বৃষ্টির অভাবে চাষে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা
বৃষ্টি না হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন হাবরার পাট চাষিরা। ক্ষতির আশঙ্কা আছে ধান এবং সব্জি চাষেও। জেলা কৃষি দফতরের কর্তারা জানান, বৃষ্টি না হলে বড় ক্ষতি হবে।
এ বার তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন হাবরার বাউগাছি এলাকার চাষি রুহুল আমিন। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে এবং তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় পাটচাষে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন রুহুল। তাঁর কথায়, “পাট চাষ খুব খারাপ অবস্থায় আছে। বৃষ্টির অভাবে পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে। গাছ বাড়ছে না। তিন বিঘা চাষ করতে ২৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কী হবে বুঝতে পারছি না।”
শুধু রুহুল নয়, গোটা উত্তর ২৪ পরগনায় পাট চাষে ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। বিভিন্ন খেতে পাটগাছ মরে যাচ্ছে। পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে। রঙ হলুদ হতে শুরু করেছে। পাট বাড়ছে না। চাষিরা জানান, চৈত্রের শেষে পাট লাগানো হয়। শ্রাবণের শেষে পাট কাটার কথা। ২৭-২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকলে চাষ ভাল হয়। কিন্তু তাপমাত্রা এখন ৪০ ডিগ্রীর কাছাকাছি। রুহুল বলেন, “অন্য বছর এই সময়ে পাট ৫-৬ হাত লম্বা হয়। এখন গরমের জন্য হাত তিনকের মতো বেড়েছে।”
শুকিয়ে গিয়েছে পাট গাছ (বাঁদিকে)। ডানদিকে, নষ্ট হয়ে
গিয়েছে পটল গাছ। বনগাঁয় ছবি তুলেছেন পার্থসারথি নন্দী।
তিনি জানান, সেচের মাধ্যমে এক বিঘা জমিতে জল দিতে পারলে গাছ কিছুটা বাঁচানো সম্ভব। কিন্তু প্রতিদিন গড়ে ৩০০ টাকা খরচ করতে হবে। তা ছাড়া খেতে জল দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। কয়েকজনকে পাওয়া গেলেও তাঁদের মজুরি অনেক বেশি। যা বহু চাষির পক্ষে দেওয়া অসম্ভব। জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) উজ্জ্বল সরকার বলেন, “এ পর্যন্ত গড়ে ৬০-৭০ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। পাট বাড়ছে না। সব্জি শুকিয়ে যাচ্ছে। আমনের বীজতলা তৈরি করতেও সমস্যায় পড়ছেন চাষিরা। অন্য বছর রথের আগে বীজতলা তৈরি হয়ে যায়। তবে ৭ দিনের মধ্যে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।”
জেলা কৃষি দফতর সূত্রে খবর, জেলাতে প্রায় ৩৩,২৯০ হাজার হেক্টর জমিতে এ বার পাট চাষ হয়েছে। পাট চাষ করেছেন বনগাঁর খেদপাড়ার চাষি বিমল মণ্ডল, গোপাল মণ্ডল, বাগদার মথুরা গ্রামের সুধীর পাল। তাঁরা বলেন, “পাটের মাথা ফেটে যাচ্ছে। পাতাও হলুদ হচ্ছে। বৃষ্টির অভাবে কিছু পাট মরেও গিয়েছে। পাটের ৩-৪টি মাথা বের হচ্ছে। বৃষ্টি হলেও ওই পাট আর ভাল হবে না। শ্রমিকদের বেশি মজুরি দিয়ে চাষ করিয়েছিলাম। সব শেষ হয়ে গেল।” বারাসত-ব্যারাকপুর মহকুমার সহ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) শান্তিরঞ্জন সরকার বলেন, “রাতে বৃষ্টি, সকালে রোদ হলে চাষ ভাল হয়। তবে বৃষ্টি হলে সমস্যা অনেকটাই মিটে যাবে।”
এ দিকে, আমনের বীজতলা তৈরির সময় এখন। কিন্তু বহু জমিতে বীজতলা তৈরির কাজ শুরুই হয়নি। বারাসত মহকুমার ঝরঝরিয়াতলার শান্তি পাল বলেন, “৩০ বিঘা জমিতে এই সময়ে ধান চাষ করি। এ বার এখনও চাষ শুরু করিনি। বৃষ্টি না হলে বীজতলা শুকিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। আর ওই জমির জন্য বীজতলা তৈরি করতে সেচের খরচ ৬ হাজার টাকা।”
ক্ষতি হচ্ছে সব্জি চাষেও। রাজবল্লভপুর এলাকার রবীন বিশ্বাস ২৫ কাঠা জমিতে বাধাকপি চাষ করেছিলেন। গরমে ৮ কাঠা জমির কপি ইতিমধ্যে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, “খরচ হয়েছিল ১৬ হাজার টাকা। জানি না খরচ আদৌ তুলতে পারব কি না।” বনগাঁর ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েতে গিয়ে দেখা গেল, খেতে পেঁপে পড়ে রয়েছে। চাষি সঞ্জয় ঘোষ বলেন, “৭ বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ করেছিলাম। ছোট অবস্থাতেই বোটা হলুদ হয়ে পেঁপে ঝরে যাচ্ছে।” লঙ্কা গাছে ফুল এলেও ঝরে যাচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে পটল চাষেও।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.