উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই। নেই কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এক্স-রে, ইসিজি কিংবা প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার ব্যবস্থাও নেই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন করতে তড়িঘড়ি এই সব পরিকাঠামো ছাড়াই বেলপাহাড়ি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে গ্রামীণ হাসপাতালে উন্নীত করে দিল স্বাস্থ্য দফতর। ১৫ শয্যার ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে লাগোয়া নবনির্মিত একটি ভবনে স্থানান্তরিত করে চালু হয়েছে ৬০ শয্যার এই গ্রামীণ হাসপাতাল। শনিবার গ্রামীণ হাসপাতালটির দ্বারোদ্ঘাটন করেন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা।
রবিবার সকালে বেলপাহাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল অব্যবস্থার সেই চেনা ছবির ‘পরিবর্তন’ হয়নি এতটুকুও। নতুন হাসপাতাল ভবনের সামনেও আগের মতোই ঘুরে বেড়াচ্ছে শুয়োরের পাল। অপরিচ্ছন্ন ওয়ার্ড। |
সেই তিমিরেই। বেলপাহাড়িতে দেবরাজ ঘোষের ছবি। |
আগে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ১৫ শয্যার হলেও গড়ে দেড়শো-দু’শো রোগীকে ভর্তি নিতে বাধ্য হতেন কর্তৃপক্ষ। খাটিয়া ভাড়া নিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভিতরে এবং বাইরে গাছতলায় রোগীদের চিকিৎসা হত। রোগীদের খাটিয়া ভাড়া দিয়ে স্থানীয় কিছু ব্যক্তি ভালই রোজগারপাতি করেন। নতুন গ্রামীণ হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬০টি। রবিবার সেখানে ভর্তি ছিলেন ১১৪ জন রোগী। তবে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের ‘কড়া নির্দেশে’ নতুন হাসপাতালের ভিতরে অবশ্য ভাড়ার খাটিয়া ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ফলে বাড়তি রোগীদের ঠাই হয়েছে ওয়ার্ডের অপরিচ্ছন্ন মেঝেতে। হাসপাতালের বাইরে অবশ্য এখনও খাটিয়ার রমরমা। এখন রোগীর পরিজনদের বিশ্রামের জন্য খাটিয়া ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। রোগীর পরিজন বৈদ্যনাথ মুর্মু, মাইনো হেমব্রম-রা জানালেন, বিশ্রামের জন্য তাঁরা ২৫ টাকায় একটি খাটিয়া ভাড়া করেছেন।
দুলকি গ্রামের ১৩ বছরের কিশোর সুদীপ সরেনের হাত ভেঙেছে। শনিবার থেকে হাসপাতালের মেঝেতে পড়ে থাকলেও প্লাস্টার করা হয়নি। কেন? নার্সের জবাব, “হাসপাতালে এক্স-রে মেশিন নেই।” সুদীপের বাবা উপেন্দ্রনাথ সরেনের প্রশ্ন, “বাইরে থেকে যদি এক্স-রে করাতে হয়, তবে এমন সরকারি হাসপাতালের কী প্রয়োজন?” নতুন হাসপাতালে কোনও শিশু বিভাগ নেই। সদ্যোজাতদের পৃথক রাখার ব্যবস্থাও নেই। মহিলা ওয়ার্ডের মেঝেতেই সদ্যোজাত শিশুপুত্রকে নিয়ে শুয়েছিলেন ভুলাভেদার কল্যাণী পাল। কল্যাণীদেবীর শ্বশুর প্রহ্লাদ পাল বলেন, “শনিবার বৌমার প্রসবের সময় কোনও চিকিৎসক ছিলেন না। অনুব্রতীরাই প্রসব করিয়েছেন।” জানা গেল, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় ‘সিজার’ করার ব্যবস্থা নেই এই গ্রামীণ হাসপাতালে। ৬০ শয্যার গ্রামীণ হাসপাতালে তিন জন বিশেষজ্ঞ-সহ মোট ৯ জন চিকিৎসক থাকার কথা। বেলপাহাড়িতে মাত্র ৪ জন চিকিৎসকের মধ্যে কেউই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নন। নার্স আছেন এগারো জন। এ দিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল বিএমওএইচ (ব্লক মেডিক্যাল অফিসার) উত্তম মান্ডি নেই। জানা গেল তিনি ঝাড়গ্রামে। সকাল ১০টা নাগাদ এক জন চিকিৎসককে ‘রাউন্ড’ দিতে দেখা গেল। ওই চিকিৎসক বলেন, “গড়ে একশো-দেড়শো রোগী ভর্তি হয়। বর্ষাকালে সংখ্যাটা দু’শো ছাড়িয়ে যায়। সাধ্যমতো আমরা পরিষেবা দিই। কিন্তু পরিকাঠামোর অভাবে আশঙ্কাজনক রোগীদের ঝাড়গ্রামে রেফার করে দিতে হয়।” এলাকাবাসীর বক্তব্য, হাসপাতালে চিকিৎসক-নার্স ও কর্মী সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। নেই। সাফাই-কর্মী মাত্র দু’জন। অনেক ওষুধই মেলে না। রোগীর চাপের কথা মাথায় রেখে শয্যা সংখ্যা আরও বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন গ্রামীণ হাসপাতালে উপযুক্ত পরিষেবা দেওয়ার দাবি করেছেন এলাকাবাসী। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাসের আশ্বাস, “বেলপাহাড়ির গ্রামীণ হাসপাতালে শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ও স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ দু’জন চিকিৎসককে পাঠানো হবে। অন্যান্য পরিষেবাগুলি কিছু দিনের মধ্যেই পাবেন এলাকাবাসী।” |