সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানেও গর্ভস্থ ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ করা হচ্ছে কি না তা নিয়ে ধন্দে জলপাইগুড়ি জেলার স্বাস্থ্য নজরদারি কমিটি। গত ১৫ জুন কমিটির বৈঠকে যেখানে গর্ভস্থ ভ্রূণের লিঙ্গ চিহ্নিত করার ক্ষমতাসম্পন্ন আলট্রাসাউন্ড যন্ত্র রয়েছে জেলার এমন সরকারি হাসপাতাল, সরকারি নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রতিষ্ঠানে এই ব্যাপারে নজরদারি চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য নজরদারি কমিটির মাস দুয়েক আগের একটি বৈঠকে জলপাইগুড়ি জেলায় ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ করার প্রবণতা ক্রমশ বেড়ে চলেছে বলে রিপোর্ট পেশ করা হয়। ওই রিপোর্টে জানা যায় গর্ভস্থ ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ করে কন্যাভ্রূণ হত্যার প্রবণতা জলপাইগুড়ি জেলায় উর্ধ্বমুখী। জলপাইগুড়ি শহরেই এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। শহরের বিভিন্ন নার্সিংহোম থেকে শুরু করে ক্লিনিকে অবাধে লিঙ্গ নির্ধারণ চলছে বলে কমিটির কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে। ওই বৈঠকেই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়। গত ১৫ জুনের সর্বশেষ বৈঠকে একটি পরিসংখ্যানও জমা পড়েছে কমিটির বৈঠকে। পরিসংখ্যান আপাতত গোপন রাখা হয়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠান এমনকী জেলা হাসপাতালেও অবৈধ ভাবে লিঙ্গ নির্ধারণ করার ঘটনাও ঘটে থাকতে পারে বলে কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কমিটির সদস্যরা এতটাই উদ্বিগ্ন যে বিলম্ব না করে আগামী ১৯ জুন একটি বৈঠকে বেসরকারি নার্সিংহোম, ক্লিনিক, প্রতিষ্ঠান যেখানে আলট্রাসাউন্ড যন্ত্র রয়েছে, সেই সব প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের ডেকে পাঠানো হয়েছে। সরকারি চিকিৎসক এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের আধিকারিকদেরও বৈঠকে ডাকা হয়েছে। ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ করা যে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ সেই কথা মনে করিয়ে দিয়ে সকলকে সর্তক করে দেওয়া হবে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তথা কমিটির সদস্য স্বপন সরকার বলেন, “লিঙ্গ নির্ধারণ করে কন্যাভ্রূণ হত্যা করার ঘটনা জেলায় বাড়ছে। সরকারি এবং বেসরকারি উভয় প্রতিষ্ঠানের ওপরেই নজর রাখা হচ্ছে। জেলার হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমগুলিতে কত শিশু জন্মাচ্ছে তার মধ্যে কত জন কন্যা তার বিস্তারিত পরিসংখ্যান তৈরি করা হচ্ছে। কোনও প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের কাজ চলছে তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” যদিও আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে জলপাইগুড়ি জেলা তথা শহরে এই প্রবণতা উত্তরোত্তর বেড়ে চলায় উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য কর্তারা। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সদর লাগোয়া রাজগঞ্জ ব্লকে বর্তমানে সদ্যোজাতদের মধ্যে নারীর অনুপাত আশঙ্কাজনক হারে কমে গিয়েছে। লিঙ্গ নির্ধারণ করে কন্যাভ্রূণ হত্যা করার প্রবণতার কারনেই এই ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছে স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্য নজরদারি কমিটির সদস্য তথা জেলার সরকারি অভিশংসক গৌতম দাস বলেন, “রিপোর্টে দেখা গিয়েছে জলপাইগুড়ি শহরে রমরমিয়ে লিঙ্গ নির্ধারণের কাজ চলছে। সরকারের কাছে একটি পরিসংখ্যান হাতে এসেছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে দ্রুত অভিযান শুরু হবে।” |