মৌড়িগ্রামে পুলিশের উপর হামলায় অভিযুক্ত ‘তৃণমূলের একাংশ’ |
বহিষ্কৃতের পরিবারকে ফেরানোয় ক্ষোভের মুখে মন্ত্রী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • সাঁকরাইল |
বহিষ্কৃত এবং ‘ঘরছাড়া’ এক তৃণমূল নেতার পরিবারের লোকজনকে ফেরাতে যাওয়ায় রবিবার হাওড়ার মৌড়িগ্রামে রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ রায়কে বিক্ষোভ দেখাল ‘দলেরই একাংশ’। পুলিশের উপরে হামলা করার অভিযোগও উঠল বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে। তবে কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপবাবুর দাবি, “বিক্ষোভ-হামলার পিছনে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। এখানে জমি বিক্রির একটি চক্র গড়ে উঠেছে। সেই চক্রের লোকজনই বিক্ষোভ দেখান।”
স্বপন বসু নামে বহিষ্কৃত ওই নেতার পরিবারের লোকজনের ঘরে ঢোকা আটকাতে তৃণমূলেরই একটি গোষ্ঠীর কর্মী-সমর্থকেরা অরূপবাবুর উপস্থিতিতেই পুলিশকে লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছোড়ে বলে অভিযোগ। ইটের আঘাতে এক পুলিশকর্মী জখম হন। কয়েক মাস আগে এই স্বপনবাবুকেই ‘তোলাবাজ’ অ্যাখ্যা দিয়ে অরূপবাবু বলেছিলেন, “ওঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমি পুলিশ সুপারকে বলেছি।” এলাকায় তোলাবাজি, সন্ত্রাস, চোলাইয়ের ঠেক চালানো-সহ নানা অপরাধমূলক কাজকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগে স্বপনবাবুকে পুলিশ গ্রেফতারও করে। তার পরেই দল থেকে স্বপনবাবুকে বহিষ্কার করা হয়। তিনি বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। |
র্যাফ এবং বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘিরে রয়েছে গ্রাম। ছবি: রণজিৎ নন্দী |
স্থানীয় সূত্রের দাবি, এ দিন সেই মন্ত্রীকেই স্বপনবাবুর পরিবারের লোকজনকে ফেরাতে দেখে তৃণমূলের একটি গোষ্ঠী এবং কিছু এলাকাবাসী বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁদের দাবি, ওই পরিবারকে ফেরানো হলে এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হবে। মন্ত্রী অবশ্য বলেন, “নানা অভিযোগ থাকায় স্বপনবাবুকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু তাঁর পরিবারের লোকজন কোনও দোষ করেননি। সেই কারণে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হল।”
তৃণমূল সূত্রের খবর, মৌড়িগ্রামের নজরুল পল্লির একটি জমির দখলকে কেন্দ্র করে স্বপন বসুর গোষ্ঠীর সঙ্গে দলের আর এক নেতা প্রতাপ ঘোষের গোষ্ঠীর বিরোধ চলছে দীর্ঘ দিন। প্রতাপ-গোষ্ঠীর পাশাপাশি ওই এলাকার বহু সাধারণ মানুষও স্বপনবাবুর ‘কাজকর্মে’ বিরক্ত। মাস ছয়েক সপরিবার ‘ঘরছাড়া’ স্বপনবাবু।
ওই পরিবারের লোকজনকে ফেরানোর সময়ে এ দিন যে গোলমাল হতে পারে, সেই আশঙ্কায় বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয় ওই এলাকায়। ছিল জলকামানও। স্বপনবাবু এ দিন ফেরেননি। তাঁর স্ত্রী সান্ত্বনাদেবী-সহ পরিবারের ১২ জনকে ফেরানো হচ্ছিল। তখনই গোলমাল বাধে। পুলিশ লাঠি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। ঘটনাস্থল থেকে ১৩ জনকে ধরা হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুলিশ বিভিন্ন বাড়িতে ঢুকে মহিলাদের টেনে এনে মারধর করে। |
মৌড়িগ্রামে দলের নেতাদের সঙ্গে মন্ত্রী অরূপ রায়। রবিবার।—নিজস্ব চিত্র |
প্রতাপবাবুর অভিযোগ করে বলেন, “পরিকল্পনা করে পুলিশ দিয়ে এ দিন আমাদের কর্মী-সমর্থকদের মারধর করা হল। এ ভাবে দলেরই একাংশ আমাদের কর্মী-সমর্থকদের এলাকাছাড়া করতে চাইছে।” স্বপনবাবুর সঙ্গে বহু চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর স্ত্রী’র দাবি, “সরকারি জমি বিক্রি-সহ এলাকায় দলের একাংশ নানা দুর্নীতি করায় স্বামী প্রতিবাদ করেছিলেন। তাই আমাদের এলাকাছাড়া করা হয়। দলই এ দিন আমাদের ফিরিয়ে দিল।”
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) সুখেন্দু হিরা বলেন, “পুলিশকে লক্ষ করে আচমকাই কটূক্তি শুরু হয়। ছোড়া হয় ইট-পাটকেল। এক পুলিশকর্মী জখম হওয়ায় মৃদু লাঠি চালিয়ে জনতাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। মহিলাদের টেনে এনে মারধরের কোনও অভিযোগ আমরা পাইনি। সে ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দায়ের হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |