যথাযথ পরিকল্পনা না করেই তড়িঘড়ি শুরু করে দেওয়া হয়েছিল উড়ালপুল তৈরির কাজ। কিন্তু সেই কাজ কিছু দূর এগোতেই দেখা গেল, উড়ালপুলের অপর দিকে নামার রাস্তা নেই। তার ফলে আটকে গিয়েছে গোটা প্রকল্পটাই।
এই সমস্যা দেখা দিয়েছে ব্যারাকপুরের ১৫ নম্বর উড়ালপুল ঘিরে। বারাসতের দিক থেকে শুরু হওয়া উড়ালপুলটি ব্যারাকপুরের সেনা ক্যান্টনমেন্টে আর্দালিবাজারে নামানোর পরিকল্পনা হয়েছিল। কিন্তু সেনাকর্তারা তাতে আপত্তি জানানোয় প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ এখন কার্যত বিশ বাঁও জলে।
বি টি রোড থেকে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে পৌঁছতে ব্যারাকপুর ও বারাসত হয়ে যেতে হয়। ওই পথে ব্যারাকপুর স্টেশনের কাছে ১৫ নম্বর রেলগেটের লেভেল ক্রসিংয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা এড়াতে তিন বছর আগে বাম জমানায় লোকসভা ভোটের ঠিক আগে শুরু হয় উড়ালপুল তৈরির কাজ। কিন্তু প্রকল্পটি শুরুর আগে যথাযথ পরিকল্পনার অভাব ছিল। তাই এই দুর্গতির জন্য তদানীন্তন বাম সরকারকেই দুষছেন পূর্ত দফতরের কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় নামার পরে কোন রাস্তা ধরে সব গাড়ি বি টি রোড ও ঘোষপাড়া রোডে পড়বে, তা আগে ভাবাই হয়নি। ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় উড়ালপুলের যানবাহনের ‘উপদ্রব’ নিয়ে সেনাকর্তাদের ঘোরতর আপত্তি রয়েছে। ফলে সমাধানের পথ খুঁজে পাচ্ছেন না কেউই। |
নির্মীয়মাণ সেই উড়ালপুল। —নিজস্ব চিত্র |
পূর্ত আধিকারিকদের বক্তব্য: বাম জমানায় লোকসভা ভোটের আগে রাজনৈতিক ‘কৌশল’ হিসেবেই উড়ালপুল নির্মাণ শুরু হয়। নির্দেশ ছিল, নির্বাচনী বিধি বলবৎ হওয়ার আগে যে ভাবে হোক কাজটা শুরু করতে হবে। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রকল্প শুরুর সময়ে কোনও নকশাও হয়নি। কিন্তু উড়ালপুল নির্মাণের নেপথ্যে যিনি পুরোভাগে ছিলেন, সেই তৎকালীন সিপিএম সাংসদ তড়িৎ তোপদারের দাবি, ভেবে-চিন্তেই কাজটা শুরু হয়েছিল। তাঁর কথায়, “দীর্ঘদিনের সাংসদ হিসেবে সেনা-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমার যথেষ্ট যোগাযোগ ছিল। তখন উড়ালপুলজনিত সমস্যায় মৌখিক আশ্বাসও ওঁরা দিয়েছিলেন। এখন কী হচ্ছে বলতে পারব না।” ক্যান্টনমেন্ট সূত্রের খবর, উড়ালপুল থেকে নেমে আসা ভারী ও বড় গাড়িগুলি যাওয়ার জন্য রাস্তা করতে ক্যান্টনমেন্টের বেশ কিছু বাড়ি ভাঙতে হবে। কিন্তু সেনার তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, রাস্তার জন্য জায়গা ছাড়া হবে না।
উড়ালপুল নিয়ে জটিলতা কাটাতে পূর্তমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার সম্প্রতি ব্যারাকপুরে যান। স্থানীয় বিধায়ক, পুরকর্তা ও পূর্ত দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকও করেন তিনি। তখনই প্রশ্ন ওঠে, নকশা ছাড়া কী ভাবে এত বড় একটা কাজ শুরু করে দেওয়া হয়েছিল? ব্যারাকপুরের বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত বলেন, ‘‘ভোটের জন্য আগের সরকার যে মানুষকে ধোঁকা দিতে চেয়েছিল, তা এখন বোঝা যাচ্ছে।”
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, রেললাইনের উপরে উড়ালপুলের অংশ রেলই তৈরি করবে। রেল সূত্রের খবর, আগামী আট-দশ মাসে ওই কাজ শেষ করে দেওয়া হবে। বাকিটা করবে রাজ্য সরকার। কিন্তু উড়ালপুল থেকে নামার পরে যান চলাচল কী ভাবে হবে, কারও কাছে তার জবাব নেই। পূর্তমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা চেষ্টা করছি, চলতি বছরের শেষেই যাতে উড়ালপুলের কাজ শেষ করা যায়।” উড়ালপুলের মাঝখান থেকে আর একটি রাস্তা নামানোর কথা ভাবছে পূর্ত দফতর। ক্যান্টনমেন্ট এলাকার মধ্যে দিয়ে একটি ‘ইউ-টার্ন’ করে যানবাহন ঘুরিয়ে নিয়ে আসা যায় কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। |