|
|
|
|
নাগাড়ে বর্ষণে পাহাড়ে ধস |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
ভুটান পাহাড় ও সমতলে ৪৮ ঘণ্টা ধরে টানা বৃষ্টির জেরে উত্তরবঙ্গের কিছু জায়গায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ফালাকাটায় ৩১২, কোচবিহারে ২৪৭, সেবকে ১৪৫, বাগরাকোটে ১৬৮, বারোবিশায় ১৮৪, দোমহনীতে ১২৮, গরুমারা জঙ্গল লাগোয়া মূর্তিতে ১৭৮ এবং জলপাইগুড়ি শহর এলাকায় ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তিস্তা, তোর্সা, কালজানি, রায়ডাক, মানসাইয়ের পাশাপাশি ডুয়ার্সের মুজনাই, বিরকিটি, কলি, ডুডুয়া, তাতাসি, কুমলাই, ডিমা, ঘিস নদীতেও জলস্তর বেড়েছে। দার্জিলিংয়ের লেবংয়ের হরিসিংহাট্টায় শনিবার রাতে ধসে একটি বাড়ি পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। ঘটনার আগেই বাড়ির সদস্যেরা বাড়ির বাইরে চলে আসায় তারা প্রাণে বেঁচে যান। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দার নাম রমেশ দাস। তিনি বলেন, “ভূমিকম্পে ঘর ভেঙেছে। এ বার ধসেও ঘর ভাঙল। কী ভাবে বেঁচে থাকব বুঝতে পারছি না।” |
|
লেবংয়ে রবিন রাইয়ের তোলা ছবি। |
শিলিগুড়িতে এ দিন সকালে কিছু লোকজন দেখা গেলেও দুপুরের পরে রাস্তাঘাট ফাঁকা হতে থাকে। বিকেলে বৃষ্টি সামান্য ধরে এলেও কিছু লোকজন রাস্তায় বার হলেও অধিকাংশ বাসিন্দাই সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাড়িতে বসেই কাটিয়েছেন। একই চিত্র দেখা দিয়েছে জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, দিনহাটা, ফালাকাটা, ধূপগুড়ি, মাথাভাঙা, আলিপুরদুয়ারেও। রাস্তায় লোকজন না-বার হওয়ায় জলপাইগুড়িতে এ দিন বেসরকারি বাসের সংখ্যা কমে যায়। সকালে শহরের বেশির ভাগ বাজার বন্ধ ছিল। প্যাচপ্যাচে কাদা আর জল জমে থাকায় শহরের স্টেশন বাজার, দিনবাজার, বয়েলখানা বাজারে গিয়ে নাকাল হতে হয় ক্রেতা বিক্রেতাদের। গরুমারা জাতীয় উদ্যান, চাপরামারি জঙ্গল লাগোয়া এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া নেওড়া, মূর্তি, বামনির মতো নদীতেও দু’দিন জলস্তর বেড়ে গিয়েছে। ফালাকাটা, ধূপগুড়ি ও মাদারিহাট ব্লকে কয়েকশো বাড়িতে নদীর জল ঢুকে পড়েছে। নদী ফুলে উঠেছে। বিরকিটি নদীর জলোচ্ছ্বাসে ফালাকাটা ব্লকের জয়চাঁদপুর, গোকুল নগরের প্রচুর বাড়িতে জল ঢুকে পড়ে। ডুডুয়ার জলোচ্ছ্বাসে বালাসুন্দর গ্রামে জল ঢুকে পড়ে। ধূপগুড়ির শালবাড়ি গ্রামের কুমোরপাড়ায় প্রতিমা তৈরির কারখানায় জল ঢুকে পড়ায় নির্মীয়মাণ প্রচুর দুর্গা প্রতিমা নষ্ট হয়। স্থানীয় মৃৎশিল্পী প্রাণগোপাল পাল বলেন, “বৃষ্টির জলে দু’বছর আগে আমার দুই লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছিল। সে ক্ষতি সামাল দেওয়ার আগে ফের বড়সড় ক্ষতির মুখে পড়লাম।” |
|
|
জলবন্দি ফালাকাটার জয়চাঁদপুর।
ছবি: রাজকুমার মোদক। |
কোচবিহারে বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে
রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব। |
|
তুফানগঞ্জের সন্তোষপুর, ঝলঝলি, নেপালেরখাতা, বক্সিরকুঠি, ভৈরবেরটারি, কৃষ্ণপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় মানুষ জলবন্দি হয়ে পড়েছেন জেনে এদিন সকালে ছুটে যান নাটাবাড়ির বিধায়ক তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। নাটাবাড়ির বিধায়ক বলেন, “২৫ হাজারের বেশি মানুষ তুফানগঞ্জেই জলবন্দি হয়ে পড়েছেন। দুর্গতদের দ্রুত ত্রাণ বিলির জন্য প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।” কোচবিহার সদরের মধুপুর, ঘুঘুমারি, পানিশালা, টাকাগছ এলাকাতেও কয়েক হাজার বাসিন্দা জলবন্দি হয়ে পড়েছেন। তুফানগঞ্জের বিডিও তাপস সিংহরায় বলেন, “৩ টি ত্রাণ শিবিরে শতাধিক পরিবারের লোক ইতিমধ্যে আশ্রয় নিয়েছেন। বক্সিরকুঠির বাসিন্দা আনারুদ্দিন মিয়াঁ অবশ্য অভিযোগ করেন, “গোটা গ্রাম জলবন্দি হয়ে পড়েছে। রান্না করার উপায় নেই। রবিবার বিকেল পর্যন্ত কোনও ত্রাণ পাইনি। কোচবিহার জেলা প্রশাসনের তরফে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার হচ্ছে বলে দাবি করা হয়েছে। |
|
|
|
|
|