বিদায় বিশ্বকাপ রানার্সদের ফুটবলের সংজ্ঞা নতুন
করে লিখছে জার্মানি
জার্মানি-২ (পোডোলস্কি, বেন্ডার)
ডেনমার্ক-১ (ক্রোন দেলি)
ম্যাচ শুরুর আগে এক বন্ধু আমাকে প্রশ্ন করেছিল, এই ইউরোয় স্পেন আর জার্মানির মধ্যে একটা টিমকে বাছতে হলে কাকে বাছব? আমার উত্তর জার্মানি। ওদের মতো সংঘবদ্ধ আর ধারাবাহিক টিম এ বার ইউরোয় নেই। ওরা ফাইনালে না গেলে আমি অন্তত খুব অবাক হব। আধুনিক ফুটবলের সংজ্ঞা নতুন করে লিখছে জার্মানি আর সেটা ফুটবলের প্রাথমিক ব্যাকরণ মেনেই। যেখানে শুধু ‘তিকিতাকা’ নেই, আছে ডাইরেক্ট ফুটবল। যেখানে মাঠের জ্যামিতিকে ব্যবহার করে খেলা তৈরি করা হচ্ছে। ২০১৪ বিশ্বকাপে বাকি দলগুলো এই নীতি অনুসরণ করলে একটুও অবাক হব না।
কেন জার্মানির ফুটবল এত আকর্ষণীয় হচ্ছে, সেটা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা যাক। ইতিহাস ঘাঁটুন, এই একটা দেশই আছে যাদের অভিধানে ‘আত্মতুষ্টি’ বলে কোনও শব্দ নেই। বিশ্ব ফুটবলের ‘পাওয়ার হাউস’-দের অন্যতম বলে বরাবর ধরা হয় জার্মানিকে। এ বারে ইউরোও তার ব্যতিক্রম নয়। সেই ’৯৬-এর পরে ইউরো জেতেনি জার্মানি। বিশ্বকাপ জিতেছে তা-ও ২২ বছর হয়ে গেল। একটা বড় ট্রফি দরকার। এই পরিস্থিতিতে এ বারে ইউরোয় এসেছিল অন্যতম ফেভারিট হিসেবে। জোয়াকিম লো-র সবচেয়ে বড় গুণ হল আক্রমণাত্মক এমন একটা ধারা জার্মান ফুটবলে আমদানি করেছেন, যা স্পেনের ফুটবলের তুলনায় কোনও অংশে কম আকর্ষণীয় নয়। এটা শুধু স্পেনের মতো তিকিতাকা নয়। শুধুই ছোট ছোট পাস নয়, ডাইরেক্ট ফুটবল। যেখানে মাত্র তিন-চারটে টাচে বা লং বলে গোলের মুখ খুলে যেতে পারে। আবার দারুণ ভাবে চোখে পড়বে জায়গা তৈরি করা। আধুনিক ফুটবলের অন্যতম আর্কষণীয় একটা বিষয় হল জায়গা তৈরি করা এবং উপযুক্ত মুহূর্তে তার সদ্ব্যবহার। বিপক্ষের অ্যাটাকিং থার্ডে আপনি এটা যত ভাল করবেন, তত সুযোগ তৈরি হবে। যেটা জার্মানির চেয়ে ভাল কেউ করছে না। যখনই ওজিল বল পেয়েছে ডেনমার্ক ডিফেন্সে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। কারণ ও বল পাওয়া মানেই ডেনমার্কের দু’তিনজনকে টেনে এনেছে নিজের দিকে, ফলে জায়গা তৈরি হয়েছে। আর সেই জায়গায় সময় মতো পৌঁছে গিয়েছে ওজিলের সতীর্থরা। আবার চমৎকার সব ডামি রানও দেখা যাচ্ছে প্রথম ম্যাচ থেকেই।
পোডোলস্কি: সেঞ্চুরির অহঙ্কার।
