বাঁকাদহের কাঁঠাল চাষের গ্রামগুলির আশপাশে ‘রেসিডেন্ট’ হাতি জড়ো হওয়ায় এমনিতেই উদ্বেগে ছিলেন বিষ্ণুপুর বনাঞ্চলের বন আধিকারিকেরা। এ বার অসময়ে দলমার হাতিরা বিষ্ণুপুরে ঢোকায় তাঁদের উদ্বেগ আরও বেড়ে গিয়েছে। ক্ষতির আশঙ্কায় কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কাঁঠাল চাষিদেরও। তাই বাধ্য হয়ে গত কয়েক দিন ধরে কুলুপুকুর, চিতরং, মড়ার গ্রামের কাঁঠাল চাষিরা হাতিদের ঠেকাতে হুলা নিয়ে রাত পাহারা শুরু করেছেন।
ওই গ্রামগুলিতে ব্যাপক ভাবে কাঁঠালের চাষ করা হয়। মূলত কাঁঠাল বিক্রি করেই অনেকে সারা বছরের সংসার চালানোর খরচ যোগাড় করেন। কিন্তু ফি বছর বড়জোড়া-বেলিয়াতোড় থেকে ‘রেসিডেন্ট’ হাতিরা পাকা কাঁঠালের লোভে এই গ্রামগুলিতে এসে কাঁঠাল বাগানে হানা দেয়। এ বার তাদের সঙ্গে দলমার পাল হামলে পড়লে ক্ষতি তো বাড়বেই, উল্টে হাতিদের দু’টি পালের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কাও রয়েছে। |
অসময়ে আসা হাতিদের নিয়ে মূলত এই আশঙ্কাই বন দফতরের দুর্ভাবনা বাড়িয়ে দিয়েছে। বন দফতর জানিয়েছে, গত কয়েক বছর ধরে জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে দলমার হাতিদের বাঁকুড়ায় ঢুকতে দেখা গিয়েছে। এ বার মে মাসের শেষে দলমার ২৪টি হাতি ঢোকে। দিন কয়েক কাটিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরে ফেরত চলে গিয়েছিল। আবার কয়েক দিন আগে তারা বিষ্ণুপুরে ফেরত আসে। পিছু নিয়ে ঢোকে আরও ১৮টি হাতি। রবিবার পর্যন্ত জানা গিয়েছে, ২৪টি হাতি দ্বারকেশ্বর পেরিয়ে সোনামুখী চলে গিয়েছে। কিন্তু ১৮টি হাতির দল রয়েছে বাঁকাদহের হাতগাড়া, বেলসুলিয়ার জঙ্গলে। সেখান থেকে প্রায় তিন-চার কিলোমিটার দূরে কাঁঠাল বাগানগুলি। সেই এলাকায় কয়েক দিন ধরে ঘাঁটি গেড়েছে ৭টি ‘রেসিডেন্ট’ হাতি।
বাঁকাদহের রেঞ্জ অফিসার বলাই ঘোষ বলেন, “এখন কাঁঠাল পাকার সময়ে জেলার বিভিন্ন জঙ্গলে থাকা অধিকাংশ ‘রেসিডেন্ট’ হাতি কাঁঠালিয়া গ্রাম বলে পরিচিত কুলুপুকুর, মুখোমুখি হলেই নির্ঘাত লড়াই। কী ভাবে সামলাব ভেবে পাচ্ছিনা।” কুলুপুকুর গ্রামের সাগর সাইনি, চিতরং গ্রামের সমর শিকারিদের আশঙ্কা, “গত কয়েক দিন ধরে ‘রেসিডেন্ট’ হাতিদের উৎপাতে আমরা দিশেহারা। হাতিদের দু’টি দলের মধ্যে লড়াই বাধলে বাড়ি-ঘর ভাঙচুর হতে পারে। বন কর্মীদের নজরদারি বাড়াতে বলেছি। আমরাও রাত পাহারা দিচ্ছি।”
হুলাপার্টির পাহারা। |