি বি এ আর বি সি এ এই দুটো বিষয় নিয়ে অনেকেরই আগ্রহ তৈরি হয়েছে। প্রস্তুতির দফতরে এই বিষয়গুলি নিয়ে প্রচুর প্রশ্ন আসে। এই কোর্সগুলি পড়ে কী রকম চাকরি পাওয়া যেতে পারে? এম বি এ বা এম সি এ পড়ার আগে বি বি এ বা বি সি এ পড়ে কোনও লাভ হয় কি? কোন প্রতিষ্ঠান থেকে এই কোর্সগুলি করা ভাল?
এই কোর্সগুলি করে চাকরি পাওয়া সম্ভব। হয়তো অপেক্ষাকৃত কম উপার্জনের চাকরি, যাকে ‘লো এন্ড’ চাকরি বলে। অনেকেই বলবেন, এই জাতীয় চাকরি পাওয়ার জন্য স্নাতক হওয়ার প্রয়োজন নেই, উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করলেই যথেষ্ট। কিন্তু, বি বি এ বা বি সি এ করা থাকলে এই চাকরি পেতে সুবিধা হবে, সেটাও ঠিক। আর, এই রাজ্যের একটা বড় অংশের ছাত্রছাত্রীদের কাছে এই চাকরির গুরুত্বও কিছু কম নয়। জেলায় জেলায় বিভিন্ন কলেজে এই কোর্সগুলি চালু হওয়ায় তাই অনেক ছেলেমেয়েই পড়ছে। যারা মূল শহরগুলিতে এসে পড়তে পারে না, যারা ইঞ্জিনিয়ারিং বা সরাসরি স্নাতক স্তরে পড়ার সুযোগ পায় না, তাদের জন্য এই কোর্সগুলি কর্মমুখী পড়াশোনার সুযোগ তৈরি করেছে।
তবে, দুটো কথা মাথায় রাখা ভাল। এক, বি বি এ বা বি সি এ পড়া মানেই এম বি এ বা এম সি এ কোর্সে ভর্তি হওয়ার ছাড়পত্র নয়। অন্য যে কোনও শাখা থেকে এসে এম বি এ পড়তে চাইলে যেমন ক্যাট বা ম্যাট-এর মতো প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়, বি বি এ পড়লেও তা-ই। এম সি এ পড়ার জন্যও সবাইকে জেকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। দ্বিতীয় কথা হল, স্নাতক স্তরে যদি ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাকাউন্ট্যান্সি বা ইকনমিকস-এর মতো বিষয় পড়া থাকে, তবে সেটা চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে একটু সুবিধা করে দেয়। নিয়োগকর্তারা দেখেন, তাঁরা একটা ‘প্যাকেজ’ পাচ্ছেন ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ম্যানেজেন্ট, উভয় দক্ষতাই এক জনের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। স্নাতক স্তরে বি বি এ বা বি সি এ পড়লে এই অ্যাডভান্টেজ থাকবে না।
রাজ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানে বি বি এ ও বি সি এ কোর্স পড়ানো হয়। এমনই কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া হল এখানে
|
সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ |
এখানকার বি বি এ কোর্সে ভর্তি হতে হলে প্রার্থীকে উচ্চ মাধ্যমিক বা সমতুল পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। এ ছাড়া তাদের এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ/ এনভায়রনমেন্টাল এডুকেশন বাদে ইংরেজি এবং পিয়োর ম্যাথমেটিক্স/ বিজনেস ম্যাথমেটিক্স সহ সব ক’টি প্রধান বিষয়ে (যে সব বিষয়ের পরীক্ষা ১০০ নম্বরের কমে হয় না) পাশ নম্বর থাকতে হবে। প্রার্থীকে প্রত্যেকটি বিষয়ে ৪৫ শতাংশ নম্বর এবং গড়ে সব বিষয়ে ৬০ শতাংশ নম্বর রাখতে হবে। বি বি এ-র জন্য এখানে আবেদন করতে হলে দ্বাদশ শ্রেণি স্তরে ম্যাথ অথবা বিজনেস ম্যাথ কিংবা ম্যাথ সহ বিজনেস ইকনমিক্স থাকতেই হবে। এর পর প্রতিষ্ঠানের পরিচালিত প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি হওয়া যাবে এখানে। ওয়েবসাইট: http://www.sxccal.edu/ ug_bba/default.htm
