নারী-পুরুষ বিতর্কের জেরে প্রাক্তন অ্যাথলিট পিঙ্কি প্রামাণিককে সাসপেন্ড করল পূর্ব রেল। কেন্দ্রের নিয়মানুযায়ী, কেন্দ্রীয় সরকারি কোনও কর্মী ৪৮ ঘণ্টা জেল-হাজতে থাকলেই তাঁকে সাসপেন্ড করতে হবে। বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতার হওয়া পিঙ্কির ঠিকানা আপাতত দমদম সেন্ট্রাল জেল। তাই নিয়ম নেমেই ওঁর সাসপেনশন বলে রেলের তরফে রবিবার জানানো হয়।
পিঙ্কি ছেলে না মেয়ে, তা অবশ্য এখনও নিশ্চিত জানা যায়নি! এই সংক্রান্ত পরীক্ষার জন্য মেডিক্যাল বোর্ড গড়া হবে আজ, সোমবার। উপরন্তু তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগও প্রমাণিত হয়নি। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সমীর গোস্বামী এ দিন বলেন, “তা-ও সরকারি বিধি মোতাবেক ওঁকে সাসপেন্ড করা হল। পরে পিঙ্কি দোষী প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। না-হলে উনি আবার চাকরিতে যোগ দিতে পারবেন।” স্পোর্টস কোটায় রেলে চাকরি পাওয়া পিঙ্কি শিয়ালদহে মহিলা টিটি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দোহা এশিয়াডে সোনা জেতার পরে তাঁর পদোন্নতি হয়। সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে রাজ্য সরকারও তাঁকে জমি দিয়েছিল।
কিন্তু পিঙ্কি দোষী না নির্দোষ, তা জানার একমাত্র উপায় যে ডাক্তারি পরীক্ষা, তা এখনও হয়নি। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ‘সোনার মেয়ে’র লিঙ্গ নির্ধারণে আজ পাঁচ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠনের পরে সেই পরীক্ষার পর্ব। উত্তর ২৪ পরগনার মুখ্য স্বাস্থ্য-আধিকারিক সুশান্ত শীল এ দিন বলেন, “মঙ্গল বা বুধবার পিঙ্কির শারীরিক পরীক্ষা শুরু করতে চাইছি। আশা করছি, শনিবারের মধ্যে সব কিছু কোর্টকে জানিয়ে দিতে পারব।” পুলিশ প্রশাসনের একাংশ চাইছে, নিরাপত্তার খাতিরে জেলেই পিঙ্কির শারীরিক পরীক্ষা হোক। কিন্তু সুশান্তবাবুর দাবি, “জিনগত পরীক্ষার জন্য ওঁকে জেলের বাইরে নিয়ে যেতেই হবে। সোমবার পুলিশের সঙ্গে কথা হবে।”
জাতীয় ও আন্তর্জাতিকস্তরে মহিলা অ্যাথলিট হিসেবে প্রচুর পদকজয়ী পিঙ্কির বিরুদ্ধে ধর্ষণ-প্রতারণা-মারধরের অভিযোগ এনেছেন যিনি, তিনিও এক মহিলা। যাঁর দাবি, পিঙ্কি আসলে পুরুষ। বারাসত আদালত পিঙ্কিকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে রাখতে বলেছে। লিঙ্গ-বিতর্কের ফয়সালা না-হওয়ায় দমদম সেন্ট্রাল জেলে কোনও পুরুষ বা মহিলা সেল তাঁর জন্য বরাদ্দ হয়নি। বরং কোর্টের কথামতো পিঙ্কির জন্য একটি ‘বিশেষ’ সেলের ব্যবস্থা হয়েছে।
এ দিকে পিঙ্কি-কাণ্ডে অভিযোগকারিণী অনামিকা আচার্য এ দিন অভিযোগ করেছেন, তাঁকে ফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাঁর অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। অন্য দিকে পিঙ্কির এক ঘনিষ্ঠের দাবি, অনামিকাকে সরিয়ে আর একটি মেয়েকে ‘বান্ধবী’ করে বাড়িতে আনতে চান পিঙ্কি। বিনিময়ে অনামিকা টাকা চাওয়ায় ঝামেলা বাধে বলে এ দিন দাবি করেন পিঙ্কির ওই ঘনিষ্ঠ। তাঁর কথায়, “অনামিকা পিঙ্কির পুরুলিয়ার বাড়িতে গিয়েছিলেন। অ্যাথলেটিকস সংস্থার কিছু কর্তা আর কিছু প্রাক্তন অ্যাথলিটের কাছেও দরবার করেছিলেন। কোথাও ফল না-পেয়ে শেষে থানায় যান।” |