রাইসিনা হিল থেকে কীর্ণাহার কত দূর?
মানচিত্র সরিয়ে রেখে এটাই বলার, এক বার শিকড় ছুঁয়ে আসার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। সামনেই বড় যুদ্ধ। বিভিন্ন রাজ্যে প্রচার। চূড়ান্ত ব্যস্ততায় কাটবে সময়। “তার আগে এই সপ্তাহেই এক বার দিদির সঙ্গে দেখা করে আসব,” বলছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। মা বেঁচে নেই। তাই রাষ্ট্রপতি পদের দৌড় শুরু করার আগে পরিবারের বয়ঃজ্যেষ্ঠা, দিদি অন্নপূর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশীর্বাদটুকু নিয়ে আসা জরুরি তাঁর কাছে। এরই পাশাপাশি নিজের গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে দেখা করার তাগিদও রয়েছে তাঁর।
তবে এটা ঠিক যে প্রণববাবু যতটা রাজ্যের, ততটাই বোধহয় দিল্লিরও। গত দু’দিন ধরে এখানকার প্রবাসী বাঙালিদের আবেগ ঘুরপাক খাচ্ছে তাঁকে ঘিরেই। আজ সকালেই ‘নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন’-এর প্রকাশ্য সম্মেলনে (সেই ১৯৯৪ সাল থেকেই এই সংস্থার চেয়ারম্যান তিনি) তাঁকে নিয়ে সকাল থেকেই উচ্ছ্বাস। সংস্থার কর্তাদের মঞ্চে রীতিমতো ঘোষণা করে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য শুভেচ্ছা। তারই মধ্যে দিল্লির মুক্তধারা প্রেক্ষাগৃহে দীর্ঘ বৈঠক করলেন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত প্রবাসী বাঙালিদের সঙ্গে। তাঁদের বললেন, “সাহিত্যের সঙ্গে আমার নাড়ির যোগ। অবসর পেলে আমি বই পড়া ছাড়া কিছু ভাবতে পারি না।” ১৯২৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে যে উদ্যোগের সূত্রপাত, তার সঙ্গে প্রায় দু’দশক জড়িয়ে রয়েছেন তিনি। তবে আজ বিদায়ের সুর হবু রাষ্ট্রপতির গলায়। বললেন, “রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হয়ে গেলে নিয়ম অনুযায়ী আমাকে এই দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু মনের দিক থেকে জড়িয়েই থাকব।”
সকালের সাহিত্য সম্মেলনের পর আজ ছুটির দিনটিও প্রণববাবু কাটালেন নর্থ ব্লকেই। যাওয়ার আগে বকেয়া ফাইল সই করলেন গোটা দিন। জরুরি বৈঠকগুলি সারলেন সংশ্লিষ্ট কর্তাদের সঙ্গে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে এনডিএ শিবিরের কৌশলের দিকে নজর রাখাও চলল পাল্লা দিয়ে। তার মধ্যেই অভিনন্দন একের পর এক নেতার। গত বছর ওয়াশিংটনে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়ার পথে বিমানেই প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ক বিষেন সিংহ বেদীর সঙ্গে পরিচয় হয় প্রণববাবুর। সে দিন বেদী প্রণববাবুকে বলেছিলেন, “দাদা আপনি এই বয়সেও কী ভাবে যে এত কাজ করেন! আপনিই দেশের আসল হিরো!” আজ তাঁর ‘হিরো’কে অভিনন্দন জানিয়ে গেলেন দেশের অন্যতম সেরা বাঁ-হাতি স্পিনার।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পালা সাঙ্গ হলেই শুরু হবে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মহড়া। তার জন্যও চলছে প্রস্তুতি এবং রাজনৈতিক তদ্বির। আজ গোলাপের তোড়া হাতে নর্থ ব্লকে এসে প্রণববাবুর সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন দুই কংগ্রেস নেতা সইফুদ্দিন সোজ এবং মহসিনা কিদোয়াই। রাজনৈতিক শিবিরের ইঙ্গিত, রাষ্ট্রপতি পদে ব্রাহ্মণসন্তান প্রণব মুখোপাধ্যায়কে মনোনীত করার পর উপরাষ্ট্রপতি পদে জাতিধর্মগত ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করবেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। সেই প্রেক্ষাপটে আজ প্রণববাবুর কাছে মহসিনা কিদোয়াইদের দরবার তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
প্রণব-কন্যা শর্মিষ্ঠা সম্প্রতি জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী নন, তিনি তাঁর বাবাকে দেখতে চান রাষ্ট্রপতি হিসাবেই। কারণ প্রধানমন্ত্রী হলে চাপ আরও বাড়ত, এ বার বরং কিছুটা ধীরে সুস্থে কাজ করতে পারবেন তিনি। কী ভাবে রাষ্ট্রপতি ভবনকে গ্রহণ করবেন ‘কাজ পাগল’ প্রণব মুখোপাধ্যায়, সেটা ভবিষ্যৎই বলবে। তবে আজ দিনের শেষে, পরিবারের সকলের সঙ্গে আড্ডায় বসলেন তিনি। হয়তো, গত এক সপ্তাহের ‘রাজনৈতিক ধকলের’ পর অক্সিজেন নিয়ে নিতেই। |