|
আশুতোষ কলেজ |
|
এখানে বি বি এ (অনার্স)-এ ভর্তি হতে উচ্চ মাধ্যমিক বা সমতুল পরীক্ষায় গড়ে ৫৫ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। কম্পালসারি এনভায়রনমেন্টাল এডুকেশন/ স্টাডিজ, কমার্শিয়াল আর্ট, ফিজিক্যাল এডুকেশন বাদে প্রধান চারটি বিষয়ে (যেমন, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, অঙ্ক এবং ইংরেজি) প্রাপ্ত নম্বর যোগ করে এই গড় তৈরি করা হয়। এ ছাড়া একটা জি ডি/ পি আই-তেও বসতে হয় ছাত্রকে। ভর্তি হওয়া যাবে মেরিট লিস্ট অনুযায়ী।
ফোন: ২৪৫৫-৪৫৯৯।
ওয়েবসাইট: http://www.asutoshcollege.in/
|
জর্জ গ্রুপ অব কলেজেস |
প্রতিষ্ঠানের দুটি শাখা জর্জ কলেজ এবং জর্জ কলেজ অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড সায়েন্স বি বি এ অনার্স পড়ানো হয়। ভর্তির জন্য ইংরেজি সহ দ্বাদশ শ্রেণি উত্তীর্ণ হতে হবে। ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অব টেকনলজি দ্বারা স্বীকৃত তিন বছরের এই পূর্ণ সময়ের কোর্সে প্রিন্সিপলস অব ম্যানেজমেন্ট, ইংলিশ ল্যাঙ্গোয়েজ অ্যান্ড কমিউনিকেশন, ফিনানসিয়াল অ্যাকাউন্টিং, অঙ্ক, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি বিষয় পড়ানো যায়। এখানে বি সি এ-ও পড়ানো হয়।
ফোন: ৯৮৩০৫-০৪৩১৯, ৯৮৩০২-৬২২০৮।
ওয়েবসাইট: www.georgecollege.org
|
বি পি পোদ্দার ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনলজি |
এখানে বি বি এ এবং বি সি এ, দুটো কোর্সই আছে। উচ্চ মাধ্যমিক বা সমতুল পরীক্ষায় পাশ করার পর CET পরীক্ষার মাধ্যমে এই কোর্সগুলিতে ভর্তি হওয়া যায়। বি বি এ-র ক্ষেত্রে যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক বা সমতুল পরীক্ষায় গড়ে ৫০ শতাংশ নম্বর থাকতে হবে। আর বি সি এ-র ক্ষেত্রে প্রার্থীকে বিজ্ঞান সহ দ্বাদশ শ্রেণিতে গড়ে ৬০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে।
ফোন: ২৩৫৭-২৫০৯/ ১০।
ওয়েবসাইট: http://www.bppimt.ac.in/
|
এনএসএইচএম নলেজ ক্যাম্পাস |
এখানকার বি বি এ কোর্সটি তিন বছরের। পূর্ণ সময়ের। ইংরেজি সহ দ্বাদশ শ্রেণি উত্তীর্ণ হলে এই কোর্সে ভর্তির জন্য আবেদন করা যায়। যে কোনও শাখার ছাত্রছাত্রীই কোর্সগুলি করতে পারে। বি সি এ কোর্সটিও একই মেয়াদের। ইংরেজি এবং অঙ্ক/ স্ট্যাটিসটিক্স/ বিজনেস ম্যাথমেটিক্স/ কম্পিউটার সায়েন্স মতো বিষয় সহ উচ্চ মাধ্যমিক বা সমতুল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে প্রার্থীকে। কোর্স দুটি ডব্লিউ বি ইউ টি দ্বারা স্বীকৃত। ভর্তি হতে CET দিতে হবে ছেলেমেয়েদের।
