|
|
|
|
বোলপুরে খাস জমি বিক্রি করে প্রতারণা, ধৃত ‘ভুয়ো’ মালিক |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বোলপুর |
খাস জমি বিক্রি করায় প্রতারণার অভিযোগে শনিবার রাতে একজনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম কার্তিক গড়াই। বাড়ি বোলপুর থানার কমলাকান্তপুর। ক্রেতার কাছে নিজেকে ওই জমির মালিক বলে দাবি করেছিলেন ধৃত। প্রতারণার এই ঘটনায় পুলিশ আগেই গ্রেফতার করেছে জমির দালাল পিন্টু চট্টোপাধ্যায় ওরফে সিদ্ধার্থ এবং ওই জমির ‘ভুয়ো’ মালিক কার্তিক গড়াইয়ের দাদা গঙ্গাধর গড়াইকে। জেলা পুলিশ সুপার হৃষিকেশ মিনা বলেন, “প্রতারণার অভিযোগে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই ব্যক্তি অন্য কোনও প্রতারণার ঘটনায় যুক্ত কিনা আমরা তা তদন্ত করে দেখছি।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করেছিলেন অভিনেতা ও পরিচালক প্রয়াত দিলীপ রায়ের ভাইপো সন্দীপ রায়-এর (ফিল্ম ডিভিশনের সহকারী পরিচালক) স্ত্রী মলয়া রায়। মলয়াদেবী জানিয়েছেন, ২০১০ সালের শেষের দিকে বোলপুর লাগোয়া খঞ্জনপুর এলাকায় ৩১ শতক জায়গা ৩.৫ লক্ষ টাকা মূল্যে বিক্রি করার প্রস্তাব দেন স্থানীয় এক জমির দালাল পিন্টু চট্টোপাধ্যায় ওরফে সিদ্ধার্থ। পিন্টবাবু বিভিন্ন বাংলা চলচ্চিত্র ও ছোটপর্দার শুটিংয়ের ক্ষেত্রে লোকাল কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করেন। সেই সূত্রেই সন্দীপবাবুদের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। মলয়াদেবীর অভিযোগ, “গত বছর জানুয়ারি মাসে ওই জমির বায়না বাবদ দু’দফায় মোট ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু পরে মাপজোক করতে গিয়ে বুঝতে পারি ওটি একটি খাস জমি। তারপর থেকে ওঁদের আমরা টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য বলছি। কিন্তু তাঁরা টাকা ফেরত তো দিচ্ছিলেনই না উপরন্তু টাকা দেওয়ার নামে বোলপুরে ডেকে হেনস্থা করা হয়। টাকা চাইলে দেখে নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়।” শেষে গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহে শান্তিনিকেতন তদন্ত কেন্দ্রে তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও হুমকির অভিযোগ দায়ের করেন মলয়া রায়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে আগেই দু’জনকে ধরে ফেলে পুলিশ। কিন্তু এতদিন গা ঢাকা দিয়েছিলেন অন্যতম অভিযুক্ত কার্তিক গড়াই। শান্তিনিকেতন তদন্ত কেন্দ্রের আইসি পার্থসারথী মণ্ডলের হাতে শনিবার রাতে কমলাকান্তপুরে ধরা পড়লেন কার্তিক গড়াই।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি বোলপুর-শান্তিনিকেতন এলাকায় খাস জমি বিক্রি করে প্রতারণা করার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। সেই সঙ্গে বহু জায়গায় অবৈধ ভাবে পুকুর ভরাট করেও বিক্রি করা হচ্ছে। ভূয়ো কাগজপত্র তৈরি করে, অন্য লোককে জমির মালিক সাজিয়ে অবৈধ ভাবে জমি বিক্রি করে প্রতারণা করতে দেখা যাচ্ছে জমি দালালদের একাংশকে। তারা ফাঁদে ফেলছে বহুজাতিক সংস্থার কর্তাব্যক্তি, চলচ্চিত্র ও ছোটপর্দার অভিনেতা-অভিনেত্রী বা পরিচালকদের মতো লোকজনদের। প্রতারিত হয়ে এই সব দালালদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে গিয়ে রীতিমত হেনস্থা হতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ওই অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তদন্তকারী পুলিশ অফিসার এবং ভূমি ও ভূমি সংস্কার বিভাগের এক আধিকারিকও বলেন, “ভূয়ো সার্চিং রিপোর্ট থেকে ভুয়ো আইনজীবীদের সাব-রেজিস্ট্রি দফতরের কাগজপত্র, সবই বানিয়ে নিচ্ছে একশ্রেণির চক্র। তাদের সঙ্গে ওই দালালদের ঘনিষ্ঠ যোগ রয়েছে।” জেলা পুলিশ সুপার এ প্রসঙ্গে বলেন, “এ ধরনের কোনও চক্র কাজ করছে কিনা আমরা তা খতিয়ে দেখছি। এ ছাড়া সুনির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ পেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |
|
|
|
|
|