পঁচিশ রকম দায়িত্ব এর পরে কে সামলাবেন, চিন্তায় সরকার
ক ডজন বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন মন্ত্রিগোষ্ঠী। গোটা তেরো মন্ত্রিগোষ্ঠী। কোনওটির কাজ ডিজেল-কেরোসিনের দাম ঠিক করা, কোনওটির আবার স্পেকট্রামের নিলামের পদ্ধতি চূড়ান্ত করা। এই ২৫ রকম দায়িত্ব রয়েছে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাঁধে। কারণ তিনিই এই ২৫টি মন্ত্রিগোষ্ঠীর নেতৃত্বে। অর্থ মন্ত্রকের পাশাপাশি ইউপিএ সরকার যখনই কোনও সমস্যায় পড়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রণববাবুর নেতৃত্বে মন্ত্রিগোষ্ঠী গড়ে দিয়ে সমাধান খোঁজার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ বার সেই ‘ক্রাইসিস ম্যানেজার’-কেই রাষ্ট্রপতি ভবনের পথে এগিয়ে দিয়ে ইউপিএ সরকারের এখন ভাবনা, কে সামলাবেন এই ‘গুরুভার’?
ইউরো-সঙ্কটের ধাক্কা এ দেশের অর্থনীতিতেও এসে লাগায় আপাতত অর্থ মন্ত্রক নিজের হাতেই রাখতে চাইছেন মনমোহন সিংহ। খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি থেকে শুরু করে পেনশন বিলের মতো আর্থিক সংস্কারের কর্মসূচির দ্রুত রূপায়ণও প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য। কিন্তু এতগুলি মন্ত্রিগোষ্ঠীর ভার প্রণববাবুর মতো কারও একার পক্ষে সামলানো যে সম্ভব নয়, তা খুব ভাল করেই বুঝতে পারছেন ইউপিএ-র শীর্ষ নেতৃত্ব। আর তাই কোনও এক জনকেই সব মন্ত্রিগোষ্ঠীর দায়িত্ব না দিয়ে মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজন সদস্যের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে।
অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিগোষ্ঠীগুলির বিবেচ্য বিষয়গুলির মধ্যে মধ্যে এখন সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে টুজি স্পেকট্রামের নিলাম। টুজি বণ্টনে দুর্নীতির অভিযোগের জেরে এর আগের স্পেকট্রাম বন্টন বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এখন সেই স্পেকট্রাম ফের নিলাম করা হবে। টেলিকম সংস্থাগুলি বলছে, অত্যধিক দামে তাদের স্পেকট্রাম কিনতে হলে মোবাইলে কথা বলার খরচও বাড়াতে হবে। নিলামের পদ্ধতি ও স্পেকট্রামের ন্যূনতম মূল্য ঠিক করার জন্য এপ্রিল মাসে প্রণবের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিগোষ্ঠী গঠন করা হয়েছিল। তার কাজ এখনও চলছে। একই ভাবে ডিজেল-রান্নার গ্যাস-কেরোসিনের উপর তেল সংস্থাগুলির ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখে তার দাম ঠিক করার ‘স্পর্শকাতর’ সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্বও ছিল প্রণববাবুর উপরেই। গত বছর এই মন্ত্রিগোষ্ঠীই এই পেট্রোপণ্যগুলির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
তার পরে অবশ্য ওই মন্ত্রিগোষ্ঠীর আর বৈঠক ডাকা হয়নি। খাদ্যশস্য মজুত করা ও রেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে তার বণ্টনের বিষয়টি দেখভালের দায়িত্বও ছিল প্রণবের নেতৃত্বাধীর বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন মন্ত্রিগোষ্ঠীর উপরে। গত বছর চাল-গমের রফতানির দরজা খুলে দেওয়া থেকে শুরু করে শরদ পওয়ারের কৃষি মন্ত্রকের বিরোধিতা সত্ত্বেও খাদ্য সুরক্ষা বিলের অনুমোদন দিয়েছে এই মন্ত্রিগোষ্ঠীই। গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ, বিরাট বিদ্যুৎ প্রকল্প, আশিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির সঙ্গে বাণিজ্য, কয়লাখনি আইন সংশোধন বিল, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সঙ্গে বোঝাপড়া, জাতীয় সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খতিয়ে দেখার দায়িত্বেও রয়েছেন প্রণব। সরকারি সূত্রের অবশ্য বক্তব্য, খাতায়-কলমে ২৫টি মন্ত্রিগোষ্ঠী হলেও, প্রণববাবুর নেতৃত্বাধীন পাঁচ-ছ’টি মন্ত্রিগোষ্ঠী ইতিমধ্যেই তাদের সুপারিশ জানিয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় সেগুলি নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আবার জাতীয় যুদ্ধ স্মারকের জন্য জায়গা খোঁজা, পারিবারিক সম্মানরক্ষায় খুন রুখতে আইন সংশোধন সংক্রান্ত অন্তত ছ’টি মন্ত্রিগোষ্ঠীর কাজ গত দু’তিন বছরে বিশেষ এগোয়নি। গোটা দু’য়েক মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠক প্রয়োজন পড়লে তবেই ডাকা হয়।
সব মিলিয়ে তাই ১০ থেকে ১২টি মন্ত্রিগোষ্ঠী এবং বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন মন্ত্রিগোষ্ঠীর কাজকর্ম নিয়েই বেশি মাথা ঘামাতে হয় প্রণববাবুকে। তাঁর পরেই সব থেকে বেশি মন্ত্রিগোষ্ঠীর দায়িত্বে রয়েছেন পি চিদম্বরম। তিনি ১০টি মন্ত্রিগোষ্ঠীর প্রধান, যেগুলির কাজ চলছে। আবার প্রণবের নেতৃত্বাধীন ৭টি মন্ত্রিগোষ্ঠীর তিনি সদস্য। প্রণবের দায়িত্ব তাই চিদম্বরমের বদলে কপিল সিব্বল, সলমন খুরশিদ, পবন বনসলের মতো মন্ত্রীদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.