ওয়েবসাইট: http://www.nshm.com/under_graduate/bba.php,
http://www.nshm.com/ under_graduate/bca.php।
|
ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট |
প্রতিষ্ঠানের স্কুল অব ইনফরমেশন টেকনলজিতে বি বি এ (অনার্স) এবং বি সি এ কোর্স রয়েছে। দুটি কোর্সে ভর্তি হতে CET দিতে হবে। একটা পার্সোনাল ইন্টারভিউও নেওয়া হবে। বি বি এ-র ক্ষেত্রে যোগ্যতা দ্বাদশ শ্রেণি উত্তীর্ণ। বি সি এ-র ক্ষেত্রে যোগ্যতা বিজনেস-ম্যাথমেটিক্স/ ম্যাথমেটিক্স/ কম্পিউটার সায়েন্স/ কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশনস-সহ দ্বাদশ শ্রেণি পাশ।
ওয়েবসাইট http://iem.edu.in/।
|
পৈলান কলেজ অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনলজি |
পৈলান গ্রুপের এই প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি পৈলান স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ-এও বি বি এ এবং বি সি এ কোর্স পড়ানো হয়। বি সি এ পড়ার ক্ষেত্রে যোগ্যতা বিজ্ঞান কিংবা কমার্স নিয়ে দ্বাদশ শ্রেণি উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীরাই এই কোর্স করতে পারে। তবে দু’টি ক্ষেত্রেই তাদের কিন্তু একটি অঙ্কের পেপার থাকা আবশ্যিক। আর বি বি এ পড়তে ইংরেজি সহ দ্বাদশ শ্রেণি উত্তীর্ণ হতে হবে। ভর্তি হতে ডব্লিউ বি ইউ টি-র সি ই টি পরীক্ষা দিতে হবে। ওয়েবসাইট: http://www.pcmt-india.net/ugrad.html,
ফোন: ০৩৩- ২৪৫৩-৫৬০৫,
http://www.psis.co.in/, ০৩৩-২৪৯৭-৮২৬৬/
|
কিংসটন স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড সায়েন্সেস |
এখানেও বি বি এ ও বি সি এ কোর্সে ভর্তি হতে CET পরীক্ষা দিতে হয়। যোগ্যতা দ্বাদশ শ্রেণি উত্তীর্ণ।
ওয়েবসাইট: http://keical.edu.in/,
ফোন: ২৫২৮-৯৫০৮, ৮১০০৯-৮১০৯৮।
|
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বি বি এ ও বি সি এ কোর্সে ভর্তির পদ্ধতি এক এক রকমের। ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অব টেকনলজির (ডব্লিউ বি ইউ টি) অন্তর্গত রাজ্যের শতাধিক কলেজে বি বি এ ও বি সি এ কোর্স পড়ানো হয়। এদেরই কতকগুলি প্রতিষ্ঠানের নাম আগেই দেওয়া হয়েছে।
এ বছর থেকে এই কোর্সগুলিতে ভর্তি হতে একটি প্রবেশিকা (কমন এন্ট্রান্স টেস্ট, CET) পরীক্ষা দিতে হবে। এই পরীক্ষার চারটে গ্রুপ থাকবে এ, বি, সি আর ডি। বি বি এ কোর্সে ভর্তি হতে ছাত্রকে ‘গ্রুপ এ’-র পরীক্ষা দিতে হবে। প্রশ্ন থাকবে জেনারেল নলেজ, লজিক্যাল রিজনিং, ইংরেজি এবং নিউমারিক্যাল এবিলিটি-র ওপর। বি সি এ পড়তে দিতে হবে ‘গ্রুপ বি’ পরীক্ষা। এখানে থাকবে ম্যাথামেটিক্যাল সিরিজ, লজিক্যাল রিজনিং, ইংরেজি এবং অঙ্কের বিষয়ে প্রশ্ন।
ইন্দিরা গাঁধী মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, সিকিম মনিপাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে দূরশিক্ষার মাধ্যমেও কোর্সগুলি করা যায়।
|
|
|