শেষ চার বছরের মধ্যে তিন বার ইন্দোনেশিয়া ওপেন সিরিজ টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়ন হয়ে সাইনা নেহওয়ালের চটজলদি উপলব্ধি তিনটে।
এক) “জাকার্তার এই কোর্টে পা রাখলেই নিজেকে চ্যাম্পিয়ন-চ্যাম্পিয়ন লাগে। এত ম্যাচ এখানে জিতেছি।”
দুই) “অলিম্পিক পদক নিয়ে এখনই কিছু ভাবছি না। তবে অলিম্পিকের জন্য একেবারে ঠিক সময়ে আমি ‘পিক’ করছি।”
তিন) “এখন ক্লোজ ম্যাচগুলোতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত স্নায়ুকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে শিখেছি। কোর্টে কঠিন সময়েও হালকা মনে থাকতে পারি বলে ও রকম ম্যাচে বেশি আমিই জিতছি।
রবিবার একশো মিনিটের ফাইনালে চিনের জুরুই লি-কে প্রথম গেমে হেরেও সাইনার ১৩-২১, ২২-২০, ২১-১৯ হারানোর মধ্যে বছর বাইশের হায়দরাবাদি মেয়ের তিনটে উপলব্ধিই যেন স্পষ্ট। তিনটে গেমেই প্রথমে পিছিয়ে পড়ার পর প্রচণ্ড আক্রমণাত্মক ঘুরে দাঁড়িয়ে শেষের দুটো গেমই বের করে নিয়েছেন ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের সর্বকালের সেরা মেয়ে। |
জীবনের পঞ্চম সুপার সিরিজ টুর্নামেন্ট, সব মিলিয়ে এক ডজন আন্তর্জাতিক খেতাব জেতার কিছুক্ষণের মধ্যে সাইনাকে ফোনে যোগাযোগ করলে বিশ্বের পাঁচ নম্বর ব্যাডমিন্টন-কন্যার প্রথম প্রতিক্রিয়া, “ভীষণ-ভীষণ কঠিন একটা লড়াই জিতেছি। প্রচণ্ড কঠিন ড্র ছিল।” একটু পরেই জার্কাতায় ভারতীয় হাই কমিশনারের দেওয়া ডিনারে যাবেন কোচ গোপীচন্দের সঙ্গে। তার আগে বললেন, “কোয়ার্টার ফাইনালে প্রাক্তন অল ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন শি জিয়ান ওয়াংয়ের বিরুদ্ধে জিততে এতটাই বেশি শারীরিক ধকল গিয়েছিল যে, ম্যাচের শেষে প্রচণ্ড ক্লান্তিতে কোর্টেই কেঁদে ফেলেছিলাম। এটাই আমার কেরিয়ারের সবচেয়ে কঠিন লড়াইয়ের ম্যাচ। ফাইনালে বিশ্বের তিন নম্বর লি-কে দু’বছর পর আবার হারালাম। এই প্রথম কোনও টুর্নামেন্টে দু’জন চিনা প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে ট্রফি পেলাম। অলিম্পিকের আগে প্রচুর আত্মবিশ্বাস পেলাম যে, বিশ্ব ব্যাডমিন্টনে আমার এক নম্বর প্রতিদ্বন্দ্বী চিনা মেয়েদের সবাইকে হারানোর ক্ষমতা আছে আমার। বিশ্বের এক নম্বর ইহান ওয়াংকে ছাড়া সব চিনা মেয়েকেই আমি হারিয়েছি। একাধিক বার।”
অলিম্পিকের প্রস্তুতির জন্য সিঙ্গাপুর ওপেন সুপার সিরিজে নাম পাঠাননি। সোমবার তাই সিঙ্গাপুরের বদলে হায়দরাবাদ পৌঁছচ্ছেন সাইনা। কয়েক দিনের মধ্যেই গোপীচন্দের অত্যাধুনিক অ্যাকাডেমিতে শুরু করে দেবেন লন্ডনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি। ‘গোপীস্যর’ ছাড়াও ইন্দোনেশিয়ান কোচ এডউইন এবং ফিজিও কিরণের তত্ত্বাবধানে। গত বছর হংকং সুপার সিরিজে ডান পায়ে লাগা চোটের ধাক্কা সামলে উঠতে-উঠতে এ বছরের গোড়ার দিকের কয়েকটা মাসও চলে গিয়েছে বলে মনে করেন সানিয়া। “বছরের শুরুর দিকে তাই তেমন পারফরম্যান্স হয়নি। কিন্তু এখন আমি পুরো ফিট। ওজন কমিয়ে ফেলেছি অনেকটা। প্রয়োজনের থেকে বেশিই। ৬৩-৬৪ কেজি পর্যন্ত ওজন এখন আমার পারফেক্ট। জাকার্তা আসার সময় ৬২ কেজি ছিল। তবে এখন নির্ঘাত আরও কমে গেছে। তাইল্যান্ড আর ইন্দোনেশিয়ায় পরপর দু’সপ্তাহে দুটো টুর্নামেন্ট জিততে গিয়ে যা প্রচুর অ্যাড্রিনালিন বেরিয়ে গেল!” |
অলিম্পিকের আগে আর কোথাও খেলছেন না। বলছিলেন, “অলিম্পিকের এক মাস আগে আর চোট-টোট লেগে যায় চাই না। সুপারফিট অবস্থায় লন্ডন যেতে চাই। যখন কয়েকটা টুর্নামেন্ট হারছিলাম তখনও খারাপ খেলছিলাম না। দরকার ছিল শুধু জয়ের অভ্যেসটা আবার ফিরে পাওয়া। আর প্রচণ্ড কঠিন শিডিউলের মধ্যেও মানসিক শক্তি দেখানো। গত দু’সপ্তাহে সেটায় সফল হয়েছি। গত রবিবার তাইল্যান্ডে ফাইনাল খেলে সোমবারই জার্কাতায় এসেছিলাম। বুধবার থেকে একটার পর একটা শরীর নিংড়ানো ম্যাচ খেলে জিতেছি। প্রচণ্ড কঠিন লড়াইয়ের মধ্যেও নিজেকে ঠেলে-ঠেলে এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছি। যেটা আমার খেলা এবং আমার মানসিকতা দু’টোর ক্ষেত্রেই খুব ভাল লক্ষণ। অলিম্পিক পদক জেতার জন্য সঠিক পথেই এগোচ্ছি আমি।” |