প্রৌঢ়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু, স্ত্রী-মেয়েকে মারধর জনতার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কোন্নগর |
এক প্রৌঢ়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় তাঁকে খুন করা হয়েছে অভিযোগ তুলে তাঁর স্ত্রী এবং মেয়েকে মারধর করল জনতা। ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার সকালে হুগলির কোন্নগরের হাতিরকুলে। নিজের বাড়িরই একটি ঘর থেকে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ওই ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম অঞ্জন ভট্টাচার্য (৫৮)।
হাতিরকুলে দোতলা বাড়িতে মেয়ে স্ত্রী মিতা এবং তরুণী মেয়ে প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে থাকতেন অঞ্জনবাবু। মিতাদেবীরা জানান, এ দিন সকালে একতলার একটি ঘরে অঞ্জনবাবুকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন মেয়ে প্রিয়াঙ্কা। তাঁর দাবি, বাবা গলায় গামছার ফাঁস দিয়ে ঝুলে পড়ে আত্মঘাতী হন। গামছা ছিঁড়ে মেঝেতে পড়ে যান। খবর পেয়ে উত্তরপাড়া থানার পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে ময়না-তদন্তের জন্য পাঠায়। তদন্তকারী পুলিশ অফিসাররা জানিয়েছেন, মৃতের গলায় ফাঁসের দাগ ছিল। এ দিকে, অঞ্জনবাবুর মৃত্যুর খবর চাউর হতেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আশপাশের প্রচুর মানুষ ভট্টাচার্যবাড়ির সামনে জড়ো হন। অঞ্জনবাবুকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে হইচই জুড়ে দেন তাঁরা। |
মৃতের বাড়ির সামনে ভিড় প্রতিবেশীদের। ছবি: প্রকাশ পাল। |
অঞ্জনবাবুর ভাই সুদীপ ভট্টাচার্য সংবাদমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেন, “দীর্ঘদিন ধরেই দাদার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত বৌদি এবং ভাইঝি। ওরাই দাদাকে খুন করে আত্মহত্যার গল্প সাজাচ্ছে। যে ঘর থেকে দাদার দেহ উদ্ধার হয়, সেই ঘরের উচ্চতা ৬ ফুট। এত নিচু ঘরে কেউ আত্মহত্যা করতে পারে না।” প্রতিবেশীদের অনেকেই একই অভিযোগ তোলেন। এক সময় মা-মেয়ের উপর চড়াও হয় জনতা। পুলিশের সামনেই তাঁদের মারধর করা হয়। মারের চোটে রাস্তায় পড়ে যান প্রিয়ঙ্কা। কোন্নগর ফাঁড়ির ইন-চার্জ অশোক ধর মারমুখি জনতার হাত থেকে মা-মেয়েকে উদ্ধার করেন। মিতাদেবীর এক ভাইকেও ধাক্কাধাক্কি করা হয়। মিতাদেবী বলেন, “আমরা কোনও দোষ করিনি। বাড়িতে অশান্তি হত ঠিকই। কিন্তু তা বলে স্বামীকে মেরে ফেলব! উনি আত্মঘাতী হয়েছেন। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে।” প্রিয়াঙ্কা বলেন, “আমরা কিছু জানি না। বাড়িতে ইলেকট্রিক বিল নিয়ে ঝগড়া হয়েছিল। কিন্তু তার জেরে যদি কেউ এমন করেন, তবে কিছু বলার নেই।”
পুলিশ জানায়, বিকেল পর্যন্ত থানায় লিখিত কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। এসডিপিও (শ্রীরামপুর) রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “ময়না-তদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলেই মৃত্যুর কারণ পরিষ্কার হবে। আপাতত একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।” |