ই এম বাইপাসের ধারে বিদ্যুতের টাওয়ার সরাতে রেল-কর্তৃপক্ষের কাছে ৬৫ কোটি টাকা চেয়েছে রাজ্যের বিদ্যুৎ বণ্টন নিগম। কিন্তু, বেশ কয়েক মাস কেটে গেলেও মেলেনি টাকা। ওই টাকা মঞ্জুরের পরে টাওয়ার সরাতে বেশ কয়েক মাস লেগে যাবে। ফলে নিউ গড়িয়া থেকে দমদম বিমানবন্দর পর্যন্ত মেট্রো প্রকল্পের কাজে দেরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গত বছর ৭ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকল্পের শিলান্যাস করেন। ১২.৫ কিলোমিটার অংশে ওই প্রকল্পে ৩৯৫২ কোটি টাকা খরচ হওয়ার কথা। এই মেট্রোর একটা বড় অংশ হবে বাইপাসে। বাইপাস সংলগ্ন প্রায় ২৫টি টাওয়ারের মাধ্যমে ২২০ ও ১৩২ কিলোভোল্টের আটটি সংযোগ রয়েছে কসবা বিদ্যুৎকেন্দ্রের। টাওয়ারের ওভারহেড তার না সরালে মেট্রো প্রকল্পের কাজ করা যাবে না।
বছরখানেক আগে এ নিয়ে সমীক্ষায় ঠিক হয়, ওই আটটি সংযোগ ভূগর্ভে দেড় মিটার নীচ দিয়ে নেওয়া হবে। রেল বিকাশ নিগম লিমিটেড এবং বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমের ইঞ্জিনিয়ারেরা বিস্তারিত জরিপের পরে ফেব্রুয়ারিতে চূড়ান্ত রূপরেখায় সম্ভাব্য খরচ নির্দিষ্ট হয়। মার্চে বিদ্যুৎ পরিবহণ নিগম টাকা চায় মেট্রোর কাছে।
ওই সব টাওয়ারের সঙ্গে প্রায় ১৩ মিটার উঁচুতে লাগানো ‘হাই টেনশন’ তার দু’টি টাওয়ারের মাঝে রাস্তা থেকে ৬.১ মিটারের মতো উচ্চতায় ঝোলে। বাইপাসে মেট্রোর ‘এলিভেটেড’ পথে তা বাধা সৃষ্টি করবে। বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমের এক পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার বলেন, “ভূগর্ভে পরিবর্ত সংযোগের কাজ কারা করবে, তার টেন্ডার ডাকা হবে রেলের টাকা পেলে। এর পরেও নানা প্রথার প্রশ্ন। খোঁড়াখুঁড়ির জন্য বাইপাসের পাশে কিছু অংশে দখলদার উচ্ছেদ দরকার। বর্ষাতেও কাজ ব্যাহত হবে।”
এর পাশাপাশি, সল্টলেকের বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমের সংযোগ ব্যবস্থারও বদল দরকার। সেখানেও সরাতে হবে কিছু টাওয়ার। এর জন্য নিগম মেট্রোর কাছে ২২ কোটি টাকা চেয়েছে। নিগমের এক আধিকারিক বলেন, “এ ক্ষেত্রেও টাকা মঞ্জুর না হওয়ায় আটকে টেন্ডার-প্রক্রিয়া।” রেলমন্ত্রী মুকুল রায় সম্প্রতি এক বৈঠকে মেট্রোর প্রকল্পে গতি আনতে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, “রাজ্যের রেল-প্রকল্পগুলি দ্রুত রূপায়ণের সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বাইপাসে বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবস্থার পরিবর্তনের বিষয়টি খতিয়ে দেখেছে রেল বিকাশ নিগম লিমিটেড। শীঘ্রই প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের চেষ্টা হবে।”
মেট্রো সূত্রের খবর, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে টাওয়ার সরানো ও পরিবর্ত সংযোগের কাজে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ হচ্ছে। জোকা-বিবাদী বাগ প্রকল্পের জন্য রেল ২৪ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে। ২০১০-এর সেপ্টেম্বরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে ওই প্রকল্পের শিলান্যাস করেন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিল। ১৬.৭২ কিলোমিটার এই প্রকল্পের কাজ ২০১৫ সালে শেষ করার কথা। মেট্রোর ডিজিএম (জেনারেল) প্রত্যুষ ঘোষ বলেন, “কাজে যাতে দেরি না-হয়, তার জন্য সব রকম সতর্কতা নেওয়া হবে। বিধি মেনে পর্যায়ক্রমে টাকা বরাদ্দ হচ্ছে।” বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমের এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, “জোকাতেও বিদ্যুৎ সরবরাহের পাঁচটি লাইন ভূগর্ভে নামাতে সরানো হবে ১২টি টাওয়ার। কাজের বরাত দেওয়া হয়েছে লার্সেন অ্যান্ড টুব্রো-কে। শীঘ্রই এই কাজ শুরুর কথা।” তবে, এখানেও গর্ত খুঁড়তে প্রায় ৯০০ মিটার দীর্ঘ অংশে কিছু জমি দরকার। |