ম্যাচটার কথায় আসি। কোনও বাড়তি সতর্কতা নয়, শুরু থেকেই আক্রমণের রাস্তা নিয়েছিল জার্মানি। গোল হতই, সেটা এল ১৯ মিনিটে। বক্সের মাথা থেকে পোডোলস্কির গোলার মতো শটে জার্মানির এগিয়ে যাওয়া। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে যে গোলটা শোধ হয়ে গেল তার দোষ জার্মান ডিফেন্সের। গোলটা হল চমৎকার সেটপিস মুভমেন্ট থেকে। ফুটবলে সেট পিসে মার্কিং দু’রকমের হয়। ম্যান মার্কিং ও জোনাল মার্কিং। লো বরাবর জোনাল মার্কিংয়ে বিশ্বাসী। গোলকিপার নয়্যার ছাড়া বারপোস্টের নীচে আরও দু’জন ছিল। কিন্তু যে দুটো হেড থেকে প্রথম গোলটা হল, দুটোতেই বেন্টনার আর ক্রোন দেলি পরপর হেড করল মার্কিং ছাড়াই। বেন্টনারের কাছাকাছিই ছিল সোয়াইনস্টাইগার। ওকে এড়িয়েই কিন্তু হেডটা হয়। গ্রিসের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালের আগে এটা নিয়ে ভাবতে হবে জার্মান কোচকে। তবে অবশ্যই বলব, যোগ্য দল হিসেবেই জিতল জার্মানি। দ্বিতীয়ার্ধেও ক্রমাগত তৈরি হচ্ছিল সুযোগ। চমৎকার একটা কাউন্টার অ্যাটাক থেকে শেষমেশ এল জার্মানির দ্বিতীয় গোলটা। ওভারল্যাপ করে উঠে এসে ঠিক সময় জায়গা নিয়ে গোল করে গেল বেন্ডার। এই জন্যই বলছি, জায়গা তৈরির ব্যাপারে জার্মানি অপ্রতিরোধ্য।
জার্মানদের জন্য যদি পরিশ্রমী, ধারাবাহিক, অক্লান্ত গোছের বিশেষণ যোগ করতে হয়, ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে নয় নম্বরে থাকা ডেনমার্ককে নিয়ে বলতে হলে বলতে হবে ওদের হার না মানা মনোভাবের কথা। ডেনমার্কের অবশ্য ভাগ্য ভাল। জার্মানি যা খেলছিল, প্রথমার্ধেই ওদের ৩-১ এগিয়ে যাওয়া উচিত ছিল। দুটো নিশ্চিত গোলের সুযোগ নষ্ট করে গোমেজ আর খেদেইরা। গোমেজকে আগের দুটো ম্যাচে যতটা ভয়ঙ্কর লেগেছিল, এ দিন কিন্তু লাগল না। এ বার সামনে গ্রিস, আশা করা যাক লো তাঁর এক নম্বর স্ট্রাইকারকে বোঝাতে পারবেন, বড় টুর্নামেন্টে সহজ সুযোগ নষ্টের খেসারত কতটা মারাত্মক হতে পারে।
আগের দিনও বাহাত্তর মিনিটে গোমেজের পরিবর্ত হিসেবে ক্লোজেকে নামিয়েছিলেন লো। এ দিনও সেই একই স্ট্র্যাটেজি নিয়েছিলেন। ক্লোজে নামার পরে-পরেই অবশ্য জয়সূচক গোল পেয়ে যায় জার্মানি। ক্লোজের মতো একজন ধারাবাহিক স্ট্রাইকারকে যে প্রথম এগারোর বাইরে থাকতে হচ্ছে, এটাও বোঝায় টিমটার গভীরতা কোন জায়গায়। কোচের হাতে থাকছে কতগুলো বিকল্প। ওই যে বলে না, একটা টিম ততটাই ভাল যতটা ভাল তার রিজার্ভ বেঞ্চ। জার্মানিকে যত দেখছি, তত এই কথাটাই মনে হচ্ছে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.