অধিকাংশ অভিভাবকই যখন সন্তানকে ঠিকঠাক মানুষ করতে ঝুঁকছেন ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলের উপরে, ঠিক তখনই কিন্তু নিজের মেয়ের জন্য অন্য রকমের ভাবনা ভেবেছিলেন শাহানা কলি। নিজে কবি ও আবৃত্তিকার। সেই সঙ্গে শিলচরের মাটির টান। বরাকের যে মাটি বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় রক্ত ঝরাতেও পিছপা হয়নি। তাই কন্যা প্রজ্ঞা অন্বেষাকে পাঠিয়েছিলেন বাংলা মাধ্যম স্কুলেই। ১১ ভাষা শহিদের স্মৃতিপূত সেই শহরের মেয়ে প্রজ্ঞা মায়ের স্বপ্ন সফল করে বাজিমাত করল বাংলাতেই।
অসমে মাধ্যমিক পরীক্ষায় এ বার বাংলায় রাজ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে প্রজ্ঞা। ১০০-তে ৯৪। এর সঙ্গে চারটি বিষয়ে লেটার। |
প্রজ্ঞা অন্বেষা। ছবি: স্বপন রায় |
বাংলা ছাড়াও ইংরেজি, সমাজবিদ্যা এবং সংস্কৃতে। মুসলিম হলেও সংস্কৃতই ছিল তার ঐচ্ছিক বিষয়।
শিলচরের হিরণপ্রভা দেব শিশুমন্দিরের কথা বারবার উঠে আসে মা ও মেয়ের মুখে। মায়ের ইচ্ছায় ইংরাজি ও সংস্কৃতে লেটার পাওয়া প্রজ্ঞার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় মাতৃভাষাতেই। পরে বাংলাটা আরও ভাল করে জানার জন্য অষ্টম শ্রেণি থেকে সংস্কৃত পড়তে শুরু করে। মাধ্যমিকে সংস্কৃত ছিল ঐচ্ছিক বিষয়। প্রজ্ঞা বলে, “সংস্কৃত পড়তে আমার খুব ভাল লাগে। তবে শুধু পাঠ্যবই নয়, প্রকৃত জ্ঞান বাড়াতে পড়তে হবে সাহিত্য-সহ নানা বিষয়ের বই এবং সংবাদপত্রও। প্রজ্ঞা জানায়, নির্দিষ্ট সময় ধরে পড়াশোনা তার অভ্যাস নয়। যতক্ষণ মন চেয়েছে, মনোযোগ দিয়ে পড়েছে।
তার ভাল ফলের পিছনে সংবাদপত্র ও বাংলা পত্রিকারও বিশেষ ভূমিকা আছে বলে জানায় প্রজ্ঞা।
চারটি লেটার পেয়ে প্রথম বিভাগে পাশের পর বিজ্ঞান বা বাণিজ্য নিয়ে পড়তে কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু প্রজ্ঞা স্থির করেছে আর্টস নিয়ে পড়বে। কবিতা লেখায় আগ্রহী এই কিশোরী চায় ভবিষ্যতে শিক্ষক হতে। “ছেলেমেয়েদের চুটিয়ে পড়াব আর লেখালেখি করব, ব্যস।” |