জিওভানি ত্রাপাতোনির পাতা ফাঁদ নয়, ইউরোর শেষ আটে ওঠার পথে গোটা ইতালি এখন একটাই বাধা দেখতে পাচ্ছে বিস্কুট।
গত কয়েক দিন ধরে যখনই ইউরোর ‘সি’ গ্রুপ নিয়ে আলোচনা উঠে আসছে, পিছনে পড়ে যাচ্ছে ফুটবল। আর উঠে আসছে চক্রান্তের থিওরি। যে থিওরির জন্মদাতা ছোট্ট একটা তথ্য আগামিকাল যদি স্পেন-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচ ২-২ ড্র হয়, তা হলে ছিটকে যাবে ইতালি। সে ক্ষেত্রে আজুরিরা যত গোলেই আয়ার্ল্যান্ডকে হারাক না কেন, তাতে কোনও লাভ হবে না। শেষ আটে চলে যাবে স্পেন এবং ক্রোয়েশিয়া। এই তথ্য জানাজানি হওয়ার পর থেকে ইতালি শিবির থেকে শুরু করে সে দেশের মিডিয়া সবাই এখন ‘বিস্কুট’ আতঙ্কে ভুগছে।
বিস্কুট বা বিস্কটোশব্দটা ইতালিতে একটা বিশেষ অর্থ বহন করে। দুটো দল নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে তৃতীয় দলের ক্ষতি করলে, ইতালিয়ানরা সেই সমঝোতাকে বলে থাকে বিস্কুট। অতীতে বিস্কুট খাইয়ে ঘোড়াকে ডোপ করার একটা পদ্ধতি চালু ছিল। যেখান থেকে বিস্কুট শব্দের এই নয়া অর্থ। বিস্কুট আতঙ্কে ভোগার জন্য ইতালিকে অবশ্য খুব একটা দোষ দেওয়া যায় না। এর আগে ২০০৪ ইউরোয় একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। এবং তখন গ্রুপের শেষ ম্যাচে ২-২ ড্র করে সুইডেন এবং ডেনমার্ক ছিটকে দিয়েছিল ইতালিকে।
কিন্তু মাঠের বাইরের প্রতিপক্ষকে নিয়ে বেশি ভাবতে গিয়ে মাঠের মধ্যে ডুবতে হবে না তো ইতালিকে? বিশেষ করে যে দলের কোচের নাম ত্রাপাতোনি, তাদের পাত্তা না দিলে কিন্তু ভরাডুবির একটা আশঙ্কা থেকেই যায়।
যদিও এই ইউরোতে আয়ার্ল্যান্ড কোনও চ্যালেঞ্জই তৈরি করতে পারেনি আগের দুটো ম্যাচে। দু’ম্যাচে সাত গোল খাওয়া দলকে কেন ভয় করবে ইতালি? করবে, কারণ সেই দলের কোচের নাম যে ত্রাপাতোনি। যাঁকে বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা কোচ বলে মেনে নেওয়া হয়, বিপক্ষকে হঠাৎ করে ফাঁদে ফেলার জন্য যাঁর ডাক নামই হয়ে গিয়েছে ‘ট্র্যাপ’। কালকের ম্যাচের জন্য তিন থেকে চারটে পরিবর্তন করতে পারেন প্রান্দেলি। কাল হয়তো প্রথম এগারোয় থাকবেন না স্ট্রাইকার মারিও বালোতেলি। তাঁর জায়গায় খেলতে পারেন আন্তোনিও দি’নাতালে। স্পেনের বিরুদ্ধে বালোতেলির জায়গায় নেমে গোল করেছিলেন দি’নাতালেই।
ইতালির প্রতিপক্ষ কী ভাবছে? ছিটকে যাওয়া আয়ারর্ল্যান্ডের সামনে এখন একটাই লক্ষ্য: সম্মানের সঙ্গে ইউরো থেকে বিদায় নেওয়া। অধিনায়ক রব্বি কীন যেমন বলেছেন, “আমরা নিজেদের সম্মানের জন্য খেলব। লড়াইটা যে সোমবার শুধু বাইশ জন ফুটবলারের মধ্যেই নয়, ফুটবল বনাম গড়াপেটারও।
ও দিকে, দুই ম্যাচে চার পয়েন্ট নিয়ে দু’টো দলই সি গ্রুপের শীর্ষে। সোমবার জেতার জন্য দু’টো দলই মরিয়া। দু’টো দলই ইতালির ‘বিস্কুট’ থিওরিতে রাগে থর থর করছে।
আর সে জন্যই দানস্ক শহরের স্পেন বনাম ক্রোয়েশিয়া মনে রাখার মতো একটা লড়াই হয়ে থাকবে, ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন জাভি হার্নান্ডেজ। স্প্যানিশ মিডফিল্ডারের কথায়, “আসাধারণ ম্যাচ হতে চলেছে। যেটা ফ্যানরা তো মনে রাখবেই, প্লেয়াররাও মনে রাখবে।” জাভির কথায় স্পষ্ট, ‘বিস্কুট’ থিওরি তাঁদের জেতার জন্য বাড়তি তাতিয়ে দিয়েছে। “আমরা আক্রমণাত্মক ফুটবল ছাড়া অন্য কিছু খেলতে জানি না। ম্যাচের প্রথম থেকে শেষ মিনিট পর্যন্ত তিন পয়েন্টের জন্যই খেলব আমরা।” ‘বিস্কুট’ গুঁড়ো গুঁড়ো করে দিচ্ছেন ক্রোয়েশিয়ার কোচ স্লাভেন বিলিচও। তীব্র ব্যঙ্গ মিশিয়ে বলেছেন, “আরে বাবা, হার বা জিতের মতো ২-২ টাও তো একটা রেজাল্ট! তার থেকে বেশি কিছু বলে ধরে নেওয়ার কোনও কারণ আছে কি?” ইতালীয় মিডফিল্ডার ক্লদিও মার্চিসিও অবশ্য বলছেন, “আমার মনে হয় স্পেনই জিতবে। কারণ, ওরা ক্রোটদের থেকে অনেক শক্তিশালী।” ক্রোয়েশিয়া যদি জাত্যভিমানের জন্য খেলে তা হলে স্পেন সোমবার মাঠে নামছে ইতিহাসের হাতছানি সামনে রেখে। |